দৈনিক ফেনীর সময়

সেই অস্ত্রধারীদের খুঁজে পাচ্ছেনা পুলিশ

নিজস্ব প্রতিনিধি :

ফেনী শহরের মহিপালে ৪ আগস্ট গণআন্দোলনে অন্তত ৮ জন নিহত ও শতাধিক ছাত্র-জনতা আহতের ঘটনায় জড়িত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের খুঁজে পাচ্ছেনা পুলিশ। ইতিমধ্যে ২৭ জন গ্রেফতার হলেও এর মধ্যে শীর্ষসন্ত্রাসীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। গ্রেফতারকৃতদের বেশিরভাগই যৌথবাহিনী ও র‌্যাবের অভিযানে ধরা পড়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৪ আগস্ট দুপুরে মহিপাল ফ্লাইওভারের নিচে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার উপর বেপরোয়া গুলিবর্ষণ করে আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এতে ৭ শিক্ষার্থী সহ ৮ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে। হতাহতের সংখ্যা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা কাটেনি। অনেকে হতাহতের সংখ্যা আরো বেশি বলে দাবী করছেন।

নিহতদের মধ্যে ফেনী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ইসতিয়াক আহমদ শ্রাবণের মা ফাতেমা আক্তার শিউলী বাদি হয়ে ১শ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে ও ২শ অজ্ঞাত আসামী, লক্ষ্মীপুর জেলার মালেকের ছেলে অটোরিকশা চালক সবুজ নিহতের ঘটনায় মো: ইউসুফ বাদি হয়ে ৬৫ জনের নাম উল্লেখ করে ও ৩শ থেকে ৪শ জনকে অজ্ঞাত আসামী, সোনাগাজীর বগাদানা ইউনিয়নের মান্দারি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে জাকির হোসেন সাকিব নিহতের ঘটনায় তার মা কোহিনুর আক্তার বাদি হয়ে ৭১ জনের নাম উল্লেখ করে দেড়শ থেকে দুইশ জনকে অজ্ঞাত আসামী, দাগনভূঞা উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো: শাহজাহানের ছেলে সরোয়ার জাহান মাসুদ নিহতের ঘটনায় তার মা বিবি কুলসুম বাদি হয়ে ১৩৪ জনের নাম উল্লেখ করে ও ২শ জন অজ্ঞাত আসামী, সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়নের কলাতলী গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে সাইদুল ইসলাম নিহতের ঘটনায় তার বাবা রফিকুল ইসলাম বাদি হয়ে ৯৪ জনের নাম উল্লেখ করে ও দেড়শ জনকে অজ্ঞাত আসামী, পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কাশিমপুর এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে ওয়াকিল আহমেদ শিহাব নিহতের ঘটনায় তার মা মাহফুজা আক্তার বাদি হয়ে ১শ ৫১ জনের নাম উল্লেখ ও ১শ থেকে দেড়শ জনকে অজ্ঞাত আসামী, ফেনী সদর উপজেলার শর্শদী ইউনিয়নের ফতেহপুর এলাকার সিএনজি চালক জাফর আহাম্মেদ নিহতের ঘটনায় তার স্ত্রী আছিয়া বেগম বাদি হয়ে ২শ ৫জনের নাম উল্লেখ এবং সোনাগাজী উপজেলার মাহবুবুর রহমান মাসুম নিহতের ঘটনায় তার ভাই বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এদিকে ফেনী মডেল থানা সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত সবকটি মামলায় ইতিমধ্যে ২৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পিস্তল, শর্টগান, এক নলা বন্দুক সহ ৬টি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে।

অপর একটি সূত্র জানায়, ১১টি মামলায় দুই সহস্রাধিক আসামী হলেও গ্রেফতারের সংখ্যা নগন্য। এজাহারভুক্ত আসামী সহ দলীয় নেতাকর্মীদের বেশিরভাগ ঢাকা-চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে আত্মগোপনে রয়েছেন। অনেকে প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীর গ্রেফতারের গুঞ্জন ছড়ালেও তার অবস্থান নিশ্চিত হতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এদিকে ওইদিনের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞে ভারী অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে যাদেরকে গুলি করতে দেখা গেছে এদের অনেককেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শনাক্ত করেছে। এদের মধ্যে সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ছনুয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান করিম উল্যাহ বি.কম, জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি ও শর্শদী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান জানে আলম ভূঞা, সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর লুৎফুর রহমান খোকন হাজারী, ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি জিয়াউদ্দিন বাবলু, সর্দ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীলের দেহরক্ষ্মী তানজির রয়েছে।

তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলছেন, আসামীদের নাম্বার সচল নাই। ফলে অবস্থান নিশ্চিত করতে না পারায় গ্রেফতার করতে পারছেন না। তারা প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালালেও আসামীদের কাউকে পাচ্ছেন না।

এ ব্যাপারে ফেনীর পুলিশ সুপার মো: হাবিবুর রহমান ফেনীর সময় কে বলেন, পুলিশ ঘুরে দাঁড়িয়ে কাজ শুরু করেছে। অপারেশন চালানো হচ্ছে। আসামীরা বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে যৌথবাহিনীর সহায়তা নেয়া হচ্ছে। অস্ত্র উদ্ধার ও আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!