দৈনিক ফেনীর সময়

অর্থের অভাবে চিকিৎসা ও ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তায় কলেজ ছাত্র রিদোয়ানের পরিবার

নিজস্ব প্রতিনিধি :

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হয়ে এখনো বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার কলেজ ছাত্র রিদোয়ান হোসেন (১৯)। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় অর্থের অভাবে তাঁর সুচিকিৎসা ও ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিনতায় রয়েছে পরিবার। রিদোয়ান হোসেন উপজেলার চর চান্দিয়া ইউনিয়নের উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের ইলিয়াস সর্দার বাড়ির দিনমজুর মো: ইব্রাহিমের ছেলে ও ফেনী সিটি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র।

স্থানীয় লোকজন ও আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জানায়, গত ৪ আগষ্ট রবিবার দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর মহিপাল এলাকায় মিছিলে ছিলেন কলেজ ছাত্র মো: রিদোয়ান হোসেন। মিছিল করে রিদোয়ান বন্ধুদের সঙ্গে মহিপাল উড়াল সেতুর পশ্চিম পাশে অবস্থান নিয়েছিলেন। পরে জোহরের নামাজের সময় হওয়ায় তিনি বন্ধুদের সঙ্গে সড়কে নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষ হতে না হতেই ফেনী শহরের ট্রাংক রোড থেকে আওয়ামী, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অস্ত্রসহ এসে ছাত্রদের দিকে এলোপাতাড়ি গুলি করে। এতে রিদোয়ানসহ অন্তত ৫০ জনের বেশি ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। এঘটনায় এ পর্যন্ত নিহত হন অন্তত ১৩জন।

রিদোয়ানের বাবা মো: ইব্রাহীম বলেন, গত ৪ আগষ্ট রোববার সকালে ফেনীতে গিয়ে তার ছেলে রিদোয়ান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি মিছিলে যোগ দেয়। ওই দিন দুপুরের দিকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা গুলি চালালে মাথায়, পিঠে ও পায়ে নয়টি গুলিবিদ্ধ হয় রিদোয়ান। পরে সহপাঠিরা তাকে উদ্ধার করে ফেনীর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। খবর পেয়ে তিনি দ্রুত ফেনী সদর হাসপাতালে ছুটে যান। পরে অর্থের অভাবে রিদোয়ানকে চট্টগ্রামে না নিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসেন। বাড়িতে চিকিৎসার অভাবে শরীরের গুলি নিয়ে ব্যথায় অতিষ্ট হয়ে বিছানায় কাতরাতে দেখে একমাত্র ছেলের এ অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়ে তার মা নুর নাহার।

ইব্রাহিম আরও বলেন, ‘আমার ৪ মেয়ে ও ১ ছেলে। আমি একজন অসহায় বাবা। আমার একমাত্র ছেলে ছাত্রদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেয়। সেখানে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হয়ে আজ সে বিছানায় কষ্টে দিন পার করছে। টাকার অভাবে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারছেন না। ছেলেকে নিয়ে কী করবো বুঝতে পারছি না। এ অবস্থায় তিনি বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছেন।

রিদোয়ানের মা নুর নাহার বলেন, রিদোয়ান এখনো রাতে যন্ত্রণায় ছটফট করে। তাকে উন্নত চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন। কিন্তু আমরা এত টাকা কোথায় পাব? নিজেদেরই চলতে কষ্ট হয়।

কলেজ ছাত্র রিদোয়ান বলেন, খবর পেয়ে স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর নেতারা বাড়িতে এসে আমার চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। ভবিষ্যতেও পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। তাদের সহায়তায় ফেনী শহরে গিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার শরীর থেকে চিকিৎসকরা একে একে নয়টি গুলি বের করেছেন। এরপর ওষুধপত্র নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে বাড়ি চলে আসেন। এখন কিছুটা শরীর ভালো লাগছে। তবে উন্নত চিকিৎসা নিয়ে পুরোপপুরি সুস্থ হয়ে রিদোয়ান আবারও বন্ধুদের সঙ্গে ক্লাসে যোগ দিয়ে পড়া লেখা চালিয়ে যেতে বিত্তবানদের সহায়তা কামনা করেন।

রিদোয়ান হোসেন বলেন, চলতি মাসের বিভিন্ন সময়ে শরীর থেকে নয়টি গুলি বের করা হলেও যন্ত্রণা তার পিছু ছাড়ছে না। এখনো বিশেষ করে রাতের বেলায় যন্ত্রণা বেড়ে যায়। তার উন্নত চিকিৎসা দরকার।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, ছাত্র আন্দোলনে আহত ও নিহতদের খোঁজখবর নিয়ে তালিকা করা হয়েছে। নিহতদের পরিবারের পাশাপাশি আহতদেরকেও পর্যায়ক্রমে চিকিৎসাসহ সহায়তা করা হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!