নিজস্ব প্রতিনিধি :
শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর থেকে ফেনী জেলার তিনজন সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ, ৬টি উপজেলার ৪২টি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ সব জনপ্রতিনিধিরা লাপাত্তা রয়েছেন। গত ৫ আগস্ট দুপুরের পর থেকে জনপ্রতিনিধি এমনকি আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়নগুলোয় সেবা বন্ধ হয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন হাজার মানুষ। ইতিমধ্যে একটি হত্যা মামলায় ৩ জন উপজেলা চেয়ারম্যান, ২ জন মেয়র, ১৩ জন ইউপি চেয়ারম্যান, ১১ জন পৌর কাউন্সিলর আসামী হয়েছেন। তবে জেলার একমাত্র সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়ন পরিষদে বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান থাকায় সেখানে নিয়মিত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানায়, ৪ আগস্ট মহিপালে ছাত্র-জনতার উপর গুলিবর্ষণে ১১ জন নিহতের ঘটনার পর থেকে জনরোষের ভয়ে জনপ্রতিনিধিরাও গা ঢাকা দিয়েছেন। বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধির অফিস, বাড়িতে হামলা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা ও দুর্বৃত্তরা। সব জনপ্রতিনিধির ব্যক্তিগত মুঠোফোনগুলো বন্ধ রয়েছে। ফলে স্থানীয় সরকার বিভাগের দৈনন্দিন কাজ ও সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। গত সোমবার থেকে জেলার বেশিরভাগ ইউনিয়ন পরিষদ খোলা হয়নি। শুধু সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো: জহিরুল আলম নিয়মিত অফিস করছেন। তিনি ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ইউপি নির্বাচনে জেলাার ৪৩টি ইউপির মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে জয়ী হন উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক এ সাংগঠনিক সম্পাদক।
সোনাগাজী পৌরসভার চর গণেশ এলাকার বাসিন্দা আজিজুল হক বলেন, গত সোমবার থেকে পৌরসভার পরিচ্ছন্নকর্মীরা বাসাবাড়ি থেকে ময়লা নিতে না আসায় প্রতিটি বাসার সামনের ময়লার পাত্রে ময়লা জমে দূর্গন্ধ বের হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিরা না থাকায় বিষয়টা পৌরসভার কয়েকজন কর্মকর্তাকে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। একই সঙ্গে সড়কের বিভিন্নস্থানে ময়লা আর্বজনা পৌরসভার পক্ষ থেকে সরিয়ে না নেওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদেরকে পরিস্কার করতে দেখেছেন। পৌরসভায় গিয়েও কোন ধরনের সেবা মিলছে না।
ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে পৌরসভার পক্ষ থেকে ঝাড়ু না দেওয়ায় সড়কে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা পড়ে আছে। দূর্গন্ধ সৃষ্টি হওয়ায় ময়লাগুলো ঝাড়ু দিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে পরিস্কার করতে দেখা গেছে। কিন্তু বাসা-বাড়ির আঙ্গিনায় পড়ে থাকা ময়লা কেউ নিচ্ছে না। একইসঙ্গে পুলিশের উপস্থিতিও না থাকায় সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে শিক্ষার্থী ও স্কাউটসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা মাঠে কাজ করছে। এজন্য তারা শিক্ষার্থীদেরকে ধন্যবাদ জানান।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের সুজাপুর এলাকার বাসিন্দা নুর হোসেন বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকালে তিনি অনলাইনে আবেদন করা তার সন্তানের জন্ম সনদ নিতে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে যান। পরিষদের সব কক্ষে তালা ঝুলতে দেখে তিনি মোবাইল ফোনে ইউপি সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে ঘন্টাখানে অপেক্ষা করেও কাউকে না পেয়ে বাড়ি ফিরে যান।
নবাবপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো: জহিরুল আলম বলেন, ‘আমার এলাকার জনগণ কঠিন এক পরিস্থিতি মোকাবেলা করে আমাকে ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। তাই আমি সব সময় জনগণকে সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছি।’
এদিকে গত কয়েকদিনে জেলার সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে দপ্তরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি কম লক্ষ্য করা গেছে। থানা-পুলিশও পাঁচদিন পর কর্মস্থলে ফিরেছেন। সড়ক-মহাসড়কে যানজট ও শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় কাজ করছে স্কাউট, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, জনপ্রতিনিধিরা আত্মগোপনে থাকায় জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে প্রতিটি ইউনিয়নের সচিবদের অফিস করতে বলা হয়েছে। অর্ন্তর্বতীকালীন সরকার গঠন হওয়ায় সরকারি নির্দেশনা মতে সব কার্যক্রম পরিচালিত হবে।