কুরবানী শব্দটি আরবি কুরবান শব্দ থেকে উদ্ভূত। ফিকহের পরিভাষায় একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্য়ে নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তির পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট পশু যবেহ করাকে কুরবানী বলা হয় (হিদায়া চতুর্থ খন্ড)
কুরবানীর মাসাইল : প্রশ্ন: কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য শর্ত কী? উত্তর: কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য শর্ত হলো- ১. নেসাব পরিমাণ তথা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্যের মালিক হওয়া। যদি কোন ব্যক্তি কুরবানীর দিন সমূহের মধ্যে নেসাব পরিমাণ মালের মালিক হয়, তবে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে। যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়, সে যদি কুরবানী করে তবে সাওয়াব প্রাপ্ত হবে। ২. মুসলমান হওয়া ৩. মুকীম হওয়া, মুসাফির না হওয়া ৪. প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া ৫. বিবেকবুদ্ধি সম্পন্ন হওয়া। দরিদ্র, অমুসলিম, মুসাফির এবং বিবেক বুদ্ধিহীন ও অপ্রাপ্ত বয়স্কের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় (ফতওয়ায়ে শামী, ২য় খন্ড, পৃ. ২৩১, কুদুরী, পৃ. ৩৪৩)।
প্রশ্ন: কুরবানী করার সময় কখন? উত্তর: জিলহজ মাসের ১০ তারিখ ঈদের নামাযের পর হতে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত কুরবানীর সময়। তবে প্রথম দিন করা সর্বোত্তম, তারপর দ্বিতীয় দিন, তারপর তৃতীয় দিন। ঈদের নামাযের পর কুরবানী করতে হবে, ঈদের নামাযের পূর্বে কুরবানী করা বৈধ নয় (কুদুরী, পৃ. ৩৪৩, ৩৪৪)।
প্রশ্ন: রাত্রে কুরবানী করার বিধান কী? উত্তর: কুরবানীর তিন দিনের মধ্যে যে দু’টি রাত্র রয়েছে সেই দু’রাত্রেও কুরবানী করা জায়েজ, তবে রাত্রে করা মাকরূহ। কেননা, তখন হয়তো কোন একটি রগ কাটা নাও হতে পারে। ফলে কুরবানী জায়েয হবে না (আলমগিরী, ৫ম খন্ড- পৃ.২৯৬)।
প্রশ্ন: অন্যের দ্বারা কুরবানীর পশু যবেহ করানোর বিধান কী? উত্তর: নিজ হাতে কুরবানীর পশু যবেহ করা মুস্তাহাব। নিজে না পারলে অন্যের দ্বারা করানো যাবে। তবে নিজে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম। নারীগণ সম্ভব হলে পর্দা করে দাঁড়াবে। (শরহে তানভীর, ২য় খন্ড, পৃ. ২৩৪)।
প্রশ্ন: যবেহ কালে নিয়ত করা কী? উত্তর: নিয়ত বলা হয় অন্তরের ঐকান্তিক ইচ্ছাকে। ফলে কুরবানী পশু যবেহ করার সময় মুখে নিয়ত করা এবং দোআ পড়া আবশ্যক নয়। অন্তরে কুরবানীর খেয়াল করে মুখে শুধু ”বিসমিল্লাহি ওয়া আল্লাহু আকবার” বলে যবেহ করলে কুরবানী সহীহ হবে। অবশ্য জানা থাকলে কুরবানীর পশু যবেহ কালীন নির্দিষ্ট দোআ পড়া উত্তম (শামী ২য় খন্ড, পৃ. ২৭২)।
প্রশ্ন: কোন কোন পশু দ্বারা কুরবানী বৈধ? উত্তর: ছয় ধরনের গৃহ পালিত পশু দ্বারা কুরবানী জায়েয। উট, গরু ও মহিষ এগুলোতে সাত শরীক পর্যন্ত জায়েয। আর ভেড়া, ছাগল, দুম্বা এগুলোতে এক শরীকের বেশী জায়েয নয়। উট, গরু ও মহিষে একাধিক অংশিদার হলে, সকলের অংশ সমান হতে হবে। কম-বেশী হলে কুরবানী শুদ্ধ হবে না। কয়েকজন মিলে এক নামের টাকা দিলে কুরবানী হবে না। এক নামের টাকা একজনে দিতে হবে কয়েক ভাই মিলে পিতার নামে কুরবানী দিলে হবে না, সম্পূর্ণ টাকা একজন দিতে হবে। অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ (স)-এর নামে কুরবানী দিলে টাকা একজন দিতে হবে। (হেদায়া, ৪র্থ খন্ড, পৃ. ৪২২, আলমগীরী, ৫ম খন্ড, পৃ. ৬৯৫)।
প্রশ্ন: কুরবানীর পশুতে কখন কুরবানীর নিয়ত কখন করতে হবে উত্তর: কুরবানীর পশুতে নিয়ত করতে হয় পশু ক্রয় করার সময়, যবেহ করার সময় নয়। ফলে কুরবানীর দিন, কুরবানী দাতার অনুপস্থিতিতে অন্য কেউ যবেহ করলেও কুরবানী শুদ্ধ হবে। একটি গরু ক্রয় করার পূর্বেই সাতজন অংশীদার সকলে মিলিয়ে ক্রয় করা অতি উত্তম। আর যদি কেউ একা একটি গরু কুরবানীর উদ্দেশ্যে ক্রয় করে এবং মনে মনে এই ইচ্ছা পোষণ করে যে, পরে আরো লোক শরীক করে তাদের সাথে মিলে একত্রে কুরবানী করবে, তবে তাও জায়েয আছে। কিন্তু যদি গরু ক্রয় করার সময় অন্যকে শরীক করার ইচ্ছা না থাকে, একাই কুরবানী করার নিয়ত থাকে, পরে অন্যকে শরীক করার ইচ্ছা করে, তাহলে ক্রেতা গরীব হলে অন্যকে শরীক করতে পারবে না। আর যদি ক্রেতা ধনী হয়, তাহলে অন্যকে শরীক করতে পারবে (ফতোয়া হিন্দিয়া, ৫ম খন্ড, পৃ. ৩০৪)।
প্রশ্ন: কুরবানীর পশু হারিয়ে গেলে তার বিধান কি? উত্তর: কুরবানীর পশু হারিয়ে বা চুরি হয়ে গেলে তৎপরিবর্তে আরেকটি ক্রয় করার পর তিন দিনের মধ্যে পূর্বেরটিও পাওয়া গেলে গরীবের উভয়টি যবেহ করতে হবে। আর ধনীর যে কোন একটি যবেহ করলেই চলবে (আস আশবা ওয়ান নাযাইর, ১ম খন্ড, হেদায়া, ৪র্থ খন্ড, পৃ.৪৩২)।
প্রশ্ন: কুরবানীর গোশত বন্টন করার বিধান কি? উত্তর: যদি সাতজনে শরীক হয়ে একটি গরু কুরবানী করে, তবে গোশত অনুমান করে বন্টন করবে না। বরং পাল্লা দ্বারা ওজন করে বন্টন করবে। অবশ্য পা, মাথা, হাঁড় ইত্যাদি অনুমান করে বন্টন করা বৈধ (দুররুল মুখতার,২য় খন্ড, পৃ. ২৩২)।
প্রশ্ন: পশুর বয়স কতো হওয়া আবশ্যক? উত্তর: উট ৫ বছর, গরু ও মহিষ ২ বছরের হওয়া আবশ্যক। ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা এক বছর হওয়া আবশ্যক। এর কম হতে কুরবানী শুদ্ধ হবে না। তবে ৬ মাসের দুম্বা যদি মোটা তাজা হয় এবং এক বছরের দুম্বার মত দেখায়, তা’হলে কুরবানী শুদ্ধ হবে (দুররুল মুখতার, ২য় খন্ড, পৃ. ২৩২)।
প্রশ্ন: কোন কোন পশু দ্বারা কুরবানী করা বৈধ নয়? উত্তর: কুরবানীর জন্য পশু ত্রুটিম্ধুসঢ়;ক্ত, দেখতে সুন্দর ও আকর্ষনীয় হওয়া আবশ্যক। যে পশুর দু’টি চোখ অন্ধ বা একটি চোখ পূর্ণ অন্ধ বা একটি চোখের এক তৃতীয়াংশ বা আরো বেশী দৃষ্টি নষ্ট হয়ে গিয়েছে, সে পশু দ্বারা কুরবানী শুদ্ধ হবে না। তদ্রুপ যে পশুর একটি কানের বা লেজের এক তৃতীয়াংশ বা তদপেক্ষা বেশী কেটে গিয়েছে সে পশু দ্বারা কুরবানী হবে না। যে পশু এমন খোঁড়া যে, মাত্র তিন পায়ের উপর ভর দিয়ে চলে, একটি পা মাটিতে লাগাতেই পারে না অথবা মাটিতে লাগাতে পারে, কিš‘ তার উপর ভর দিতে পারে না, এরূপ পশু দ্বারা কুরবানী শুদ্ধ হবে না। খোঁড়া হলেও যদি পায়ের উপর ভর দিয়ে চলতে পারে। তবে কুরবানী বৈধ হবে। পশু যদি এমন কৃশ ও শুস্ক হয় যে, তার হাড়ের মগজও শুকিয়ে গিয়েছে, তবে তা দ্বারা কুরবানী শুদ্ধ হবে না। যে পশুর একটি দাঁতও নেই, তা দ্বারা কুরবানী শুদ্ধ হবে না। যদি যতগুলো দাঁত পড়ে গিয়েছে তা অপেক্ষা অধিক সংখ্যক দাঁত বাকী থাকে, তা’হলে কুরবানী শুদ্ধ হবে। যে পশুর জন্ম থেকে কান নেই, তা দ্বারা কুরবানী শুদ্ধ হবে না। কান আছে কিন্তু ছোট, তা দ্বারা কুরবানী শুদ্ধ হবে। যে পশুর শিং উঠেনি বা উঠার পর ভেঙ্গে গিয়েছে, তা দ্বারা কুরবানী শুদ্ধ হবে। তবে মূল থেকে ভেঙ্গেগেলে তা দ্বারা কুরবানী শুদ্ধ নয়। অনুরূপ যে পশু গায়ে বা কাঁধে দাদ বা খুজলি হয়েছে তা কুরবানী করা জায়েয। তবে যদি খুজলির কারণে পশুর বেশী কৃশ হয়ে যায়, তবে কুরবানী জায়েয হবে না (আলমগীরী, ৫ম খন্ড, পৃ. ৪১৮, দুররুল মুখতার ২য় খন্ড, পৃ. ২৩৬, হেদায়া, ৪র্থ খন্ড, পৃ. ৪৩২)।
প্রশ্ন: পশু ক্রয় করার পর অসু¯’ হলে তার বিধান কি? উত্তর: ত্রুটিমুক্ত পশু ক্রয় করার পর যদি এমন কোন ত্রুটি দেখা দেয়, যে কারণে কুরবানী সহীহ হয় না, তবে ধনীর জন্য অন্য একটি পশু ক্রয় করে কুরবানী করতে হবে, আর গরীব হলে ত্রুটিপূর্ণ পশুই কুরবানী করতে হবে (দুররুল মুখতার, ২য় খন্ড, পৃ. ২৩৩)।
প্রশ্ন: গোশত দান করার বিধান কী? উত্তর: কুরবানী গোশত নিজে খাওয়া, পরিবারবর্গকে খাওয়ানো, আত্মীয়-
স্বজনকে হাদিয়া দেয়া এবং গরীব-মিসকীনদের দান করা সবই জায়েয। এমনটি অমুসলিমকেও দেয়া জায়েয। গরীব-মিসকিনকে এক-তৃতীয়াংশ দান করা মুস্তাহাব। তবে এক-তৃতীয়াংশ দান করার কথা হাদীসে নেই। ফলে পরিবারের সদস্য বেশী থাকলে না দিলেও অসুবিধা নেই (হেদায়া, ৪র্থ খন্ড, পৃ. ৪৩৫)।
প্রশ্ন: চামড়ার বিধান কী? উত্তর: কুরবানীর পশুর চামড়া গরীব-মিসকীনকে দান করে দিতে হবে। যদি বিক্রি করা হয়, তবে ঐ টাকা গরীব-মিসকীনকে দান করে দিতে হবে। ইচ্ছা করলে নিজেও চামড়া শুকিয়ে ব্যবহার করতে পারে। চামড়ার টাকা মসজিদ-মাদরাসায় দেয়া বৈধ নয় (দুররুল মুখতার, ২য় খন্ড, পৃ. ২৩৪)।
প্রশ্ন: পারিশ্রমিক হিসেবে গোশত দান করা যাবে কিনা? উত্তর: কুরবানীর পশু যবেহকারী ও গোশত প্রস্তুতকারীর পারিশ্রমিক গোশত দ্বারা দেয়া যাবে না; বরং পৃথকভাবে দিতে হবে। অন্যথায় কুরবানীর হবে না (প্রাগুক্ত)।
প্রশ্ন: গরীবের কুরবানীর বিধান কী? উত্তর: গরীবের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়, কিন্তু যদি সে কুরবানীর নিয়তে পশু ক্রয় করে, তবে তার জন্য ওয়াজিব হয়ে যায় (প্রাগুক্ত)।
প্রশ্ন: নির্দিষ্ট সময়ে কুরবানী না করতে পারলে কি করবে? উত্তর: কারো উপর কুরবানী ওয়াজিব ছিল, কিন্তু কোন কারণে বশতঃ তিন দিনের মধ্যে কুরবানী করতে পারে নি। এক্ষেত্রে সে একটি বকরী বা ভেড়ার মূল্য দান করে দিবে। আর যদি বকরী বা ভেড়া ক্রয় করে থাকে, তবে তা দান করে দিবে (শামী, ৫ম খন্ড, পৃ. ২৮০)।
প্রশ্ন: কুরবানীর মান্নত করলে তার বিধান কী? উত্তর: যদি কেউ কুরবানী করার মান্নত করে এবং তার মান্নতও পূর্ণ হয়, তবে মান্নতকারী ধনী হোক বা গরীব তার কুরবানী করা ওয়াজিব। এ কুরবানীর গোশত সে খেতে পারবে না, দান করে দিতে হবে (প্রাগুক্ত কিতাব, পৃ. ২৮৬)।
প্রশ্ন: মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানীর বিধান কী? উত্তর: স্বেচ্ছায় মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানী দেওয়া জায়েয। এ গোশত নিজে খেতে পারে অন্যকেও দান করতে পারে। কিন্তু যদি কোন ব্যক্তি কুরবানীর অসিয়ত করে যায় এবং মৃত্যুর পর তার নামে কুরবানী করা হয়, তবে এ কুরবানীর গোশত খাওয়া যাবে না, বরং দান করে দিতে হবে (শামী, ৫ম খন্ড, পৃ. ২২৮)।
প্রশ্ন: অনুমতি ছাড়া অন্যের পশু কুরবানী করার বিধান কী? উত্তর: একজন আরেকজনের পশু অনুমতি ছাড়া যবেহ করা জায়েয নেই। যদি অনুমতি ছাড়া যবেহ করার পর মালিক সন্তুষ্ট থাকে এবং জরিমানা সাব্যস্ত না করে, তবে কুরবানী হয়ে যাবে (আল-আশবা ওয়ান নাযাইর, ১ম খন্ড)।
প্রশ্ন: কুরবানীর সাথে আকীকা করার বিধান কী? উত্তর: কুরবানীর সাথে আকীকা করা একটি মতবেদপূর্ণ মাসআলা। হানাফি মাযহাবের অধিকাংশ ইমামের মতে কুরবানীর সাথে আকীকা করা জায়েয। কতিপয় হানাফি ইমাম এবং অন্যান্য মাযহাবের ইমামদের মতে কুরবানী ও আকীকা যেহেতু ভিন্ন দু’টি ইবাদত সেহেতু দু’টি ইবাদতকে একত্রিত করা বৈধ নয়। এ ব্যাপারে বিজ্ঞ ফিক্ধসঢ়;হবিদদের অভিমত হলো আকীকা করার বিধান জন্মের সপ্তম দিন। সুতরাং যারা সামর্থবান তাদের কুরবানীর সাথে আকীকা সংযোগ না করাই উত্তম।
প্রশ্ন: গাভীন পশু কুরবানী করার বিধান কী? উত্তর: গাভীন পশু কুরবানী করা জায়েয। তবে সেচ্ছায় না করা উচিত। যবেহ করার পর যদি বাচ্চা জীবিত থাকে, তা’হলে বাচ্চাকেও যবেহ করতে হবে। এ বাচ্চার গোশত ইচ্ছা করলে ভক্ষণও করতে পারে (দুররুল মুখতার, ৫ম খন্ড, পৃ. ৮)।
প্রশ্ন: কুরবানীর দিবস সমূহে হাঁস, মুরগী যবেহ করা যাবে কিনা? উত্তর: কুরবানীর দিবস সমূহে হাঁস-মুরগী ইত্যাদি যবেহ করা জায়েয। কেননা, এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন ও হাদীসে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই।
প্রশ্ন: কুরবানীর পশু প্রদর্শনী করার বিধান কী? উত্তর: কুরবানীর পশু মালা ও রঙ্গীন কাপড় পরিয়ে প্রদর্শনী করা, সেলফি তোলা এবং পাড়া মহল্লায় তা নিয়ে ঘুরা-ফেরা করা রিয়ার শামিল, ফলে তা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
প্রশ্ন: ধার-কর্জ করে কুরবানী করার যাবে কিনা? উত্তর: যদি কুরবানী দাতা সামর্থবান হয় কিন্তু এ মুহুর্তে নগদ টাকা না থাকে এবং কার্য পরিশোধ করার ইচ্ছা থাকে, তা’হলে তার জন্যে ধার-কর্জ করে কুরবানী করা জায়েয। কিন্তু গরীবের জন্য জায়েয নেই।
প্রশ্ন: কুরবানী করার অস্ত্র কিরূপ হওয়া আবশ্যক? উত্তর: যবেহ ধারালো অস্ত্র দ্বারা করা কর্তব্য। মহানবী (স) উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা (রা)-কে কুরবানীর করার পূর্বে বলেছেন, আমাকে একটি ছুরি দাও, তারপর বলেন, পাথরের ওপরে একে ধার কর (সহিহ মুসলিম)।
প্রশ্ন: চামড়া ছাড়ানোর বিধান কী? উত্তর: পশু শীতল হওয়ার পূর্বে চামড়া ছাড়ানো এবং পায়ের রগ কাটা অনুচিত। তাড়াহুড়া না করে পশু শীতল হলে চামড়া ছাড়ানো উচিত।
প্রশ্ন: কুরবানী দাতাদের কর্তব্য কী? উত্তর: যারা কুরবানী করবেন, তাদের জিলহজ মাসের চাঁদ উঠার পর থেকে
কুরবানী করার পূর্ব পর্যন্ত চুল, নখ, ইত্যাদি না কাটা মুস্তাহাব। রাসূল (স) বলেছেন- যখন জিলহজ মাস শুরু হবে এবং যারা কুরবানী করার আশা পোষণ করে, তারা যেন নিজের চুল বা শরীরের কোন অংশ স্পর্শ না করে তথা না কাটে অপর বর্ণনা মতে নিজের চুল ও নখ না কাটে (মুসলিম)।
প্রশ্ন: তিন দিনের অধিক গোশত খাওয়ার বিধান কী? উত্তর: কুরবানীর গোশত তিন দিনের অধিক সময় ধরে খাওয়া বা শুকানো অথবা জমা রাখা সবই জায়েয।
প্রশ্ন: দান করা পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে কিনা? উত্তর: কেউ দান করলে সে পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে। যেমন- হযরত উকবা ইবন আমের (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা মহানবী (স) তাঁকে কতগুলো ছাগল প্রদান করেন। তিনি তাঁর সাহাবীদের মধ্যে এ গুলো কুরবানীর পশু হিসেবে বন্টন করে দেন। অতঃপর বন্টন শেষে এক বছরের একটি বাচ্চা অবশিষ্ট রয়ে যায়। তখন তিনি তা রাসূল (স) এর কাছে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (স) বলেন, তা দ্বারা তুমি নিজে কুরবানী কর। অপর বর্ণনায় রয়েছে যে (উকবা বলেন)। আমি বললাম- হে আল্লাহর রাসূল (স)! আমার ভাগে একটি ছয় মাসের বাচ্চা পড়েছে। রাসূল (স) বলেন, তুমি তা দ্বারা-ই কুরবানী কর ( সহীহ বুখারী ও মুসলিম)। কারো শশুর বাড়ী থেকে সেচ্ছায় পশু হাদিয়া দিলে একে হাদিয়া হিসেবেই গ্রহণ করা উচিত, কুরবানী হিসেবে নয়। শশুর বাড়ী থেকে ঈদে গরু, ছাগল ইত্যাদি পাওয়ার আশা করা জায়েয নেই।
প্রশ্ন: কুরবানীর ঈদের দিনের প্রথম আহার কি হওয়া আবশ্যক? উত্তর: ঈদের দিন হলো আল্লাহর পক্ষ হতে জিয়াফতের দিন। আর মু’মিনগণ হলো আল্লাহর মেহমান। তাই মেহমানের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত দাওয়াতে অংশ গ্রহণ স্বরূপ কুরবানীর গোশত দিয়ে প্রথম আহার করা মুস্তাহাব।
লেখক : বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ।