দৈনিক ফেনীর সময়

ফেনীতে ভয়াবহ রুপ নিয়েছে পানিবাহিত রোগ, হাসপাতালে ঠাঁই নেই

শহর প্রতিনিধি :

বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির সাথে সাথে ফেনীতে দেখা দিচ্ছে পানিবাহিত নানা রোগ ডায়রিয়া, আমাশা, পেটে ব্যাথা, জ্বর, নিওমোনিয়া ও চর্মরোগ। ফেনী জেলার হাসপাতাল গুলোতে ধারণক্ষমতার প্রায় ১০ গুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকায় চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শয্যা সংকটে মেঝে ও ওয়ার্ডে বাহিরে ফ্লোরে, মাটিতে ও গাছতলায় চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিশু।

সোমবার সরেজমিন ফেনী জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রোগীদের কারও ঠাঁই হয়েছে বারান্দায়, সিঁড়িতে, হাসপাতালের সামনে গাছতলায়। শয্যার সংকটের কারণে ওয়ার্ডগুলোতে পা ফেলার জায়গা নেই। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডে ১৭ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৭৬ জন। আরেকটি ওয়ার্ডে ২১ শয্যার বিপরীতে রোগীর সংখ্যা ৮০ জন। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডেও ২৬ শয্যার বিপরীতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৩৬ জন। অতিরিক্ত রোগীর চাপে হাসপাতাল আঙিনা ও বাহিরে গাছতলায় বিছানা পেতে খোলা আকাশের নিচে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা।

সিভিল সার্জন অফিস সুত্রে জানা যায়, ফেনী জেলার সাতটি হাসপাতালে এপর্যন্ত চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন ৪৭ হাজার ৯৩০ জন। গত ২৪ ঘন্টায় চিকিৎসা নিয়েছেন ১০ হাজার ৭৫৪ জন, এর ভিতর ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ৪৯৮ জন, সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা এ পর্যন্ত ২২৫ জন।

উপজেলা কেন্দ্রিক হিসেবে দেখা যায়, সোনাগাজী উপজেলায় ৬১০ জন, পরশুরাম উপজেলায় ৫৩৬ জন, ফুলগাজী উপজেলায় ৩১৪ জন, ছাগলনাইয়া উপজেলায় ১হাজার ২৭২ জন, দাগনভূঞা উপজেলায় ৬৩০ জন, ফেনী সদর হাসপাতালে ৭৯০ জন বহিঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। এছাড়া হাসপাতাল গুলোতে নতুন ভর্তি হয়েছেন ৫২৪ জন, এর মধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত ১৮৬ জন। বর্তমানে হাসপাতালে অবস্থান করছেন ৯১৩ জন।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. মোহাম্মদ নাজমুল হাসান সাম্মী বলেন, বন্যা পরবর্তী সময়ে ফেনীতে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে বাড়তি ২১ শয্যার আলাদা ডায়রিয়া ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। অতিরিক্ত রোগীর বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে সহযোগিতা চেয়েছি। এসময়ে ফিল্ড হাসপাতাল (তাঁবুর তৈরি অস্থায়ী হাসপাতাল) করা গেলে সেবা দিতে সুবিধা হবে।

সিভিল সার্জন ডা. শিহাব উদ্দিন বলেন, রোগীর চাপ সামলাতে চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনীর সাত এবং পার্শ্ববর্তী বক্ষব্যাধি হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক আনা হয়েছে। প্রতিদিন বহির্বিভাগ ও হাসপাতালে যে পরিমাণ রোগী আসছে, তাদের সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের বসার জায়গা পর্যন্ত নষ্ট হয়ে গেছে। ওষুধ নেই, প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিভাগও বন্ধ। তারপরও আমরা দিনরাত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, জেলায় সরকারিভাবে পাঁচটি মেডিকেল ক্যাম্প ও ২২টি মোবাইল টিম চালু রয়েছে এছাড়াও বেসরকারিভাবে জেলার বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হচ্ছে। সেনাবাহিনীর আটটি মিলিটারি টিম ও ১৩টি সিভিল টিম মেডিকেল ক্যাম্প করেছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!