fenirshomoy logo black

আরিফ আজম :

ফেনীতে এক হাজারের বেশি অটিজম বা অটিস্টিক শিশু-কিশোরদের নিয়ে পরিবারের সদস্যরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। জেলায় সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও সেখানে প্রয়োজনের তুলনায় নেই প্রশিক্ষিত শিক্ষক। শুধু তাই নয়, অটিজম শিশুদের জন্য প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র চালু থাকলেও নির্ধারিত সেবা পাচ্ছেনা তারা। এতে করে যযাযথ চিকিৎসা কিংবা অটিজম কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

দাগনভূঞা উপজেলার পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়নের আমুভূঞার হাট এলাকার বাসিন্দা দুবাই প্রবাসী হারুনুর রশিদের স্ত্রী ফরিদা আক্তার। তিন সন্তানের মধ্যে তার দুই ছেলে-মেয়েই প্রতিবন্ধী। এদের একজন হুমায়ুন রশিদ ও আমেনা আক্তার। ফরিদা আক্তার জানান, তিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে শহরের ডাক্তারপাড়ায় বসবাস করেন। ছেলে হুমায়ুন ও মেয়ে আমেনা কেউ জন্মগত প্রতিবন্ধী নয়। ৫ মাস বয়সে খিঁচুনি দেখা দিলে সেখান থেকে আমেনার শারিরীক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। ১ বছর বয়সে পড়ে পা ভেঙ্গে যায় হুমায়ুনের। পরবর্তীতে নিউমোনিয়া দেখা দিলে শারিরীক নানা প্রতিবন্ধতা দেখা দেয়। অনেক চিকিৎসা করানোর পরও সুস্থ হয়ে উঠেনি। তাদের ভবিষ্যত নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বলে জানান তিনি।

সমাজসেবা বিভাগ সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানায়, ফেনী জেলায় ২৬ হাজার ২শ ৩৩ জন নিবন্ধিত প্রতিবন্ধী রয়েছেন। এর মধ্যে ১ হাজার ৫১ জন অটিস্টিক রয়েছেন। তাদেরকে সরকার নির্ধারিত মাসিক হারে ৮৫০ টাকা ভাতা প্রদান করা হয়। এদের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিকৃত ৪৭৮ জন মাসিক হারে ৭৫০ টাকা থেকে ১৩৫০ টাকা পর্যন্ত শিক্ষা উপবৃত্তির আওতায় রয়েছে। প্রতিবন্ধীদের পূণর্বাসন করতে সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থাও চালু রয়েছে। প্রতিবছর সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জেলায় ২৩ জনকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।

সরেজমিনে জানা গেছে, ১৯৮৭ সালে শহরের মিজান রোডে ফেনী বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। ৮৮ সাল থেকে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে ৯৮ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। এদের জন্য শুধুমাত্র ৪ জন প্রশিক্ষিত ও ১ জন সাধারণ শিক্ষক নিয়োজিত রয়েছেন। অটিজম কিংবা প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য বিএসএড (ব্যাচেলর অব স্পেশাল এডুকেশন) ডিগ্রিধারী হতে হয়।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক জাকারিয়া ফারুক ফেনীর সময় কে জানান, স্কুলটি পরিচালনার জন্য কমপক্ষে ১০ জন শিক্ষকের প্রয়োজন। প্রয়োজনের তুলনায় আসবাবপত্র ও উপকরণের যথেষ্ট পরিমাণ সংকট রয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি জেলা প্রশাসক সহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা কামনা করেন।

জাকারিয়া ফারুক আরো বলেন, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের সামাজিক সম্পর্ক, যোগাযোগ এবং আচরণের ভিন্নতাই সমস্যার প্রধান বিষয়। পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিকভাবে তাদের প্রতি যত্নবান হওয়া খুবই জরুরী।

এদিকে শহরের হাসপাতাল মোড় সংলগ্ন ফেনী টিচার্স ট্রেনিং কলেজের বিপরীতে গড়ে তোলা হয়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান প্রতিবন্ধী সাহায্য কেন্দ্র। সেখানে অটিজম আক্রান্তদের অকুপেশনাল থেরাপী ও স্পীচ থেরাপী দেয়ার কথা থাকলেও জনবল না থাকায় ওই সেবা দেয়া হয়না।

জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্যাহ ফেনীর সময় কে জানান, ২০১৩ সালের ২৪ জুন ফেনীতে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়। এখানে ১৩ জনের পদে কর্মরত রয়েছেন ৯ জন। এর মধ্যে ক্লিনিক্যাল স্পীচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপী ও ক্লিনিক্যাল অকুপেশনাল থেরাপীর পদও শূন্য। ফলে ট্রেনিংপ্রাপ্ত একজন স্পীচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপী দিয়ে থাকেন। প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ জন প্রতিবন্ধী ফিজিওথেরাপী নিয়ে থাকেন।

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী ফেনীর সময় কে জানান, অটিজমে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অটিজম কিংবা অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার শিশু-কিশোর স্নায়বিক বিকাশে সমাজসেবা মন্ত্রণালয় নানা প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পর্যায়ক্রমে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে অটিজম কিংবা প্রতিবন্ধীরা অনেক উপকৃত হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!