fenirshomoy logo black

উপ-সম্পাদকীয়

দখলদার ইসরায়েলী ইয়াহুদী নেতানিয়াহু বাহিনী ইতিহাসের বর্বরতম হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে নিরপরাধ ফিলিস্তিনের জনগণের উপর। এ হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ শুধু গাজা নয়, পূর্ব জেরুজালেম, পশ্চিম তীর, এমনকি ইসরায়েলের ভেতরে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের উপরও। এই ভয়াবহ ধ্বংসযঞ্জের নির্মমতা মানবতার নূন্যতম চিহ্নকেও ভুলুন্ঠিত করেছে। একেরপর এক আশ্রয় শিবির, হাসপাতাল এবং খাদ্য গুদামেও হামলা চালিয়ে অসহায় গাজা ফিলিস্তিনীদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। তবুও অদম্য ইমানী মনোবল নিয়ে গাজা ফিলিস্তিনের উদবাস্তু জনগণ আশায় বুক বেঁধে টিকে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমানে খাদ্যত্রাণবাহী গাড়ী পর্যন্ত গাজায় প্রবেশ করতে দিচ্ছেনা হায়েনা ইসরাইলী বাহিনী। বারবার যুদ্ধবিরতির চুক্তি ভঙ্গ করেছে ইসরায়েল। হামাসকে নিরস্ত্র ও আত্মসমর্পণের সকল চেষ্টার ব্যার্থতায় ভীত সন্ত্রস্ত নেতানিয়াহু ও তার বাহিনী। আজ যদি হামাস আত্মসমর্পণ করতো তবে তা হতো পুরো ফিলিস্তিনি জাতিসত্তার জন্য পরাজয় ও কলংকের। হামাসের ৮০ ভাগ বাঙ্কার এখনো সুরক্ষিত এবং অক্ষত। এমন দাবী বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ মহলের।

গাজার বর্তমান অবস্থা নেতানিয়াহু কর্তৃক ইসরাইলী বাহিনী সৃষ্ট খাদ্য দুর্ভিক্ষের কবলে এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। একে কেউ কেউ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় খোলা বন্দিশিবির বলছেন, কেউ বলছেন নির্মম হত্যাক্ষেত্র। অথচ এর এক ঘণ্টার দূরত্বে তেল আবিব। তেল আবিবের অনেক বাসিন্দা নিশ্চিন্তে আরামে জীবন কাটাচ্ছেন।
১৮ মাসের চলমান যুদ্ধ, দুই মাসের অবরোধের মুখে ক্ষুধায় যন্ত্রণায় নিপতিত জনগোষ্ঠীর সামনে প্রস্তাব ছিল, সব বন্দী মুক্তির বিনিময়ে দেওয়া হবে ৪৫ দিনের খাবার ও পানি। তবে হামাসকে নিরস্ত্র হতে হবে। তার সাথে ছিলো অর্থ ভিত্তের টোপ। কিন্তু সকল চেষ্টার ব্যার্থতায় কার্যত নেতানিয়াহু হতাশ। বিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের অস্ত্র, রসদ উড়িয়ে নেতানিয়াহুর অর্জন আসলে কি? বিশ্লেষকদের মতে ভয় ছাড়া কিছু নয়। কারণ যে কোন মুহূর্তে হামাসের আক্রমণের তাড়ায় সে ভীতসন্ত্রস্ত।

হামাস পাল্টা প্রস্তাব দিয়েছিল, বন্দী মুক্তির বদলে ফিলিস্তিনি বন্দীর মুক্তি দিতে হবে, করতে হবে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি, গাজা শাসনের ভার অন্য দলকে দিতে হবে। কিন্তু দুটি শর্তে হামাস এখনো অটল—তারা নিরস্ত্র হবে না ও ইসরায়েলি বাহিনীর গাজা পুরোপুরি ছাড়তে হবে।

ইসরায়েলি বর্বরতায় রাফা এবং গাজা ধ্বংস হয়ে গিয়ে পুরো ফিলিস্তিনি জাতিসত্তার একটি পবিত্র প্রতীক হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ষাট হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। হামাসের অনেক নেতা এবং বিপ্লবী যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। এটিকে থাকার সংগ্রামে হামাস এখন আগের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী। তাদের মনোবল একটুও টলেনি বরং আরো বেশি দৃঢ় হয়েছে।

আজ আর হামাস আলাদা কোনো সংগঠন নয়। তারা সেই ফিলিস্তিনি জনগণের অংশ, যাঁদের প্রত্যেকে এক বা একাধিক প্রিয়জন হারিয়েছেন। সেই অর্থে এ প্রতিরোধও একটি জাতিগত সংকল্পের অংশ হয়ে গিয়েছে। বর্বরতার যুদ্ধে ইসরায়েল বলপ্রয়োগে ফিলিস্তিনকে চিরতরে শেষ করতে চায়। এর মানে, এ যুদ্ধ এখন প্রত্যেক ফিলিস্তিনির আত্মপরিচয়ের অংশ। তাই ক্ষুধা এবং অকাতর মৃত্যু কোন কিছুই ফিলিস্তিনিদের পূর্ণ স্বাধীনতা ভিন্ন দমিত করতে পারবেনা।

ফিলিস্তিনের জমিন জান্নাতের সুশোভিত বাগান। পৃথিবীর প্রথম কেবলা প্রথম মসজিদ ফিলিস্তিনের জেরুজালেম নগরীতে অবস্থিত। মেরাজ রজনীতে হযরত মুহাম্মদ সাঃ দুনিয়ায় প্রেরিত সকল নবী ও রাসূলদের সমবেত অংশগ্রহনে আল আকসা’র মসজিদে বিশেষ নামাজের ইমাম হিসেবে মর্যাদার স্বক্ষর রেখেছেন। সেখান থেকে আবার বিশেষ বাহন বোরাকে চেপে উর্ধাকাশে ভ্রমণ এবং আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করেছেন। ঐ জমিনে অগণিত নবী রাসূল এবং সাহাবীদের পদদুলি তথা সমাধি আছে। হযরত ইমাম মাহদির আগমন এই দেশেই হবে বলে পবিত্র কোরআনে ভবিষ্যৎ বাণী করা হয়েছে। কাজেই ফিলিস্তিনের জমিন উর্বর ও মর্যাদার জমিন। এখন ফিলিস্তিনে যে যুদ্ধ চলছে তা সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের ইমান পরীক্ষার লড়াই।

একজন ফিলিস্তিনি বলেছেন, সারা বিশ্বের মুসলিম জনগণ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন আর আমরা আদায় করি ছয় ওয়াক্ত। আর সেটি হল শত শত নিহত ফিলিস্তিনির জানাযার নামাজ। ফিলিস্তিনিরা জানে যে কোন মুহুর্তে যে কোন প্রান্তে ইসরাইলী বোমারু বিমানের বোমার আঘাতে উড়ে যেতে পারে তাদের প্রিয় বসত বাড়ি। চির তরে নিভে যেতে পারে জীবন প্রদীপ। তাই মৃত্যু ভয়ে ওরা ভীত নয়। ওদের মায়েরা তাদের প্রিয় সন্তানকে আল্লাহর রাহে জীবন উৎসর্গ করার মন্ত্রে অনুপ্রাণিত করে প্রতিনিয়ত। তাই জীবন উৎসর্গের ওপারে ওরা আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলের সান্নিধ্য এবং জান্নাতকেই যেন দেখতে পায়। এ জন্যই মৃত্যু, ক্ষুধা, ভয় কোন কিছুই ওদের দমাতে পারেনি, পারবেওনা। জয়তু ফিলিস্তিন।

লেখক : চিত্রশিল্পী, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!