যার মধ্যে ইলম বা জ্ঞান আছে তিনিই আলেম। এখানে আলেম বলতে ধমীর্য় জ্ঞানী উদ্দেশ্য। শায়খ মুহাম্মদ ইবন সালেহ বলেন-ইলম হলো এমন আলো যার মাধ্যমে বান্দাহ আলোকিত হয়। অতপর তার রবের ইবাদত পদ্ধতি এবং তার রব তার সাথে কেমন আচরণ করবেন সে সম্পর্কে জানতে পারে। আর সজ্ঞানে ও দেখে শুনে তার রবের পথে চলতে পারে। ইলমের বিপরীত হলো জাহল বা অজ্ঞতা। ইলম দেখায় পূণ্যের পথ, আর অজ্ঞতা দেখায় পাপের পথ। আল্লাহ তায়ালা স্বীয় নবী-রাসূলদেরকে অহীর জ্ঞান দ্বারা সুশিক্ষিত করেছেন।
ইলম অন্বেষণকারীর মযার্দা : মহানবী সা. বলেছেন-যে ব্যক্তি ইলম অর্জনের জন্য কোন পথ অনুসন্ধান করে, আল্লাহ তায়ালা এর ফলে তাকে জান্নাতের পথ সমূহ হতে একটি পথের সন্ধান দেন এবং ফেরেশতাগণ দ্বীনি জ্ঞান অন্বেষণকারীদের সন্তুষ্টির জন্য তাদের নুরের পাখা সমূহ বিছিয়ে দেন। তাছাড়া যারা জ্ঞানী তাদের জন্য আকাশ ও জমিনে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, এমনকি গভীর পানির মাছও তাদের জন্য ইসতিগফার করে। আর আলিমদের মযার্দা ইবাদতকারী বান্দার ওপর তেমন, যেমন পূর্ণিমার রাতের চাঁদের মযার্দা অন্যান্য তারকারাজির ওপর। নিশ্চয়ই আলিমগণ নবীদের উত্তরাধিকারী। নবীগণ কোন দিনার-দিরহাম ত্যাজ্য সম্পদ হিসেবে রেখে যান না বরং তাঁরা ইলম রেখে যান। অতপর যে তা অর্জন করেছে সে অঢেল সম্পদ অর্জন করেছে (সূনানে আবু দাউদ পৃষ্ঠা-৫১৩, হাদিস নং-৩৬৪৩; সহীহ জামে সগীর-৩৭৫৩, কানযুল উম্মাল-২৮৭৩৭)। রাসূলুল্লাহ সা. আরো বলেন-কেবল দু’ব্যক্তিকে হিংসা করা বৈধ। এক ব্যক্তি হলো যাকে আল্লাহ তায়ালা সম্পদ দিয়েছেন। অতপর সে সম্পদ হক পথে ব্যয় করার শক্তি দিয়েছেন। দ্বিতীয় ঐ ব্যক্তি যাকে আল্লাহ হিকমা বা ইলম দান করেছেন। অতপর সে তা দ্বারা ন্যায় বিচার করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয় (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৩)। অন্যত্র ইরশাদ করেন-আল্লাহ যার কল্যাণ চার তাকে দীনের গভীর জ্ঞান দান করেন (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৩১৩; মুসলিম, হাদীস নং ২৪৩৯)।
দ্বীনি জ্ঞান অর্জন করা ফরয : হযরত আনাস ইবন মালিক রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন-ইলম অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয (মুসনাদে আবু হানীফা-হাদীস ১, ২; সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদীস ২২৪)। হযরত ইবন আব্বাস রা. বলেন, যে ব্যক্তি ইলমে দ্বীন অর্জনে লিপ্ত হয়ে যায় তার এ আমল অতীতের সমস্ত গুণাহের কাফফারা হয়ে যায় (তিরমিযী, দারেমী)। মহানবী সা. বলেন-যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের জন্য বের হয় সে যেন আল্লাহর রাস্তার তথা জিহাদের রাস্তায় বের হয়ে যতক্ষণ না সে প্রত্যাবর্তন করেন (তিরমিযী, দারেমী)।
তাঁরা বিশ্বস্ত : আল্লাহ তাঁ’য়ালা আলিমগণ বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য বলে ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন-আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, আর ফেশেতা ও জ্ঞানীগণও। তিনি ন্যায় দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় (সূরা আলে ইমরান: ১৮)।
মৃত্যুর পরও তাঁদের আমল জারি থাকে : মহানবী সা. বলেছেন-মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার আমল বন্দ হয়ে যায়। তবে তিনটি উৎস থেকে তা অব্যাহত থাকে। সাদাকায়ে জারিয়া, উপকারী ইলম, নেক সন্তান যে তার জন্য দু’আ করে (সহীহ্ বুখারী: ৪৩১০)।
তাঁরা আল্লাহকে বেশী ভয় করে : আল্লাহ তা’য়ালা বলেন-বান্দাদের মধ্যে কেবল আলেমরাই আল্লাহকে বেশি ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল (সূরা ফাতির-২৮)।
আলিম মুজাহিদের ন্যায় : মহানবী সা. বলেন-যে ব্যক্তি আমার এ মসজিদে কেবল কোনো ইলম শিক্ষা করার বা শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে আসবে, সে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর মযার্দায় অধিষ্ঠিত (ইবন মাজাহ-২২৭)।
আল্লাহ তা’য়ালা আলেমের মযার্দা সমুন্নত করেন : তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে। আল্লাহ তাদেরকে মযার্দায় সমুন্নত করবেন (সূরা মুজাহালাহ-১১)।
তাঁরা ঈমানের দাবি বাস্তবায়নে অগ্রগামী : আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন-তবে তাদের মধ্যে যারা গভীর জ্ঞানের অধিকারী এবং মু’মিনগণ। যারা তোমার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে এবং যা নাযিল করা হয়েছে তোমার পূর্বে তাতে ঈমান আনে। আর যারা সালাত প্রতিষ্ঠাকারী ও যাকাত প্রদানকারী এবং আল্লাহ ও বিচার দিবসের প্রতি,ঈমান আনয়নকারী, তাদেরকে অচিরেই আমি মহাপুরস্কার প্রদান করব (সূরা আল-নিসা ১৬২)।
পিতা-মাতার মযার্দা বৃদ্ধি : হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মৃত্যুর পর কোন বান্দাহর মযার্দা বৃদ্ধি করা হবে। তখন সে বলবে হে আমার রব, আমিতো এতো মযার্দার আমল করিনি, কিভাবে এ আমল আসলে? তখন বলা হবে, তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার ফলে এ মযার্দা তুমি পেয়েছো (আদাবুল মুফারাদ-৩৬)।
আলিমের মৃত্যু অপূরণীয় ক্ষতি : হযরত আবু দারদা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মহানবী সা. কে বলতে শুনেছি যে, আলিমের মৃত্যু এমন মসিবত যার প্রতিকার হতে পারে না এবং এ ক্ষতি যা পূরণ হবার নয়। আলিম এমন তারকা যে (মৃত্যুর কারণে) আলোহীন হয়ে যায়। একজন আলিমের মৃত্যু অপেক্ষা একটি গোত্রের মৃত্যু অতি নগন্য ব্যাপার (বায়হাকী ২/২৬৪)। মহানবী সা. বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা (শেষ জামানায়) ইলেমকে এভাবে উঠিয়ে নেবেন না যে, লোকদের অন্তর থেকে সম্পূর্ণ বের করে নেবেন বরং তিনি ইলমকে এভাবে উঠিয়ে নেবেন যে, এক এক করে ওলামায়ে কেরামদের উঠিয়ে নেবেন। আর যখন কোনো আলেম দুনিয়াতে অবশিষ্ট থাকবে না তখন লোকেরা ওলামায়ে কিরামের পরিবর্তে অজ্ঞ ও মূর্খ ব্যক্তিদের নেতা বানিয়ে নেবে।’ (বুখারি-হাদিস নং ১০০)।
লেখক : বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ।