সময় রিপোর্ট :
ছাত্র-জনতার তুমুল গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর হাওয়া হয়ে গেছেন ফেনীর সেই দাপুটে নারী নেত্রীরাও। শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনেই নয়, ৫ আগস্টের পর গত ৪ মাস ধরে তাদের দেখা মিলছেনা জনসম্মুখে। সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানও এড়িয়ে চলছেন তারা। অথচ গত সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামীলীগের শাসনামলে রাজনীতিক অঙ্গনে এসব নারী নেত্রীদের দাপট আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতাদেরও ছাড়িয়ে যায়।নানা সময়ে কোন কোন সিনিয়র নেতাদেরও তটস্থ থাকতে দেখা যেতো। এদের মধ্যে সর্বাধিক আলোচনায় ছিলেন লায়লা জেসমিন বড় মনি। তিনি জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের একাধিকবারের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান ছিলেন।
আওয়ামীলীগের আলোচিত-সমালোচিত নিজাম হাজারীর মামী হওয়ায় রাজনৈতিক মাঠে দৌর্দন্ডপ্রতাপে বেড়িয়েছেন। মহিলা আওয়ামীলীগের দায়িত্বে থেকে মূল দলেও প্রভাব বিস্তার করতেন বড় মনি। দলের সভা-সমাবেশ সহ বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে তার জন্য বিশাল আকারের চেয়ার রাখা হতো। তাছাড়া তার ছেলে আবিদ বহুল আলোচিত ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি একরামুল হক একরাম হত্যা মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী। বহুল আলোচিত একরাম হত্যাকান্ডের পর তিনি বেশি আলোচিত হন। দলের সভা-সমাবেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে বক্তব্য রাখতেন। এমনকি অশোভন ভাষায় হুমকি-ধামকিও দিতেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর বড় মনি দীর্ঘদিন রাজধানীতে তার বোন ছোট মনির বাসায় থাকতেন। অবশ্য গত কয়েকদিন ধরে তিনি ফেনী শহরের বাড়িতে অবস্থান করছেন বলেও শোনা গেছে।
অপর নেত্রীদের মধ্যে আওয়ামীলীগের তিন আমলেই আলোচিত ছিলেন সদর উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগ সভাপতি জ্যোৎস্না আক্তার জুসি ও যুব মহিলা লীগ সাধারণ সম্পাদক মঞ্জিলা আক্তার মিমি। মিমি শুরুর দিকে সামাজিক কর্মকান্ডে সক্রিয় থাকলেও একপর্যায়ে তার প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে রাজনীতিতে। তিনি ফেনী জেনারেল হাসপাতাল সহ স্বাস্থ্য বিভাগে একচ্ছত্র প্রভাব খাটিয়েছেন। দীর্ঘদিন ফেনী শহরে থাকলেও গত কয়েকদিন মায়ের অসুস্থতাজনিত কারনে রাজধানীতে রয়েছেন।
প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতাদের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কের কারনে সর্বত্র আলোচিত ছিলেন সদর উপজেলা মহিলা সম্পাদক ও পাঁচগাছিয়া ইউপির দুইবারের সাবেক মেম্বার শিরিনা আক্তার। এলাকায় তাকে সমীহ করে চলতে হতো আওয়ামীলীগ নেতাদেরও।
ফেনী সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের প্রথম নারী সাধারণ সম্পাদক হয়ে আলোচনায় আসেন সাদিয়া সুলতানা রাত্রি। মহিলা আওয়ামীলীগের অন্য নেতাদের তোয়াক্কা করতেন না রাত্রি। বহু অভিযোগে একপর্যায়ে রাজনীতির মাঠ থেকে কিছুটা ছিটকে পড়লেও বিগত নির্বাচনী কর্মকান্ডে ফের সক্রিয় হন। তার উশৃঙ্খল কর্মকান্ডে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা নাখোশ থাকলেও ভয়ে মুখ খুলতো না নেতাদের কাছে। তার সঙ্গে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রভাবশালী নেতাদের চেনাজানা থাকায় কেউ পাত্তা পেতো না।
এছাড়া অপর নেত্রীদের মধ্যে জেলা যুব মহিলা লীগ সভাপতি দেলআফরোজ চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন। জেলা আওয়ামীলীগের মহিলা সম্পাদক সেলিনা চৌধুরী সেলী, জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ও মহিলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি আঞ্জুমান আরা গিয়াস খুকু, সোনাগাজী উপজেলা সাধারণ সম্পাদক শাহীন গনি, জেলা যুব মহিলালীগের সাবেক সভাপতি হাসিনা আক্তার নিঝুম, ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি দিলারা সুলতানা মিলা ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইসরাত জাহান দোলাকেও পাচ্ছেনা নেতাকর্মীরা। ৫ আগস্টের পর দোলাকে ধর্ষণের পর হত্যার গুজব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়ালেও এর কোন সত্যতা মিলেনি। একটি সূত্র জানিয়েছে, দোলা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানার গ্রামের বাড়িতে রয়েছেন।
ঘনিষ্ঠ স্বজনরা জানিয়েছেন, ৫ আগস্টের পর অনেকে পর্দার আড়ালে চলে যান। বেশিরভাগ নেত্রী মোবাইল ফোন নাম্বার পরিবর্তন করেছেন। বিশেষ করে সোনাগাজী সদর ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ও মহিলা আওয়ামীলীগ সভাপতি উম্মে রুমা এবং ফেনী পৌরসভার ১৮নং ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক শাহেনা আক্তার গ্রেফতারের পর আওয়ামীলীগের নারী নেত্রীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
যোগাযোগের জন্য তাদের মোবাইল ফোনে চেষ্টা করেও বক্তব্য জানা যায়নি।