নাজমুল হক
৩৬ জুলাই শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পালিয়ে হওয়ার পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অর্ন্তবর্তী সরকার ১০০ দিন অতিবাহিত করেছে। ফ্যসিবাদমুক্ত দ্বিতীয় স্বাধীন বাংলাদেশে গঠিত সরকারের প্রতি তখন সাধারণ মানুষকে সমর্থন দিতে যেমন দেখা গিয়েছিল, তেমন প্রত্যাশাও ছিল বিপুল। সরকারের পক্ষ থেকেও আইনশৃঙ্খলা, দ্রব্যমূল্য, অর্থনীতি, নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে দ্রুত পরিবর্তন আনাসহ নানান প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিন মাস পর এসে দেখা যাচ্ছে উপদেষ্ঠাদের মধ্যে বয়োবৃদ্ধ উপদেষ্ঠা এবং বিগত সরকারের দালাল আমলা ও পুলিশ বাহিনীর কারণে সরকারের পক্ষ থেকে দেশবাসীকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতির মধ্যে অনেকগুলোতেই তেমন কোনো অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না, যা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে। “বিশেষত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকার কার্যকর কোনো ভূমিকাই রাখতে পারেনি। ‘র’ এর পরিকল্পনা মোতাবেক ফ্যাসিবাদ বামদের ঘাড়ে ভরকরে বিপ্লব নস্যাৎ করার জন্য জা. বি তে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বৈসম্য বিরোধী ছাত্রদেরকে দেশপ্রেমিক নাগরিকদের নিয়ে ফ্যাসিবাদের ষড়যন্ত্র রুখতে হবে। জুলাই বিপ্লবের ৯০ দিন! আগুন সন্ত্রাস, আয়নাঘর, গুমের আতংক নেই। জংগী দমনের নামে মাদ্রাসা ছাত্র হত্যা নেই। হেলমেট বাহিনীর অশান্তি মিছিল নেই। হাউন আংকেলের ভাতঘর নেই। উন্নয়নের নামে চেতনা বিক্রি গত ১৬ বছরে ৯৩ বিলিয়ন ডলার পাচার। আজকে দেশটা দেউলিয়া ঘোষণার পথে। সালমান এফ রহমান ৩৬,০০০ কোটি টাকা রাষ্ট্রের মদদে লুটপাট করেছে। ফ্যাসিবাদের দোসরদের চেতনায় কোন প্রতিবাদ দেখিনি। ওদের চেতনাটা কি? স্বাস্থ্য উপদেষ্টা জনাব নুরজাহান বেগম পঙ্গু হাসপাতালের তৃতীয় তলায় এবং জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন জুলাই বিপ্লবে আহত ব্যক্তিদের দেখতে যান নাই। উপদেষ্টা ক্ষমতাসীন হয়ে আহত বিপ্লবীদের দেখতে ৩ মাস পর হাসপাতালে পরিদর্শনে এসেছেন। যাহা তার দ্বয়িত্বে অবহেলা প্রদশনের শামিল। রাজধানী ঢাকায় জুলাই বিপ্লবে আহতদের দেখতে আসতে যদি স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ৯০ দিন সময় লাগে, তাহলে নাগরিকদের বুঝতে বাকী নেই যে, এই উপদেষ্ঠা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বসে বসে কি দ্বায়িত্ব পালন করেন এবং স্বাস্থ্য মহাপরিচালক কি করছেন। কোন অযোগ্য ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের উচুঁ পদে বসালে দেশ ও জাতীর ১২ টা বাজা ছাড়া কোন উপায় নেই। তার প্রমাণ এই অযোগ্য স্বাস্থ্য উপদেষ্টা জনাব নুরজাহান বেগম। ঢাকায় আহত বিপ্লবীদের চিকিৎসার যদি এ হাল হয়, তাহলে জেলায় জেলায় আহতদের অবস্থা আরও শোচনীয়। ড. মোহাম্মদ ইউনুস স্যারের উচিত সারাদেশে সিভিল সাজনরা জুলাই বিপ্লবে আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করছে কিনা একটি তদন্ত কমিশন অথবা সেনাবাহিনীর চিকিৎসা কোরের মাধ্যমে তদন্ত করে বিপ্লবীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং দোষীদের শাস্তি দেওয়া। অবিলম্বে স্বাস্থ্য উপদেষ্টাসহ বয়োবৃদ্ধ অযোগ্য এবং দায়িত্বে অবহেলা প্রদশনকারী উপদেষ্ঠাদের পদত্যাগ চাই।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ : ফ্যাসিবাদী পলাতক হাসিনা সরকার অসাধু এবং সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কাছে বাজারব্যবস্থা তুলে দিয়ে বিগত ১৫ বছর দেশে লুটপাটতন্ত্র কায়েম করেছে। যার প্রমান প্রতি কেজি ২০ টাকার আলু ৭০ টাকা। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অর্ন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর যে কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখে অর্ন্তবর্তী সরকার পড়েছে, সেগুলোর একটি হলো নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ। দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে না রাখতে পারায় আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি ১৫ বছর মানুষের বড় ধরনের ক্ষোভ জন্মেছিল। অগাস্টে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর মানুষের প্রত্যাশা ছিল, বাজারে পণ্যের দাম কমবে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। “বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। জিনিসপত্রের দাম তো কমেইনি, বরং সবকিছুর দাম আরও বেড়ে গেছে। ঢাকা শহরে যাদের মাসিক বেতন ১৫,০০০ টাকা তাদের বাসাভাড়া গ্যাস, বিদ্যুৎ বিল, ও্ষধ খরচ ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া ও বাজার খরচ চালাতে গিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে । বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ হয়েছিল। এমনকি তেল, চিনিসহ আমদানি করা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্কহার কমিয়েও দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পারছে না সরকার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব বলছে, অক্টোবরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। গত তিন মাসে, অর্থাৎ অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি। অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতিও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশে ( বিবিসি বাংলা)। গত তিন মাসে সরকার কোনোভাবেই দ্রব্যমূল্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয় নাই। দ্রব্যমূল্য যে সহনীয় পর্যায়ে নেই, সেটি সরকারও স্বীকার করছে। সাংবাদিকদের নবনিযুক্ত খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, “আমি মধ্যবিত্ত, নিজে বাজার করে খাই। আমি নিজেও মূল্যস্ফীতির কারণে চাপে আছি,”।
আইনশ্ঙ্খৃলা : বিগত ১৫ বছর ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা পুলিশ বাহিনীকে সরকারের পেটুয়াবাহিনী এবং বিরোধীদল দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১০০ দিনে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে । পাঁচই অগাস্টের পর মাঠে পুলিশের অনুপস্থিতি ও পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অপরাধ প্রবণতা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পায়। ছিনতাই, ডাকাতি ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ঢাকাসহ সারা দেশে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়, যা এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। ঢাকার মধ্যে মোহাম্মদপুর এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি সবচেয়ে আলোচিত হয়েছে। সেখানে প্রকাশ্যে গণছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, সশস্ত্র মহড়া এবং বিহারি ক্যাম্পে খুনোখুনির ঘটনাও ঘটতে দেখা গেছে। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে সেভাবে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায়নি। আবার এটাও বাস্তবতা যে, পাঁচই অগাস্টের পর হামলার শিকার পুলিশ ফাঁড়ি ও থানাগুলোর সবক’টি এখনো পুরোপুরি গুছিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। এছাড়া ছাত্র আন্দোলন দমনে নিজেদের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার কারণে পুলিশ বাহিনী যে ভাবমূর্তির সংকটে পড়েছিল, সেটিও কাটিয়ে ওঠা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত সেপ্টেম্বরে সেনাবাহিনীকে বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়ে মাঠে নামায় নতুন সরকার। এদিকে, গত তিন মাসে গণপিটুনিতে সারা দেশে অন্তত ৬৮ জন মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র। একই সময়ে, কমপক্ষে ৭৮টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলেও জানায় সংস্থাটি। সব মিলিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতটা সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে, সেই প্রশ্ন উঠছে। সচিবালয়ে আনসার বিদ্রোহ, আমলাদের হাতাহাতি, পুলিশের নিরব ধমঘট, শাহবাগে ইসকনদের হুকমি, ভারতের ষড়যন্ত্র, আইন শৃংখলার অবনতি, ট্রাফিক জ্যাম, বিভিন্ন দাবীতে প্রধান উপদেষ্টাকে অবরোধ ইত্যাদি মোকাবিলার জন্য সরকার পুলিশ বাহিনীতে রদবদল করেছে। নতুন আইজিপি এবং ডিএমপি কমিশনার কি করে দেখার বিষয়।
আহতদের চিকিৎসা : আন্দোলন চলাকালে সারাদেশে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই হাত, পা এবং চোখ হারিয়েছেন। আবার পঙ্গুত্বও বরণ করেছেন অসংখ্য মানুষ। ক্ষমতা গ্রহণের পর ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ গঠন করে নিহতদের পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি আহতদের ‘সুচিকিৎসা’র ব্যবস্থার কথা বলেছিলো সরকার। কিন্তু তিন মাস পর এখন ‘সুচিকিৎসা’র দাবিতে আহতদের বিক্ষোভ করতে দেখা যাচ্ছে। “ডাক্তার বলেছে, আমার পেটের মধ্যে গুলি, চিকিৎসা ছাড়া উপায় নাই। আমার পরিবার ধার-দেনা করে এতদিন চিকিৎসা চালিয়েছে। এখন তাদের পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না। অথচ সরকার ফ্রি চিকিৎসার কথা বলে একবার খোঁজও নেয়নি,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন গুলিতে আহত রাইসুল ইসলাম। তবে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে যে, তালিকা চূড়ান্তের পরও অর্থছাড়ের প্রক্রিয়ায় কিছুটা দেরি হচ্ছে। “সমস্যাটা হলো প্রসেসিং-এর জায়গাতে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’র সাধারণ সম্পাদক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা জনাব নুরজাহান বেগম পঙ্গু হাসপাতালের তৃতীয় তলায় এবং জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন জুলাই বিপ্লবে আহত ব্যক্তিদের দেখতে যান নাই। উপদেষ্টা ক্ষমতাসীন হয়ে আহত বিপ্লবীদের দেখতে ৩ মাস পর হাসপাতালে পরিদর্শনে এসেছেন। যাহা তার দ্বয়িত্বে অবহেলা প্রদশনের শামিল। রাজধানী ঢাকায় জুলাই বিপ্লবে আহতদের দেখতে আসতে যদি স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ৯০ দিন সময় লাগে, তাহলে নাগরিকদের বুঝতে বাকী নেই যে, এই উপদেষ্ঠা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বসে বসে কি দ্বায়িত্ব পালন করেন। অনতিবিলম্বে স্বাস্থ্য উপদেষ্ঠার পদত্যাগ চাই।
জুলাই গণহত্যার’ বিচার : ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অর্ন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যে কাজটি সম্পন্ন করার কথা বলে আসছে, সেটি হলো- জুলাই-অগাস্টের ‘গণহত্যার’ বিচার। অন্তর্র্বতী সরকারের প্রাথমিক তালিকা অনুযায়ী, আন্দোলন চলাকালে তিন সপ্তাহে ১,৪৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই মারা গেছেন গুলিতে। এটা মানবতাবিরোধী অপরাধ। জুলাই হত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই কয়েকশ মামলা হয়েছে, পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। ‘গণহত্যার’ মামলার বিচার কাজ শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। শেখ হাসিনাসহ ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ, তাদের জোটসঙ্গীসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেফতারে রেড অ্যালার্ট জারির জন্য আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে সম্প্রতি অনুরোধও জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলির কার্যালয়। পলাতক শেখ হাসিনা যেহেতু মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠনের অভিযোগে অভিযুক্ত। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা পেন্ডিং আছে। কিন্তু বাংলাদেশের জুরিসডিকশনের বাইরে তিনি চলে গেছেন, সে কারণে ইন্টারপোল যাতে তাকে গ্রেফতারে করার ব্যবস্থা নেয় এবং তার ব্যাপারে অন্তত রেড অ্যালার্ট জারি করে, সেই ব্যাপারে আমরা অনুরোধ পাঠিয়েছি,” বলছিলেন ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। অভিযুক্ত রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতারে তোড়জোড় দেখা গেলেও বাকি আসামিদের ক্ষেত্রে তেমনটি দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন মামলার বাদীরা। “আমরা মামলা করেছি আগস্ট মাসে, কিন্তু সেটার অগ্রগতি কী? এখনও তো চার্জশিটই দেওয়া হলো না,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন নিহত ইমাম হাসানের বড় ভাই রবিউল আউয়াল। “যারা গুলি চালিয়েছে, পুলিশের সেসব সদস্যদের সবাইকে এখনও শনাক্ত করা হয়নি কেন? কেন সবাইকে আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচারকাজ শুরু করা হচ্ছে না,” ক্ষোভ প্রকাশ করেন মি. আউয়াল। প্রধান বিচারপতি খাইরুল হক, বিচারপতি শামসুদ্দীন মানিকসহ তত্তাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেশে স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য যে নির্বাচন কমিশনার ও আমলা ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ ভোটারবিহিন সংসদ নির্বাচন করেছে, সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র হয়েছে তাদেরকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা।
রাষ্ট্র সংস্কার : ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অর্ন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সরকারের পক্ষ থেকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে দেখা গেছে রাষ্ট্র সংস্কার। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণেও ড. মহাম্মদ ইউনূসকে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে দেখা গেছে । গত ২৫শে অগাস্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “জনস্বার্থের বিপরীতমুখী এক কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে আমাদের দেশ পুনর্গঠনের কাজে হাত দিতে হয়েছে। আমরা এখান থেকেই বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়তে চাই যেন এ দেশে জনগণই সত্যিকার অর্থে সব ক্ষমতার উৎস হয়,” তিনি আরও বলেন, “তরুণ প্রজন্ম, শিক্ষার্থী ও জনতার আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাতে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজে সফল আমাদের হতেই হবে। এর আর কোনও বিকল্প নেই।” গণঅভ্যুত্থানের এক মাসের মাথায় সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন ও জনপ্রশাসন সংস্কারে ছয়টি আলাদা কমিশন গঠন করে সরকার। পরবর্তীতে স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্কার কমিশন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন, শ্রমিক অধিকার বিষয়ক সংস্কার কমিশন এবং নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। আগামী ডিসেম্বরের শেষে তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সংস্কারকাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছে সরকার। “শেখ হাসিনার পতনের পর মানুষ দ্রুত কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন দেখার অপেক্ষায় ছিল, কিন্তু সরকার তাদের সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেনি। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দলবাজ পরাজিত স্বৈরশাসকের দোসর ভিসিদের অব্যাহতি দিয়ে যাদের ৪টি প্রথম শ্রেণী এবং পিএইচডি আছে এমন গবেষক, প্রফেশনার শিক্ষকদের ভিসি, প্রেভিসি, প্রক্টর, প্রভোষ্ট, হাউজ টিউটর এবং শিক্ষামন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দান করা। যে সকল অধ্যাপকের এমফিল, পিএইচডি ডিগ্রী নেই তাদেরকে অধ্যাপক পদ বাতিল করে সহয়োগী অধ্যাপক পদে পদায়ন করা এবং প্রফেসর পদে যে সকল বেতন ভাতা গ্রহণ করেছে তাহা রাস্ট্রীয় কোষাগারে জমার ব্যবস্থা করা। এসোসিয়েট প্রফেসর হতে হলে পিএইচডি ডিগ্রি থাকতে হবে এই নিয়ম বাধ্যতামূলক করা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা সেনাবাহিনীর মাধ্যমে তৈরী করা এবং গরীব শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের পুন:বাসনের ব্যবস্থা করা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে এবং দেশের ভিতরে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছে, সেনাবাহিনীর মাধ্যমে তালিকা তৈরী করা এবং গরীব মুক্তিযোদ্ধাদের পুন:বাসনের ব্যবস্থা করা। যাহারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সাটিফিকেট গ্রহণ করেছে এবং চাকুরী, প্রমোশন, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা গ্রহণ করেছে তাদের বিরোদ্ধে দেশের আইন অনুযায়ী শাস্তি ও জরিমানার ব্যবস্থা গ্রহণ করা, এবং যে সকল বেতন ভাতা গ্রহণ করেছে তাহা রাস্ট্রীয় কোষাগারে জমার ব্যবস্থা করা। সরকারী বিভিন্ন পদে এবং বিসিএস পরীক্ষায় পিএসসি ড্রাইভার তালেব আলী থেকে প্রশ্নপত্র ক্রয় করে প্রশাসনের উচ্চ পদে নিয়োজিত আছে তাদেরকে চাকুরীচ্যুত করা এবং যে সকল বেতন ভাতা গ্রহণ করেছে তাহা রাস্ট্রীয় কোষাগারে জমার ব্যবস্থা করা। শুক্তবার এবং শনিবার বন্ধের দিন আমলাদের সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার বন্ধ চাই।
পুলিশ বাহিনী, সোয়াত বাহিনী, বিজিবি এবং র্যাব সদস্য বিরোধী দলের সদস্য এবং ছাত্রদের প্রকাশ্য দিবালোকে জংগী রাজাকার স্বাধীনতা বিরোধী বলে গুলি করে হত্যা করেছে, তাদেরকে চাকুরীচ্যুত করা এবং বিশেষ ট্রাইবুনালে বিচারের করা। পুলিশ বাহিনী, র্যাব বাহিনী, ডিজিএফআই, বিজিবি কে দেশপ্রেমিক বাহিনী হিসেবে পুনগঠন করা। নতুন প্রজন্ম থেকে ১০০,০০০ পুলিশ বাহিনীর সদস্য নিয়োগ দেওয়া। পুলিশের বিকল্প হিসেনে প্রশিক্ষিত এবং দক্ষ আনসার বাহিনী তৈরি করা। যে সকল সামরিক ও বেসামরিক আমলা দেশপ্রেমিক নাগরিকদেরকে আয়নাঘরে গুম এবং হত্যা করেছে তাদেরকে খঁজে বের করে বিচারের ব্যবস্থা করা। পুলিশ বাহিনী ১৫ বছর স্বৈরাচারের পেটোয়া বাহিনী ছিলো। প্রতিটি থানা হবে রাস্ট্রের ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেবাকেন্দ্র। পুলিশ ও বেসামরিক আমলার দুনীতি লুটপাট এর সম্পদ খুঁজে বের করে বাজেয়াপ্ত করা। রাস্ট্রয়ভাবে ৫ আগষ্ট কে দ্বিতীয় স্বাধীনতা দিবস পালন করা এবং সংবিধানের অংশ করে নেওয়া। ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস চালু করা। সংবিধানে বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, আল্লাহর উপর পুন আস্তা ও বিশ্বাস সংযোজন করা। স্বৈরশাসকের আয়নার ঘর এবং ডিবি অফিসের রাস্ট্রীয় নিযাতন বন্ধ করা। আয়নার ঘরের মাস্টার মাইন্ড সামরিক বেসামরিক এবং রাজনৈতিক দলের লিডারদের খুঁজে বের করা এবং আইনের আওতায় নিয়ে আসা। স্বৈরশাসকের গুমের শিকার সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াছ আলীসহ সারাদেশে গুম ও নিহতদের তালিকা তৈরী করে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা। সারাদেশে ৪৫০,০০০ মসজিদের ইমামকে বেতনভুক্ত করা এবং প্রতিটি মসজিদে এবতেদায়ী মাদ্রাসা চালু করা। মসজিদকে সমাজসেবা এবং মহল্লার সলিশী আদালত হিসেবে ঘোষনা করা। হেলমেট বাহিনী, চাদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী লুটপাটকারী, দখলদার অগ্নিসংযোগকারীর তালিকা তৈরী করে বিচারের ব্যবস্থা করা। মেট্রোরেল পদ্মা সেতু উড়ালপথ রেলপথসহ বড় বড় প্রকল্পে দুনীতি লুটপাট তদন্ত করে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা। বীর শহীদ ১,৪৫০ ছাত্রদের স্মৃতি রক্ষার জন্য তাদের নামে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, রাস্তা, ব্রিজ, চত্ত্বর এর নাম দেওয়া। তাদের পরিবারকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা এবং প্রতিটি পরিবার থেকে যোগ্যতা অনুসারে চাকুরীর ব্যবস্থা করা। স্বাধীন বাংলাদেশের উপযোগী দেশপ্রেমিক আমলা এবং সরকারী চাকুরীজীবিদেন নিয়ে স্থানীয় সরকার প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা, ব্যাংক, বিমা, রেগুলেটরী অথরিটি, অধিদপ্তর, পিএসসি, বিজিবি পুলিশ এবং আনসার বাহিনীকে ঢেলে সাজাতে হবে। হাটবাজার, বাস ট্রাক টামিনাল, স্থলবন্দর, নৌবন্দর, পৌরসভা এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকায় চাঁদাবাজি ও হামলা লুটপাট বন্ধ করা। বাসের সবনিম্ন ভাড়া ৫/-টাকা করা এবং শুক্র এবং শনিবারও ছাত্রদের জন্য ২৪ ঘন্টা লোকাল বাসে হাফভাড়া চালু করা। দ্রব্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির জন্য বাজার নিয়ন্ত্রণ কমিশিন গঠন করা। উৎপাদন অথবা আমদানীর স্থান থেকে ১০০ কি:মি পরপর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মূল্যতালিকা ঝুলিয়ে দিয়ে খাদ্যদ্রব্যের বাজার জনগনের জন্য ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা। আলীয়া মাদ্রাসা এবং কওমী মাদ্রাসার জন্য একটি আধুনিক এবং বিজ্ঞান ভিত্তিক একমুখী এবং মিশরের আল আজাহার বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ইসলামী শিক্ষা চালূ করা। শিক্ষাংগন থেকে ছাত্র রাজনীতি ৫ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা। মেধার ভিত্তিতে হলে সিট বন্টন করা। আধুনিক বিশ্বের উপযোগী বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষা নীতি চালু করা। রাষ্ট্রীয় অর্থে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের নামে মনগড়া গল্পের বইগুলো বাজেয়াপ্ত করে দ্বিতীয় বিপ্লবের ইতিহাসভিত্তিক বই লিখা। ধনী ও গরীবের ব্যবধান কমিয়ে আনা। সহজ শর্তে উদ্যোক্তা ভিত্তিক ব্যাংক লোন চালু করা। সকল ভাতা বাতিল করে উদ্যোক্তা তৈরির জন্য পুন:বাসন প্রকল্প চালু করা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দেশ ও বিদেশের উপযোগী দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি করার জন্য কারিকুলাম এবং সিলেবাস প্রণয়ন করা। বাংলা, আরবী, ইংরেজী ভাষা শিখা বাধ্যতামূলক করা।ভারত থেকে স্থল বন্দর, সমুদ্র বন্দর, সড়ক পথ, রেলপথ আকাশ পথ ব্যবহারের সকল বকেয়া টেক্স আদায় করা। সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা। সীমান্তে অতীতে বাংলাদেশীদের হত্যার ক্ষতিপূরণ আদায় করা।
সংসদ নির্বাচনের অগ্রগতি : বাংলাদেশে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অর্ন্তবর্তী সরকার। এ লক্ষ্যে গত অক্টোবরে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটিও গঠন করা হয়েছে, যার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকার নির্বাচনমুখী যাত্রা শুরু করেছে বলে জানা যাচ্ছে। সরকার বলছে, গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন দেওয়া হবে। “এটি একটি প্রতিশ্রুতি, যা আমরা দিয়েছি। আমরা প্রস্তুত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাচন দেবো,” বার্তা সংস্থা এএফপিকে সম্প্রতি বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। কিন্তু সংস্কার শেষ হতে কতদিন লাগবে, সেটি এখনও স্পষ্ট নয়। “সংস্কারের গতিই ঠিক করে দেবে, নির্বাচন কত দ্রুত হবে,” বলেন অধ্যাপক ইউনূস। যদিও ক্ষমতা গ্রহণের পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা আগে বলেছিলেন, “কখন নির্বাচন হবে, সেটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়।” সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কারের পর নির্বাচনের কথা বলা হলেও বিএনপি চাচ্ছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে ভোট হোক। “নির্বাচন যত দ্রুত হবে, ততই জাতির জন্য মঙ্গল হবে। সংস্কার প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ জরুরি। সেজন্যই নির্বাচনের দরকার, “সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে বলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীন। একই সঙ্গে আরও চার কমিশনারকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কমিশনার হিসেবে যাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁরা হলেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাসুদ, সাবেক যুগ্ম সচিব তাহমিদা আহমদ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। এখন দেখার বিষয় নির্বাচন কমিশনা কি করে। মেধাবীদের ছাত্রদের ভবিষ্যত লিডার হিসেবে সুয়োগ দেওয়ার জ্ন্য আগামী তিন মাসের মধ্যে অরাজনৈতিক এবং নিরপেক্ষভাবে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
গণঅভ্যুত্থানে আহতদের ‘চিকিৎসার দাবিতে’ আন্দোলন : জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতরা ‘চিকিৎসার দাবিতে’ আন্দোলনে নামায় এবার বাংলাদেশের অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গতকাল বুধবার ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু হাসপাতাল) এবং জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও তাদের স্বজনরা দুপুর একটা থেকে রাত প্রায় আড়াইটা পর্যন্ত, প্রায় সাড়ে ১৩ ঘণ্টা হাসপাতাল থেকে বিছানাপত্র এনে সড়কে অবস্থান করেছিলেন।ওই রোগীদের কারও কারও পা ছিল না, কেউ কেউ তাদের চোখ হারিয়েছেন। অনেকের ক্ষত এখনও শুকায়নি। তারপরও তারা ‘সুচিকিৎসা’র দাবিতে বিক্ষোভ চালিয়ে গেছেন। । বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ আবার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগানও দিয়েছেন। আহতদের প্রধান অভিযোগ, তারা তিন মাস ধরে হাসপাতালে থাকলেও সরকার তাদের খোঁজ নেয়নি। সেইসাথে, আর্থিক সহায়তা হিসাবে যে এক লক্ষ টাকা পাওয়ার কথা ছিল, তাও তারা পাননি। হাসপাতালে ভর্তি থাকলে চিকিৎসা খরচ বাদে আনুষঙ্গিক আরও অনেক খরচ করতে হয় রোগীর পরিবারকে। অনেকেই বলেছেন, তাদের পরিবার সেই খরচের ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠনের তিন মাস হয়ে গেল। তারপরও আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত, আহতদের মাঝে এত ক্ষোভ বা অভিযোগ কেন? বিবিসি বাংলা এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’– এর সাধারণ সম্পাদক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলমের কাছে। তিনি বলেন, “ওনারা-আমরা আলাদা পক্ষ না। দুইটা এক পক্ষ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো- ওনাদের সুচিকিৎসার জন্য, বাইরে পাঠানোর জন্য যে ফান্ড প্রয়োজন; তার অভাব হবে না,” তার মতে, তথ্য হালনাগাদ সংক্রান্ত কিছু জটিলতা ছিল এতদিন। কিন্তু “এখন সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মিলে সেল গঠন করা হয়েছে; জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে করা প্রাথমিক লিস্ট এমআইএসে আছে। পরে নতুন তথ্য দেওয়া হয় নাই।” সারজিস আলম জানান, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সারাদেশে ২৪ হাজারের মতো আহত আছেন। তবে গ্রামে বা প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেকের তথ্য এখানে যোগ হয়নি। সেক্ষেত্রে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।
ড. মোহাম্মদ ইউনুস ক্ষমতা গ্রহণের তিন মাসপূর্তিতে সম্প্রতি নিজেদের বিভিন্ন কাজের অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অন্তর্র্বতী সরকার। সরকার মনে করে যে, ক্ষমতায় বসার প্রথম তিন মাসে তারা প্রশাসনিক ক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণভাবে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। একইভাবে, দেশের ভঙ্গুর অবস্থা থেকে অর্থনীতি বেশ খানিকটা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে। এর বাইরে, সংস্কার কাজ পরিচালনায় ব্যাপকভাবে বিদেশি আর্থিক সহায়তা পাওয়া, সংস্কারের রূপরেখা ঘোষণা এবং বন্যা মোকাবিলার পাশাপাশি তৈরি পোশাকশিল্পের সংকট ও অস্থিরতা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করা হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তিন মাসে সরকার যথেষ্ট অর্জন করেছে,” সাংবাদিকদের বলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তবে দ্রব্যমূল্য, আইনশ্ঙ্খৃলা, প্রশাসনসহ অনেক ক্ষেত্রেই যে সংকট রয়েছে, সেটি অবশ্য স্বীকার করছেন উপদেষ্টারা। “এত কম সময়ের মধ্যে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন সম্প্রতি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়া উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। “সরকার চেষ্টা করছে এবং ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেটার ফল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে,” বলেন মি. মজুমদার। অবিলম্বে স্বাস্থ্য উপদেষ্টাসহ বয়োবৃদ্ধ অযোগ্য এবং দায়িত্বে অবহেলা প্রদশনকারী উপদেষ্ঠাদের পদত্যাগ চাই।
লেখক : গবেষক ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ।