উপ-সম্পাদকীয়
খন্দকার নাজমুল হক
বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকার এবং ফ্যাসিবাদের জননী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে সীমাহীন লুটপাট ও দুর্নীতি করেছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে চরম স্বৈরতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা কায়েম করেছে। সমালোচনা ও বিরোধী কণ্ঠকে স্তব্ধ করতে নিষ্ঠুর দমন–পীড়ন চালিয়েছে। মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করেছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করার পাশাপাশি তারা ইতিহাসকেও অনেকাংশে আত্মসাৎ করেছে, যার দায় দেশবাসীকে বহন করতে হবে বহু বছর। ৮ জুলাই প্রফেসর ইউনুস কিভাবে রাষ্ট্র সংস্কারের দ্বায়িত্ব গ্রহণ করলেন এবং তিনি পেলেন ১) ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা ২) চেতনাবাজ প্রশাসন ৩) দলবাজ কর্মচারী ৪) ফ্যাসিবাদী প্রশাসক ৫) শোকাহত পুলিশ বাহিনী ৬) মেরুদণ্ডহীন বিজেবি ৭) শত্রু রাষ্ট্র ভারত ৮) হেলমেট বাহিনী ও লেন্দুপ দর্জিগোষ্ঠী ৯) নতুন চাঁদাবাজ বাহিনী ১০) বিনামূল্যে ভারতের করিডোর ব্যবহার ১১) ভারতের দালাল গোষ্ঠী ১২) ফারাক্কা ও তিস্তা বাঁধ খুলে বন্যা ১৩) ভারত নির্ভর নতজানু পররাষ্ট্র নীতি ১৪) ফ্যাসিবাদী মিডিয়া সিন্ডিকেট ১৫) খাদ্যদ্রব্যের সিন্ডিকেট ১৬) ১৫০০ মেধাবী শিক্ষার্থীর শহীদ পরিবার ১৭) ৩০,০০০ আহত ও পঙ্গু পরিবারের কান্না ১৮) ১০০ বিলিয়ম ডলার ঋণ ১৯) ১৫০ বিলিয়ন ডলার পাচার ২০) এস আলমের লুটপাট ৯৫,০০০ কোটি টাকা ২১) পি কে হাওলাদারের লুটপাট ২৪০০ কোটি টাকা। ২২) বিভিন্ন ব্যাংকে লুটপাট ৯২,২৬১ কোটি টাকা। ২৩) সালমান এফ রহমানের লুটপাট ৩৭,০০০ কোটি টাকা ২৪) অতিরিক্ত নোট ছাপিয়ে সাবেক গভর্নর আব্দুর রউপ তালুকদারগং এর লুটপাট ৩৫,০০০ কোটি টাকা ২৫) আব্দুল হাই বাছুর বেসিক ব্যাংক লুটপাট ৪,০০০ কোটি টাকা ২৬) ৬২৬ জন লুটপাটকারী সেনাবাহিনীর আশ্রয়ে ইত্যাদি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে বিগত ৫৩ বছর মুজিববাদ এবং শেখ মুজিব পরিবারের বন্দনা। জাতির উপর ছাপিয়ে দেওয়া হয়েছে শেখ মুজিব পরিবারের বিভিন্ন দিবস। এ দিবস পালনে ব্যয় করা হয়েছে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা। শেখ মুজিবকে প্রতিষ্টা করতে যেয়ে সারাদেশে তৈরী করা হয়েছে বংগবন্ধুর ম্যুরাল। ড. ইউনূস ভারতের বিরুদ্ধে শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে জাতীকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। সকল রাজনৈতিকদল ভারতের আগ্রাসন এবংষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছে।
বিগত ১৫ বছর ভারতের তাবেদার শেখ হাসিনার কাঁদের উপর ভর করে বাংলাদেশের সকল ব্যবসা বানিজ্যের সিন্ডিকেট হাসিনা এবং মৌদি নিয়ন্ত্রণ করতো। বিপ্লবীদের নিয়োগকৃত কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান উপদেষ্ঠা নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০২৫ সালের রমজানে খাদ্যদ্রব্যের লাগামহীন মুল্যবৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরেছেন। এ বছর রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণ এমনভাবে করেছেন যেন মোগল সুবেদার শেরশাহের রাজত্ব ফিরে এসেছে। বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার ভারত বাংলাদেশ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে খাদ্যদ্রব্যের লাগামহীন মুল্যবৃদ্ধি করে বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বিগত রমজানে ২০০ টাকার পেঁয়াজিএখন ৩০ টাকা কেজি, ৪০০ টাকার কাঁচা মরিচ ৫০ টাকা কেজি, ১০০ টাকার তরকারি এখন ৩০/৪০ টাকা, টমোটো মাএ ২০ টাকা, আলু ২০ টাকা। প্রতি বছর রোজায় বেগুন প্রতি কেজি ছিল ১৫০/২০০ টাকা, এবার বেগুন প্রতি কেজি ৩০/৪০ টাকা। ড. মোহাম্মদ ইউনুস নতজানু ভারত নির্ভর পররাষ্ট্রনীতি বদলে দিয়ে স্বাধীনতার চেতনায় জাতীকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। ১৮ কোটি মানুষ শান্তিতে রোজা রেখেছে এবং ঈদ আনন্দ ভালোভাবে উপভোগ করবে। এ বারের রমজানের বিশেষ আকর্ষণ ছিলো জাতিসংঘ মহাসচিব গুতরেজের বাংলাদেশ সফর এবং ১০০,০০০ রোহিঙ্গাদের সাথে ইফতারে অংশগ্রহণ। ড. ইউনুস ঘোষণা দিয়েছেন আগামী রমজান মাসে রোহিঙ্গাদের নিয়ে ইফতার করবেন রাখাইন প্রদেশে। বিশ্ববাসীকে মেসেজ দিয়েছেন রোহিঙ্গারা ২০২৬ সালের মধ্যে নিজের দেশে ফিরে যাবে। ড. ইউনুস ফ্যাসিবাদী ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ১৮ কোটি নাগরিকদের নিয়ে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। ভারতের তাবেদারী এবং রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে ড. মোহাম্মদ ইউনুস আন্তর্জাতিক কুটনীতিতে একজন জাতীয়তাবাদী নেতায় পরিণত হয়েছেন। পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিবাদের দোসরদের পাশবিকতার শিকার নাগরিকদের পাশে দাঁড়িয়ে ভারতের আগ্রাসন রুখেছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের তাবেদার হাসিনার পতনের পর চীন দ্রুত নবগঠিত ইউনূস সরকারের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে এবং কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দেয়। গত বছরের ১২ অক্টোবর দুটি চীনা যুদ্ধজাহাজ শুভেচ্ছা সফরে বাংলাদেশে আসে, যা দুই দেশের সামরিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার পলায়নের পর চীনা কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক শুরু করে এবং তাদের প্রতিনিধিদের চীনে আমন্ত্রণ জানায়, যা দ্বিপক্ষীয় কূটনীতির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হয়েছে। ভারত বিরোধী কূটনৈতিক অগ্রগতির সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অংশ হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর।
ড. ইউনূস যখন পৃথিবীর দক্ষিণ মেরু চীন সফরে ১৫হাজার কোটি টাকার বিশ্বমানের মেডিকেল প্রতিষ্ঠা,১২হাজার কোটি টাকার চারটি মহাসাগরীয় বাণিজ্য হাজার ক্রয়, ১০ হাজার কোটি টাকার তিস্তা ব্যারেজ তৈরি,বিনা শুল্কে ২০২৮ সাল পর্যন্ত মুক্ত পণ্য বাণিজ্য সহ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির ১ ট্রিলিয়ন ডলারের চুক্তি হতে যাচ্ছে। তখনি পৃথিবীর উত্তর মেরু থেকে খবর এলো বাংলাদেশের সবথেকে বড় সমস্যা জাতিসংঘে রোহিঙ্গা প্রস্তাব পাস হয়েছে ১৪০ দেশের প্রত্যক্ষ ভোটে।যেখানে কোন দেশ বিপক্ষে ভোট দেয়নি। রোহিঙ্গাদের আগে যেখানে খাবার বাবদ মাসিক সাত ডলার তথা ৮৪৭টাকা দেওয়া হতো। নতুন বাজেটে সেটি বাড়িয়ে এখন থেকে জনপ্রতি খাবারে ১২ ডলার তথা ১৪৫২ টাকা দেওয়া হবে। বাংলাদেশের রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলার। শুধু এমাসে দেশে এসেছে ৪ বিলিয়ন ডলার তথা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা।
আওয়ামী লীগ মুজিববাদ প্রচার করতে যেয়ে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বহুদলীয় সংসদীয় সরকার পদ্ধতি পরিবর্তন করে একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে বাকশাল কায়েম করে রাষ্ট্রীয়ভাবে গণতন্ত্র হত্যা করে। ১৫ আগস্ট সামরিক অভ্যূত্থানে শেখ মুজিবের মৃত্যু হলে বাকশালের সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের উদ্যোগ নিলে বাকশালের কুশীলবরা পূর্বতন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত করে। যারফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বাকশাল নামক রাজনৈতিক দলের পুনরাবির্ভাব হয়নি। রক্ষীবাহিণীর মাধ্যমে জাসদের প্রায় ৩০,০০০ রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা করে। সিরাজ শিকদারকে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করে, ভারতকে ফারাক্কা বাধ চালুর অনুমতি দিয়ে উত্তরবংগকে মরুভুমিতে পরিনত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাসকে ম্লান করেছে, প্রশ্নবিদ্ধ করে অতীতের সবঅর্জন ও বিজয়গাথা। আওয়ামী লীগ স্মরণ করেনা হোসেন শহীদ সোহরাওয়দিীকে, স্মরণ করেনা জেনারেল এম এ জি ওসমানীকে, স্মরণ করেনা মাওলানা ভাসানীকে, স্মরণ করেনা তাজ উদ্দিন এবং সৈয়দ নজরুল ইসলামকে। আমাদের জাতির দুর্ভাগ্য, আমাদের দেশে ক্ষমতার বদলের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু বদলে যায়। কেবল চেয়ার নয়, রাষ্ট্রের নীতিকৌশলও। কিন্তু এসব কতটা জনগণের কল্যাণে আর কতটা ভিন্ন কারণে, সেটা ভেবে দেখার বিষয়। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত সংবিধানে ১৭টি সংশোধনী আনা হয়েছে, যার বেশির ভাগই দলীয় ও ব্যক্তিস্বার্থে। ৫ আগষ্ট ফ্যাসিবাদমুক্ত দ্বিতীয় স্বাধীনতা দিবস।
আওয়ামী লীগ ভারতের তাবেদারী করতে যেয়ে দেশ ও জাতির শত্রুতে পরিনত হয়েছে। উচ্চ আদালতের দোহাই দিয়েই বিগত আওয়ামী লীগ সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করেছিল। যার পরিনতিতে এদেশের মানুষ ভোটের অধিকার হারিয়েছে, বাকস্বাধীনতা হারিয়েছে, ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে, আয়নার ঘর দেখেছে, পুলিশ হারুনের ভাতের ঘর দেখেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কেয়ারটেকারের ৪০০ কোটি টাকার লুটপাট দেখেছে, প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রীয় মদদে ৮টি ব্যাংক লুটপাট করে দেউলিয়া হতে দেখেছে। আরও দেখেছে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা এবং মুজিববাদের প্রচার, পরিবারতন্ত্র এবং জাতির ঘাড়ে চাপানো মুজিব পরিবারের আটটি জাতীয় দিবস। এই দিবসগুলোর মূল উদ্যেশ্য ১৮কোটি মানুষকে জোরকরে শেখ পরিবারের বন্দনা করা, কোটি কোটি টাকার অপচয় এবং বাংলাদেশে ভারতীয় মদদপুষ্ট শেখ পরিবারের একটি দালালগোষ্ঠি তৈরী করা। ছাত্র জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে ৩৬ জুলাই জাতি মুজিববাদ থেকে মুক্তি পেয়েছে, বিধায় জাতিকে ৫ আগষ্ট চেতনায় বিপ্লবের ইতিহাস লিখতে হবে। গণতন্ত্রের মানষপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়দিী, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানী, মাওলানা ভাসানী, স্বাধীনতার ঘোষক প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান বীরউত্তম, ১১জন সেক্টর কমান্ডার, সকল ভাষা শহীদ, জাতীয নেতা তাজ উদ্দিন এবং সৈয়দ নজরুল ইসলামকে ইতিহাসের পাতায় স্থান দিতে হবে। আরও স্থান দিতে হবে ৩৬ জুলাই বিপ্লবের ১৫০০ জন বীর শহীদদের।
ভারতীয় ’র’ এর পেসকিপসন মোতাবেক বিএনপির সিনিয়র নেতারা সংবিধানের দোয়াই দিয়ে ফ্যাসিবাদীদের পুনবাসনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বৈসম্যবিরোধী ছাত্রজনতা এবং দেশপ্রেমিক নাগরিকদের বুঝতে হবে কেন বিএনপি মহাসচিব সংবিধানের দোয়াই দিয়ে প্রেসিডেন্টকে অপসারণে বাধা দিয়েছে। দেশপ্রেমিক ছাত্রদের আন্দোলনের ফসল জুলাই বিপ্লব। বিপ্লব টিকিয়ে রাখতে হলে চুপ্পুকে বিদায় দিতে হবে। ১৯৭২ সালের সংবিধান বাংলাধেশের জাতীয় চেতনা এবং মূল্যবোধের পরিপন্থী। জুলাই বিপ্লবকারীরা ড. মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে একটি নতুন সংবিধান রচনা করে জাতিকে ভারতীয় ফ্যাসিবাদমুক্ত করবে এটাই ১৮কোটি নাগরিকের প্রত্যাশা । ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে প্রেসিডেন্টকে অপসারন করবে জুলাই বিপ্লবের চেতনার মাধ্যমে। এখানে সংবিধানের দোয়াই দেওয়ার কোন সযোগ নেই। জুলাই বিল্পবীরা দেয়াল লিখনির মাধ্যমে দ্বিতীয় স্বাধীনতার চেতনা তুলে ধরেছে। ১৮ কোটি মানুষ সরাদেশে দেয়ালিকা দেখেছে। কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ৩৬ জুলাই ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থানের সময় তরুণ বিপ্লবীদের আঁকা গ্রাফিতি দেখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন। বিগত ৫ আগষ্ট হতে আগুন সন্ত্রাস নেই, হেলমেট বাহিনী নেই, এস.বি মনিরের জংগী অভিযান নেই, হাউন আংকেলের ভাতঘর নেই, চেতনার বাহাদুরি নেই, ভারতের দালালী নেই, থানার ওসিদের খবরদারীও নেই। খাদ্যদ্রব্যের লাগামহীনমূল্য বৃদ্ধি নেই। সীমান্তে ভারতের খবরদারী নেই। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতীয়তাবাদী কুটনীতিতে ভারতের মুখে চপেটাঘাত লেগেছে। ১৫০০ মেধাবী ছাত্রদের খুনীদের প্রথম বিচার হলো সারাদেশে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা। বিগত ১৫ বছর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ছাত্রহত্যা, নির্যাতন, হেলমেট বাহিনী, গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট-বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নসহ নানা জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হয়েছে বিধায় সরকার ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করেছে।
ফ্যাসিবাদী শাসক শেখ হাসিনা ৫ আগষ্ট ১৫০০ জন মেধাবী ছাত্রকে হত্যা করে ভারতে পালিয়ে গেছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে এবং গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করা হয়েছে। শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সালে দিল্লীতে আশ্রয়ে ছিলো। ১৯৮১ সালের ১৭ মে বাংলাদেশে ফেরত আসেন এবং ৩০ মে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হয়েছেন। জেনারেল এরশাদ এবং শেখ হাসিনাকে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হত্যাকান্ডের জন্য বিচারের মুখোমুখি করা হয় নাই। শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রি করে জাতিকে বিভক্ত করে রেখেছে এবং বাংলাদেশকে ভারতের তাবেদার রাষ্ট্রে পরিনত করেছে। এখানে উল্লেখ্য যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পরে শেখ হাসিনা ভারতে ’র’ এর আশ্রয়ে ছিলেন এবং জেনারেল এরশাদ ছিলেন ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাসে সামরিক এটাসি। উভয়ের পরিকল্পনায় এবং ’র’ এর তত্তাবধানে এরশাদ ক্ষমতা দখল করে, শেখ হাসিনা রাজনীতির বি-টিম হিসেবে জেনারেল এরশাদকে ৯ বছর ক্ষমতায় থাকতে সহযোগিতা করে এবং ১৯৮৬ সালে বিএনপিকে বাদ দিয়ে বিরোধী দলের আসন দখল করে । তেমনি শেখ হাসিনাকে ১৯৯৬, ২০০৯, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে ক্ষমতায় থাকতে জেনারেল এরশাদ এবং জাতীয় পাটি রাজনীতির বি-টিম হিসেবে সহযোগিতা করে এবং জেনারেল এরশাদ বিরোধী দলের আসন দখল করে । ভারত কখনো বাংলাদেশের বন্ধু ছিলো না, ভারত বন্ধু ছিলো শেখ হাসিনা এবং জেনারেল এরশাদের। বিগত ৫ আগষ্ট ২০২৪ শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলে ভারত অখুশী হয়ে যায়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দিল্লিতে লোকসভার অধিবেশন ডাকে, সীমান্তে হত্যাকান্ড বৃদ্ধি করে, ফারাক্কা, তিস্তা, ত্রিপুরার বাঁধ খুলে দিয়ে কৃত্রিম বন্যায় ১০টি জেলার ২ কোটি মানষের ব্যাপক ক্ষতি করেন। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাত সিং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুমকি প্রদান করে।
ভারতে ’র’ এর আশ্রয়ে আছেন শেখ হাসিনা, শেখ রেহেনা, সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল। ’র’ এর সাথে যোগাযোগ আছে এমন অফিসারগণ বাংলাদেশের বিভিন্ন দুতাবাসে চাকুরীরত আছেন, তাদেরকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় জে: এরশাদের মতো কোন জেনারেল ক্ষমতা দখলের পায়তারা করতে পারে। ভারতের দালাল জি এম কাদের ২০২৩ সালের ২৩ আগষ্ট ভারত সফর করে এসে সাংবাদিকদের সামনে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিল, ভারতের অনুমতি ছাড়া মোদির সাথে গোপন চুক্তির কিছুই বলবে না। জি. এম কাদের, রওশন এরশাদ, মশিউর রহমান রাঙ্গা. মজিবুল হক চুন্নু, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদার প্রমুখ পতিত স্বৈরশাসকের সহযোগী তাদেরকে গ্রেফতার করে ভারতের দালাল নির্মূল করতে হবে। শেখ হাসিনার আয়না ঘরের নিরব স্বাক্ষী ইনু মেনন দ্বিলীপ বড়ুয়া এবং ১৪ দল একইসুত্রে গাতা। এরা দেশ ও জাতির দুশমন এবং র এর এজেন্ট । জাতীয় পাটি ’র’ এর পরিকল্লনা মোতাবেক বি-টিম হিসেবে ১৫ বছর ফ্যাসিবাদী শাসন টিকিয়ে রেখেছিল। জাতীয় পাটির সকল নেতাদের গ্রেফতার করতে হবে। কাদের সিদ্দিকীও ’র’ এর এজেন্ট। ড. মোহাম্মদ ইউনুস এর উচিত ভারতের এদেশিয় এজেন্টদের এজেন্টদের তালিকা তৈরী করে ফলোয়াপ করা।
আওয়ামী লীগকে বিচারের সম্মুখীন না করে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। হাসনাত বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যতদিন পর্যন্ত মাফ না চায়, যতদিন পর্যন্ত তাদের অপকর্মের জন্য বিচারের সম্মুখীন না হয়, ততদিন তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হবে না।’ছাত্র-আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘ফ্যাসিস্টদের দোসরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে এই সরকারকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।’ রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। এতে সারজিস আলম বলেন ‘আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিতকরণ, নতুন সংবিধান গঠন, আওয়ামী দুর্নীতিবাজ আমলাদের পরিবর্তন, হাসিনার আমলে করা সকল অবৈধ চুক্তি বাতিল এবং চুপ্পুকে অনতিবিলম্বে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অপসারণ করতে হবে।
আ.লীগকে নির্বাচনে বাধা ও নিষিদ্ধের পক্ষে নন মির্জা ফখরুল (৩রা অক্টোবর ২০২৪ দৈনিক যুগান্তর) ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যান ভারত। এ অভ্যুত্থানে দেড় হাজারেরও বেশি ছাত্র-জনতা প্রাণ হারিয়েছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগ ও তাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ১৪ দল নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে সর্বমহল থেকে। তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনে করছেন, আওয়ামী লীগকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে বাধা দেওয়া বা ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ করা উচিত নয়, কারণ উভয় কর্মকাণ্ডই গণতান্ত্রিক চর্চাকে দুর্বল করবে। ফখরুল বলেন, ‘আমরা যদি সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র চাই তাহলে আওয়ামী লীগকে নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়া হবে কেন? আওয়ামী লীগের মতো পুরনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে জনগণকে তাদের ভাগ্য নির্ধারণের সুযোগ দেওয়া উচিত।’ রাষ্ট্রপতি অপসারণে হঠকারী সিদ্ধান্ত না নেওয়ার আহবান মির্জা ফখরুলের (২৭ অক্টোবর ২০২৪ দৈনিক প্রথম আলো) রাষ্ট্রপতির পদ থেকে মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণ ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারকে হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ভারতীয় ’র’ এর পেসকিপসন মোতাবেক বিএনপির সিনিয়র নেতারা সংবিধানের দোয়াই দিয়ে ফ্যাসিবাদী দানবদের পুর্নবাসনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বৈসম্যবিরোধী ছাত্রজনতা এবং দেশপ্রেমিক নাগরিকদের বুঝতে হবে কেন বিএনপি মহাসচিব সংবিধানের দোয়াই দিয়ে প্রেসিডেন্টের অপসারণে বাধা দিচ্ছে। রাষ্ট্রের উঁচু পদে থেকে প্রেসিডেন্টের পক্ষ নিয়ে সংবিধানের দোয়াই দিচ্ছে তাদের তালিকা তৈরি করতে হবে। ওদের ভুল সিদ্ধান্তের কারনে ১৯৮২ সালে জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখল করেছে এবং ২০০৭ সালে জেনারেল মঈন ১/১১ ঘটিয়েছে। ওরা অন্তরালে ফ্যাসিবাদের দোসর, দেশ জাতি গণতন্ত্র এবং দেশপ্রেমিক নাগরিকদের শত্রু। ৩৬ জুলাইয়ের বিপ্লব সংবিধান মেনে হয়নি। দেশপ্রেমিক ছাত্রদের আন্দোলনের ফসল জুলাই বিপ্লব। বিপ্লব টিকিয়ে রাখতে হলে প্রেসিডেন্টকে বিদায় দিতে হবে।
৩৬ জুলাই দ্বিতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধে ১৫০০জন শহীদের আত্বার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অবিলম্বে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন দিন। ছাত্রদের অংশগ্রহণমুলক নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে মেধাবী ছাত্রদের নিয়ে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করুন। এম.এ পাশ চেয়ারম্যান এবং বি.এ পাশ মেম্বার পদে শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক করুন। জনসাধারণ নির্ভয়ে ভোট ডাকাতি প্রতিরোধ করে সুষ্ঠ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে। দুনীতি লুটপাটমুক্ত লিডারশীপ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গড়ে উঠবে। পৃথিবীর প্রায় ১০০টি দেশ এই আনুপাতিক ভোটের নির্বাচন বা প্রোপরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতি অনুসরণ করে সুফল পেয়েছে, পাচ্ছে এবং এটিকেই সর্বাধুনিক ও সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য গণতন্ত্র বলা হচ্ছে। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত পার্লামেন্টে একটা ইতিবাচক ভারসাম্য থাকবে, যা সরকারেও প্রতিফলিত হবে। সরকারী দল চাইলেই হুটহাট নিজেদের সুবিধার জন্য যা খুশি আইন পাস করে ফেলতে পারবে না । এ ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন সরকারের ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠার আশঙ্কা একদমই কমে যাবে। জুলাই বিপ্লবের এটাই মূল লক্ষ্য, দেশে এমন একটা ব্যবস্থার প্রবর্তন করা, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ফ্যাসিস্ট তৈরি হতে না পারে। ড. ইউনুস আপনার আন্তর্জাতিক কুটনীতির মাধ্যমে আপনি প্রমান করেছেন আপনি একজন জাতীয়তাবাদী নেতা। ভারতের রক্ষচক্ষু উপেক্ষা করে আপনি চীন সফর করেছেন। রমজানে খাদ্যদ্রব্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি রোধ করে ১৮ কোট মানুষের মুখে হাসি ফুঁটিয়েছেন। আপনি এগিয়ে যান আপনার সাথে দেশ প্রেমিক রাজনৈতিক দল আছে, সেনাবাহিনী আছে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা আছে।
লেখক : গবেষক ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ।