নিজস্ব প্রতিনিধি :
সোনাগাজী উপজেলার ছোট ফেনী নদী ওপর নির্মিত সাহেবের ঘাট সেতুর পশ্চিম অংশের সংযোগ সড়কের গর্তটি বন্যা ও জোয়ারের পানির চাপে ভেঙে আরও বড় হয়ে গেছে। সেতুর গর্তটি এক মাসেও ভরাটসহ সংস্কার না হওয়ায় স্থানীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। এতে করে নোয়াখালীর সঙ্গে সোনাগাজী উপজেলার যোগাযোগ বন্ধ থাকায় দুপারের জনগণের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। গর্তের পাশ দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোন রকম পায়ে হেঁটে প্রতি দিন হাজারো মানুষ আসা যাওয়া করছেন।
মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নোয়াখালী সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে শ্রমিকরা সেতুর সংযোগ সড়কের গর্ত ভরাট করতে জিও ব্যাগে বালুভর্তি করছেন। শ্রমিক মো. শামিম বলেন, এর আগে স্থানীয় জনতা স্বেচ্ছাশ্রমে হাজার হাজার বস্তা বালি দিয়েও গর্তটি ভরাট করতে পারেনি। এবার জিও ব্যাগে বাুল ভর্তি করে ভরাট করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, ২০ আগষ্ট ভয়াবহ বন্যার পানির চাপে মুছাপুর রেগুলেটর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার পর গত ৩০ আগস্ট সাহেবের ঘাট সেতুর পশ্চিম অংশে নিচ থেকে দুই পাশের মাটি ও ব্লক সরে যায়। এরপর সেতুর সংযোগ সড়কেও ভাঙন দেখা দিয়ে বড় ধরনের গর্তের সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় স্থানীয় লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কয়েক হাজার বালুভর্তি বস্তা দিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা করেন। কিন্তু তাও বন্যাপরবর্তী জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। এতে করে দিন দিন গর্তটি বড় হতে থাকায় নোয়াখালীর সঙ্গে সোনাগাজীর সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয় লোকজন আরও জানায়, চর দরবেশ ইউনিয়নের সাহেবের ঘাট ও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের সংযোগস্থল ছোট ফেনী নদী ওপর ২০১৮ সালে ৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ফেনীর মহিপাল এলাকায় যানজট দেখা দিলে চট্টগ্রামগামী নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের যানবাহনগুলো এই সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করত। এতে ফেনীর মহিপাল এলাকায় যানজট কমে আসে। একই সঙ্গে দুই জেলার যানবাহনের চট্টগ্রাম যেতে দূরত্ব কমে যায়।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের জুন মাসে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার নির্ধারিত সময় ছিল ৩০ জুন ২০১৮ সাল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে জুন ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সেতুটিতে ১১টি স্প্যান ও ৫৫টি গার্ডার রয়েছে। ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুটি উদ্বোধন করেন।
চর চান্দিয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন খোকন বলেন, সেতুটি নির্মাণের ফলে নোয়াখালী ও সোনাগাজীর মানুষের অনেক উপকার হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবেও স্থানীয় বাসিন্দারা লাভবান হতে শুরু করেছেন। কিন্তু নির্মাণে দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে মাত্র পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙে সেতুটি হুমকির মুখে পড়েছে। আমি নিজেও বস্তাভর্তি বালু দিতে গিয়ে কোমরে ব্যথা পেয়েছি। হাজার হাজার বস্তা বালি নদীতে তলিয়ে গেছে। দ্রুত সেতুটিকে মেরামত করে জনগণের চলাচলের উপযোগী করার দাবি জানাচ্ছি।
ওই এলাকার বাসিন্দা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো: গিয়াস উদ্দিন বলেন, সেতুটি নির্মাণের ফলে বৃহত্তর নোয়াখলী ও ফেনী জেলার মানুষগুলো উপকৃত হয়েছিল। অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের কারণে বন্যার চাপে সেতুটির সংযোগ সড়কে গর্ত হয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। দ্রুত সংস্কার করা না হলে সেতুটিও নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আবু সুফিয়ান বলেন, সেতুর তলদেশ থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার কারণে বন্যার পানির চাপে সেতুতে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। বালু উত্তোলন বন্ধ কারাসহ সেতুটিকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। দীর্ঘ একমাসেও সেতুর সংযোগ সড়কের গর্ত ভরাট না হওয়ায় তিনি ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন।
নোয়াখালী সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী সৌম্য তালুকদার বলেন, বন্যার পানির চাপে সাহেবের ঘাট সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙে পড়ায় গর্তটি ভরাটের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বারবার গর্তে বালুভর্তি বস্তা ফেলে গর্ত ভরাটের চেষ্টা চলছে। কিন্তু জোয়ারের পানির চাপের কারনে তা টিকছে না। এজন্য উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল এসে পরিদর্শন শেষে তাদের পরামর্শে সেতুর গর্ত ভরাট ও আশপাশের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পাঁচ কোটি ৬০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প তৈরী করে বরাদ্ধের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তিনি আশা করছেন আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে গর্ত ভরাট করে সেতুর ওপর দিয়ে যানচলাচল স্বাভাবিক করতে পারবেন।