আরিফ আজম :
ফেনী শহরের প্রাণকেন্দ্র ট্রাংক রোডে কয়েক গজের মধ্যে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে ফেনী কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদ ও কালী মন্দির। ধর্মীয় উপসনালয় দুটি গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ধর্মীয় সম্প্রীতির উদাহরণ হয়ে। ১৮৭৬ সালে ত্রিপুরার রাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুর ফেনী শহরে মন্দির ও মসজিদের জন্য ৫০ শতাংশ করে জমি বরাদ্দ দেন। মাত্র কয়েকশ গজের ব্যবধানে একদিকে পূজা অর্চনা, আরেকদিকে আজানের ধ্বনি দুই সম্প্রদায়ের মধ্যকার বন্ধনকে দৃঢ় করছে প্রায় দেড়শ বছর ধরে। তবে ২০২১ সালে অক্টোবরের ঘটনায় এই সম্প্রীতি ও বন্ধনে কিছুটা আঁচড় লাগলেও সেটি মনে করতে চান না কেউ।
কালি মন্দিরে আসা ভক্ত-পূজারীদের মতে, একটি চক্র সেদিনের ঘটনায় সাময়িকভাবে কিছুটা প্রভাব পড়লেও দীর্ঘদিনের সম্প্রীতি অটুট রাখতে চান তারা। মুসলিম ধর্মের প্রতি সম্মান জানিয়ে মন্দির প্রাঙ্গণে টাঙ্গানো হয়েছে নামাজের সময়সূচী।
দূর্গোৎসবে অংশ নিতে গতকাল শনিবার সপরিবারে শহরের ট্রাংক রোডের কালি মন্দিরে আসেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সোমা সাহা। পৈত্রিক বাড়ি মানিকগঞ্জ হলেও গত জানুয়ারি মাসে তার বিয়ে হয়। স্বামীর বাড়ির সুবাধে প্রথমবারের মতো ফেনী সফর তার।
সোমা সাহার মতে, “আবহমান কাল থেকেই বাঙ্গালী সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। এখানে পাশাপাশি মসজিদ-মন্দির রয়েছে। বছরের বিশেষ সময়ে ৫ দিন আনন্দে পূজা করি। নামাজের সময় উলুধ্বনি, ঢাক বাজানো বন্ধ রাখা হয়। অন্য ধর্মকে সম্মান দেয়া এটাই সম্প্রীতি। স্বাধীনতার পূববর্তী সময় থেকে সম্প্রীতি রয়েছে। সম্প্রীতির বন্ধনে আমরা থাকতে চাই, আমরা এটাই আশা করি।”
সোনাগাজীর কাজিরহাট এলাকার বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ পূজা রানী পাল বলেন, “দূর্গাপূজা সবচেয়ে উত্তম। ভারত-বাংলাদেশ সহ সব জায়গায় ভালোভাবে উদযাপন হয়। সনাতন ধর্মালম্বীদের সাথে মুসলিম ভাইয়েরা সহযোগিতা করে। মুসলিম যেমন ভালো আছে, হিন্দুর মধ্যে ভালো আছে। একজন আরেকজনকে ভালোবাসতে পারলে কোন সমস্যা হয় না।”
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি শুসেন চন্দ্র শীল বলেন, “আবহমান কাল থেকে মসজিদ-মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছে। মন্দিরে পূজা হচ্ছে, মসজিদে নামাজ পড়ছে। অসাম্প্রদায়িকতার জলন্ত উদাহরণ। নামাজের সময়সূচী টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়েছে। যখন আজান হবে তখন আমরা সংযত থাকবো। যখন আমরা পূজা করবো তখন মুসলমান সম্প্রদায় সংযত থাকবে। এভাবে চলে আসছে, এনিয়ে কখনো সমস্যা হয়নি।”
সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শুসেন আরো বলেন, “এর মধ্যে উগ্র সাম্প্রদায়িকতা বাংলাদেশের ইতিহাসে উত্থান হয়েছে। এনিয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি। সকলে মিলে সবার সহযোগিতায় শারদীয় দূর্গাপূজা সম্পন্ন করতে পারবো।”
পুলিশ সুপার জাকির হাসান বলেন, “পূজার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ৬ শতাধিক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সাদা পোশাকে পুলিশ রয়েছে। প্রতিটি মন্ডপে পুলিশ নিয়োজিত রয়েছে। ১ হাজার আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করছে। জেলার ১৪৭টি মন্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে কোন দুষ্কৃতিকারী বা ষড়যন্ত্রকারী কোন ধরনের সুযোগ না নিতে পারে সেজন্য সর্বোচ্চ সজাগ রয়েছি। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে মুসলিম-হিন্দু একত্রেই বসবাস করেন। একে অন্যের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ দেখান বলেই কোন সমস্যা হয়না।”