আলী হায়দার মানিক :
ফেনীতে মুসলিম উম্মাহর ধর্মীয় উৎসব আসন্ন ঈদুল আযহার প্রস্তুতিকে সামনে রেখে কোরবানির পশু মোটাতাজা করণে খামারিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। এবারও ফেনীতে চাহিদার তুলনায় বেশি পশু মজুদ রয়েছে বলে জানা গেছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ সূত্র জানায়, চাহিদার তুলনায় জেলায় এবারও গবাদি পশু লালন পালন আশানুরূপ হয়েছে। এবার জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা ৮২ হাজার ৩শ ৩৬টি। কিন্তু খামারি ও কৃষকরা সহ ব্যক্তিগতভাবে পশু লালন পালন করা হয়েছে ৮৭ হাজার ২শ ২৭টি। চাহিদার তুলনায় ৪ হাজার ৮শ ৯১টি পশু বেশি রয়েছে। এরমধ্যে ষাঁড় রয়েছে ২৮ হাজার ৭শ ৩৭টি, বলদ রয়েছে ২৮ হাজার ২শ ২১টি, গাভী রয়েছে ১২ হাজার ৩শ ৬৩টি মোট ৬৯ হাজার ৩শ ৬০টি, মহিষ রয়েছে ১ হাজার ৬শ ৬৭টি, ছাগল রয়েছে ১৩ হাজার ২শ ৪৩টি, ভেড়া রয়েছে ৩ হাজার ১শ ৪৭টি। যে পরিমান পশুর রয়েছে এটি দিয়ে জেলার অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে দেশের অন্যান্য স্থানেও সরবরাহ করার সুযোগ রয়েছে। গত বছর জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা ছিল ৮৭ হাজার ২শ টি ছিল। সেই বছর উৎপাদন হয়েছিল ৯০ হাজার ২শ ৫০টি গবাদি পশু। তবে ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি না হলে এবার গতবারের তুলনায় বেশি পশু সরবরাহ থাকতো বলে খামারিরা জানায়। স্থানীয়ভাবে পশু লালন পালনে খামারি ও কৃষকদের এবং ব্যক্তিগতভাবে আগ্রহ বাড়ায় দেশের অন্যান্য জেলা বা বাইরের দেশে ওপর নির্ভরশীলতা কমেছে। পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গঠিত ভেটেরিনারি টিমগুলো ইতিমধ্যে খামারে ও বিভিন্ন কৃষকদের বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও ঈদের আগে প্রতিটি হাট-বাজারে ভেটেরিনারি সেবা প্রদান করা হবে।
আমান এগ্রো’র পরিচালক রাফি উদ্দিন আহমেদ হামিম জানান, ফেনী সদর উপজেলার লস্করহাট এলাকার দমদমায় বিগত ১২ বছর যাবত কোরবানিকে সামনে রেখে পশু মোটাতাজা করণ কাজ চলছে। সম্পূর্ণ দেশীয় জাতের পশু এখানে পাওয়া যায়। ছোট, মাঝারি ও বড় সব ধরণের পশু মজুদ রয়েছে। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাদ্য দিয়ে এ পশু লালন পালন করা হয়ে থাকে। খামারে দেখতে এসে ক্রেতারা গরু ক্রয় করে থাকেন।
সোহান এগ্রো ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান মাহমুদ সবুজ জানান, ২০২৪ সালে ফেনীতে ভয়াবহ বন্যায় খামারিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন খাতে সরকারি অনুদান প্রদান করা হলেও প্রাণিসম্পদ বিভাগে অর্থাৎ খামারিদের মাঝে কোন প্রকার প্রণোদনা দেয়া হয়নি। এতে খামারিরা ব্যাপক লোকসান গুণতে হয়েছে। সেই লোকসান পুষিয়ে তুলতে এবারও খামারিরা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তবে ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় আমরা আশংকায় রয়েছি, অন্যান্য বছরের ন্যায় ঈদের সময় ঘনিয়ে আসলে সীমান্তে চোরাই পথে যেন গরু প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে বিজিবি কড়া নজর দিতে হবে। দেশীয় সম্পদ কাজে লাগিয়ে চাহিদা পূরণ হলে বিদেশীদের পণ্যের প্রয়োজন হবে না। সীমান্তে চোরাই পথে গরু আসা বন্ধ থাকলে দেশীয় খামারিরা এগিয়ে আসবে এতে দেশে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
হাসিনা এগ্রোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরাফাত খান জানান, দীর্ঘ ৮ বছর ধরে অনেকটা শখের বসে পশু লালন পালন করছি। ছোট বেলা থেকে ইচ্ছা ছিল নিজে কিছু একটা করি। সেই হিসেবে আমার মায়ের নাম ব্যবহার করে হাসিনা এগ্রো দিয়ে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান সবুজ ঘাষ, শুকনো খড় ও খৈল দিয়ে পশু মোটাতাজা করছি। এটিকে অনেকটা সাধারণ মানুষের সেবা হিসেবে নিয়েছি। মানুষ যেন নির্ভেজাল পশু দিয়ে চাহিদা অনুযায়ী কোরবানি করতে পারেন।
ফেনী সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো: শহিদুল ইসলাম খোকন ফেনীর সময় কে জাননা, বাংলাদেশের তিনদিক ঘেরা ভারত বেস্টনীতে। এবার যেন বর্ডার দিয়ে চোরাই গরু প্রবেশ করতে না পারে সেই জন্য বিজিবি সর্তক অবস্থানে রয়েছেন। সুতরাং চোরাই পথে গরু আসা বন্ধ থাকলে খামারিরা ন্যায্য মূল্য পাবেন। ফলে ভবিষ্যতে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে মানুষ পশু মোটাজাতা করণের প্রতি আগ্রহী হবেন।
তিনি আরো বলেন, পশুর কোন রকম রোগ হয়েছে এমন খবর পেলে আমরা সাধ্যমতে চেষ্টা করছি সেবা প্রদানের জন্য। সাধারণত পশু লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এটি অনেক ব্যয়বহুল রোগ। তবে এবার অন্যান্যবারের তুলনায় খামারিরা ভালো আছেন।
জানতে চাইলে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো: মোজ্জাম্মেল হক ফেনীর সময় কে জানান, এবারের কোরবানির ঈদে দেশীয় পশু দিয়ে মানুষ ইচ্ছামত কোরবানি করতে পারবেন। ফেনীর মানুষের মাঝে সৃষ্টিশীল কাজের প্রতি আগ্রহ বেশি। সেই হিসেবে খামারিরা সারা বছর পশু লালন পালন করেছেন। তাই সীমান্ত পথে পশু না আসলে খামারিদের মুখে হাসি থাকবে। সবুজ ঘাস, শুকনো খড়, খৈল ও ভুষি খাইয়ে খামারিরা প্রাকৃতিক উপায়ে পশু মোটাতাজা করেছেন। দেশীয় নির্ভেজাল পশু দিয়ে মানুষ তৃপ্তি মতো কোরবানি দিতে পারবেন। ফেনী সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় প্রশাসন শক্ত অবস্থানে থাকলে খামারিরা ন্যায্য মূল্য পাবেন। তাহলে স্থানীয়ভাবে খামারির সংখ্যা বেড়ে যাবে। আগ্রহী হবে গবাদি পশু লালন পালনে।