সদর প্রতিনিধি :
‘আগে প্রতিবছর অন্তত ১০-১৫ দিন আগে থেকে ঈদের আমেজ শুরু হতো। বাবাও মালদ্বীপ থেকে টাকা পাঠাতেন। ঈদ ঘনিয়ে আসলেই অংশীদারদের সঙ্গে বাজার থেকে গরু কিনে নিয়ে আসতাম। বাবাকে গরু ছবি পাঠালে তিনি খুবই খুশি হতেন। কোরবানীর ঈদের দিন মাংস কাটার সময় নিয়ম করে ১১টার দিকে ফোন দিয়ে খোঁজখবর নিতেন। বাবার মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর মা ছিলেন একমাত্র সম্বল। বাবার লাশ বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছলে মাও মারা যান। একইদিনে দুইজনকে হারিয়ে এখন আর মনে ঈদের আনন্দ নেই। আত্মীয়-স্বজনরা কোরবানীর পশু কেনার জন্য বললেও কিনিনি।’
বৃহস্পতিবার ফেনী সদর উপজেলার ফরহাদনগর ইউনিয়নের দক্ষিন চরকালিদাস গ্রামের জামাল উদ্দিন-বিবি খাদিজা দম্পতির বড় ছেলে আজহারুল ইসলাম অন্তর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে এসব কথা বলেন।
দীর্ঘদিন ধরে মালদ্বীপে থাকতেন দক্ষিন চর কালিদাস গ্রামের বাসিন্দা জামাল উদ্দিন (৪৭)। গত ২২ জুন তিনি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। ২৮ জুন রাত ৯টায় তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি পৌঁছে। তার লাশ বাড়ি আনার খবর পেয়ে নির্বাক হয়ে পড়েন স্ত্রী বিবি খাদিজা (৩৭)। পরে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। চোখের সামনে এমন মর্মান্তিক ঘটনা সহ্য করতে না পেরে ঘটনাস্থলে ছেলে আজহারুল ইসলাম অন্তর অসুস্থ হয়ে পড়ে। স্বজনরা তাৎক্ষনিক তাকে ফেনী ডায়াবেটিক হাসপাতালে নিয়ে যায়।
বড় ছেলে আজহারুল ইসলাম অন্তর ফেনী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও ছোট ছেলে আশরাফুল ইসলাম হৃদয় খাইয়ারা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী।
আজহারুল ইসলাম অন্তর ফেনীর সময় কে জানায়, আম্মুর এক মামাতো ভাই প্রবাসী লিটন মামা কোরবানীর জন্য গরু কিনেছেন। সেখান থেকে একটি অংশ আমাদের জন্য দেয়া হবে। গত প্রায় ১৬ বছর ধরে আব্বু প্রবাসে ছিলেন। মাঝখানে ১২ বছর আগে ২৫ দিনের ছুটিতে দেশে এসেছিলেন। আব্বুর সাথে ফোনে কথা হলেও সরাসরি তেমন কোন স্মৃতি নেই। আব্বু-আম্মু দু’জনই মারা যাওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। শেষ বিদায়েও আব্বুকে দেখার সুযোগ হয়নি। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে আম্মুকে বিদায় দিই।
অন্তর আরো জানায়, একজন বাংলাদেশী প্রবাসে মারা গেলে লাশ দেশে আসার পর সরকারের পক্ষ থেকে দাফনের জন্য ৩৫ হাজার টাকা ও পরিবারকে ৩ লাখ টাকা সহায়তা দেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত কোন ধরনের সহায়তা তারা পায়নি। এমন একটি পরিস্থিতির মুখোমুখি হবো সেটি কখনো কল্পনাও করিনি।