দৈনিক ফেনীর সময়

বাঁধ কেটে ফাঁকা গুলি করে ভারতীয়রা

বাঁধ কেটে ফাঁকা গুলি করে ভারতীয়রা

বিশেষ প্রতিনিধি :

“আগের দুই-তিন রাতও ঘুমায়নি নিজ কালিকাপুরের বাসিন্দারা। তাদের শংকা ছিল সীমান্তের ওপারে প্রবল বৃষ্টি হওয়ায় যেকোন সময় বাঁধ কেটে দিতে পারে ভারতীয়রা। সেদিন (২০ আগস্ট) রাত দেড়টা থেকে দুইটা। এসময় দেড় থেকে দুইশ মানুষ অবস্থান নেয় ভারতের উত্তর বিলোনিয়া বাঁধের উপর। টের পেয়ে শত শত বাংলাদেশীও জড়ো হয় ঘটনাস্থলের কাছে মুহুরী বাঁধের উপর। তারা নোম্যান্স ল্যান্ডের এপার থেকে শোরচিৎকার করে প্রতিবাদ জানায়। এসময় বাঁধ কেটে দিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে ভারতীয়রা।” শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। তাকে ওই রাতের ভয়াবহতা বর্ণনা করেন স্থানীয়রা।

ফজলে আজিম মজুমদার নামে স্থানীয় বাসিন্দা জানান, বাঁধ কাটার সময় উত্তর বিলোনিয়ার বাসিন্দাদের সাথে বিএসএফ সদস্যরাও ছিলেন। কয়েক রাউন্ড গুলি করার পর বাংলাদেশীরা পিছু হটে। একপর্যায়ে বল্লামুখর সংলগ্ন ওই বাঁধে কাটা অংশ দিয়ে প্রবল স্রোতে পানি আসতে থাকলে স্থানীয়রা মুহুরী বাঁধের উপর সিমেন্টের বস্তা দিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। বিজিবি সদস্যরাও তাদের কিছু বস্তা দিয়ে সহায়তা করেন। কিছুসময় রক্ষা পেলেও একপর্যায়ে স্রোতের তীব্রতায় এসব কিছুই টিকেনি। পরশুরাম-ফুলগাজী হয়ে বন্যার পানিতে পুরো ফেনী তলিয়ে যায়। স্মরণকালের এ ভয়াবহ বন্যায় পর্যায়ক্রমে কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর সহ আশপাশের জেলা সমূহও প্লাবিত হয়।

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদকে ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরে স্থানীয়রা আরো বলেন, ভারতীয়দের এ নিষ্ঠুর আচরণে পুরো এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়েও যাওয়ার সময় পায়নি। ততক্ষনে তাদের বাড়িঘর ডুবে ভয়ানক ক্ষতির শিকার হন।

মো: মহসিন নামে আরেক বাসিন্দা জানান, ভারতীয় পাহাড়ী ঢলের পানির চাপে প্রতিবছরই মুহুরী-কহুয়া নদীর বাঁধের কয়েক স্থানে ভেঙ্গে সীমান্তবর্তী পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলা প্লাবিত হয়। কিন্তু এবারের সৃষ্ট বন্যাকে তারা পরিকল্পিত বলে মনে করেন। এর ক্ষতির পরিমাণও অপূরনীয়।

তিনি বলেন, মুহুরী-কহুয়া বাঁধ নির্মাণের পর নিজকালিকাপুর অংশে গত ১৫-১৬ বছরে সংস্কার হয়নি। এতে করে বাঁধটি আরো ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। অপরদিকে ভারত বিলোনিয়া অংশে নদী থেকে নিরাপদ দূরত্বে টেকসই বাঁধ নির্মাণ করায় মুহুরী নদীর ভাঙন পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের দিকে বাড়তে থাকে।

ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমার দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা। কারও কোন অবহেলার কারণে কেউ যেন আক্রান্ত না হয়, মানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। উত্তর বিলোনিয়ায় (বল্লামুখা) বাঁধের ক্ষতি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় মানুষের জীবন-জীবিকা ভীষণভাবে আক্রান্ত হবে। যেটা আমরা চাইনা।

২০১৩ সালে মুহুরী চর যেটি বাংলাদেশের পক্ষে এসেছে, সেখানেও তিনি কাজ করেছেন উল্লেখ করে বলেন, তখন ভারতের সাথে ভূমিসীমার বিভাজনের সময় বাংলাদেশের টিম লিডার হয়ে কাজ করেছি। তখনও এ বাঁধটি থ্রেড ছিল। মানুষ একেঅপরকে সহায়তার মাধ্যমে বাঁধ রক্ষা করেছে। তবে মানুষের প্রতিরক্ষার জন্য একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ একান্ত প্রয়োজন।

এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব শাপলা, দৈনিক আমার কাগজ সম্পাদক ফজলুল হক রানা ও দৈনিক ফেনীর সময় সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন সঙ্গে ছিলেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!