আরিফ আজম :
আবদুল্লাহ আল সালমান। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। পবিত্র কোরআনের হাফেজ হওয়ার পর অসম্ভব মেধাবী এ সন্তানকে মুহাদ্দিস বানানোর স্বপ্ন নিয়ে আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসায় ভর্তি করানো হয়। ২০১৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় পুলিশের গুলিতে বাবা-মায়ের সেই লালিত স্বপ্ন নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। ছেলের কথা মনে উঠলে এখনো ডুকরে কেঁদে উঠেন মা সালেহা খানম। শুক্রবার বিকালে ফুলগাজী উপজেলার উত্তর করইয়া এলাকার কাজী বাড়িতে বসে কথাগুলো বলছিলেন সালমানের বাবা মাওলানা সুলতান আহমাদ। তিনিও সন্তান হারানোর শোক কাটাতে পারেননি।
১০ বছর আগে ফেনী শহরের খাজুরিয়া এলাকার নির্মাণ সুপার মার্কেট সংলগ্ন স্থানে মর্মান্তিক এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় বিচারতো দূরের কথা, মামলাও হয়নি। সেই সময়ে ফেনী মডেল থানার ওসি ছিলেন মো: মোয়াজ্জেম হোসেন। মোয়াজ্জেম নিজেই গুলি করে সালমানকে মেরেছেন বলে বিভিন্ন স্থানে দম্ভ করে বলে বেড়াতেন। এমনকি পুলিশ সদর দপ্তরেও সালমানকে হত্যার ঘটনাকে ‘একজন সন্ত্রাসীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে’ মর্মে ফেনী পুলিশ সুপার অফিস থেকে নোট পাঠানো হয় বলে জানা গেছে। তখন ফেনীর পুলিশ সুপার ছিলেন পরিতোষ ঘোষ।
সোনাগাজীর আলোচিত মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে হত্যার আগে তার বক্তব্য ভিডিওতে ধারণ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার দায়ে ২০১৯ সালের ২৯ নভেম্বর ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে ৮ বছরের কারাদন্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন আদালত। ইতিমধ্যে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বেরিয়েছেন মোয়াজ্জেম।
জানা গেছে, জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ডের রায় কার্যকর ঘোষনার প্রতিবাদে ২০১৩ সালের ১০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাতে আদালত পাড়া সংলগ্ন খাজুরিয়া রাস্তার মাথায় শিবির নেতা-কর্মীরা মিছিল বের করে। মিছিলে পুলিশ হামলা চালালে মিছিলকারীরাও পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে। ঘটনাস্থলে শিবির নেতা হাফেজ আবদুল্লাহ-আল সালমান গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে নিকটবর্তী কসমোপলিটন হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকগণ মৃত ঘোষনা করে।
ছাত্রশিবিরের ফেনী শহর সেক্রেটারী ওমর ফারুক জানান, হাফেজ সালমান বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ১৮৭তম শহীদ ও ফেনী শহর শাখার প্রথম শহীদ।
সালমানের বাবা মাওলানা সুলতান আহমাদ বলেন, “তিনি দীর্ঘদিন দাগনভূঞার শাহ সুফী সদর উদ্দিন (র.) দাখিল মাদরাসায় শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৯৭ সালে কুয়েত চলে যান। সন্তানদের মানুষ করতে ফেনী শহরে বাসা ভাড়া নেন। একাডেমী এলাকার দ্বিনীয়া মাদরাসা থেকে হিফজ শেষ করার পর ফালাহিয়া মাদরাসায় ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয়। সেখানে পড়াশোনা অবস্থায় ইসলামী আন্দোলনে অংশ নিতে ছাত্রশিবিরে যুক্ত (সাংগঠনিক মান- সাথী) হয়।”
ছেলের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, “সালমানের অসাধারণ মেধা ছিল। প্রতিটি পরিবারে তার মতো একজন সন্তান প্রয়োজন। সালমান বড় হয়ে ডাক্তার হবে, দ্রাতব্য চিকিৎসালয় তৈরি করে এলাকার মানুষকে বিনামূল্যে সেবা দেয়ার চিন্তা করতো। তাকে শহীদ হিসেবে মহান আল্লাহ কবুল করুক এটাই আমার বড় চাওয়া। তাকে হারানোর পর ভাষায় প্রকাশ করা খুবই কঠিন। এখনো মাঝে মাঝে মনে হয় সালমান আমায় ডাকছে। চার ছেলে-মেয়ের মধ্যে মেধা, মার্জিত আচরণে সালমান ছিল সেরা।”