নিজস্ব প্রতিনিধি :
সোনাগাজী পৌরসভার খাল ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিনত হয়ে দিনদিন খালের চিত্র হারিয়ে নালায় পরিনত হচ্ছে। খালের আশ-পাশের বাসিন্দারা ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন। তবে গত কয়েকদিন ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে নামসর্বস্ব খালগুলো সংস্কারের কাজ চলছে। পৌরশহরের বাসিন্দারা খালে প্রতিনিয়ত ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। জোয়ার-ভাটা না থাকায় বদ্ধ খাল ভরে গেছে কচুরিপানা ও ময়লা-আবর্জনায়। পচা পানিতে মশার বংশ বৃদ্ধিসহ পরিবেশ দুষিত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশ স্বাধীনের পর ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা ও জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষে সোনাগাজী উপজেলা সদরে শুকনিয়াসহ বেশ কিছু খাল খনন করা করা হয়। তখন খালটিগুলোর মাধ্যমে নদীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সোনাগাজী বাজারের ব্যবসায়ীরা নদী পথে মালামাল আনা-নেওয়া করতেন। পরবর্তীতে সড়ক পথে যোগাযোগ বৃদ্ধি হওয়ায় আস্তে আস্তে নদীর সঙ্গে খালের দুরত্ব বেড়ে যায়। এরপর এক সময় বদ্ধ হয়ে খালগুলোর অনেকটা মরা খালে পরিনত হয়। তারপর পানি নিস্কাশনের জন্য মাঝে মধ্যে খালগুলো সংস্কার করা হতো। কিন্তু ২০০৩ সালে সোনাগাজী পৌরসভা প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে অদ্যবধি পৌরসভা এলাকায় প্রায় ৫-৬ কিলোমিটার খালের কোন সংস্কার না হওয়ায় ময়লা-আবর্জনা ও কচুরিপনার রাজত্বে খালগুলো ভরাট হয়ে যায়। দখল ও দূষণে পৌরসভার খালগুলো এখন মৃতপ্রায় হয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, পৌরসভা এলাকায় ময়লা-আবর্জনা ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় ৪-৫ কিলোমিটার খালগুলো পুন:খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে গত এক সপ্তাহ ধরে খাল সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। এতে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয় হবে।
বুধবার সকালে পৌরসভার ২, ৩ ও ৭নং ওয়ার্ডে খাল ঘুরে দেখা যায়, পৌরশহরের বাজারসহ শহরের মধ্যে বিভিন্ন স্থানের ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়েছে খালে। খালের পানি থেকে গন্ধ ছড়াচ্ছে। তাকিয়া রোড ও গো বাজার এলাকায় সড়কের পাশে খালের পাড় ভরাট ও দখল করে দোকান নির্মান করা হয়েছে। একই পাশে কয়েকটি এলাকায় খাল ভরাট করে অনেকে বাসিন্দা বাড়ির সুরক্ষা দেয়াল নির্মান করেছেন। কর্তৃপক্ষের উদাসিনতার কারনে এভাবে প্রায় জায়গায় খাল ও সরকারি জায়গা দখলে চলে গেছে। আর খালগুলোর বেশিরভাগ এলাকা কচুরিপানা ও ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি।
পৌরশহরের পশ্চিম বাজার সংলগ্ন টেলিফোন একচেঞ্জ অফিস, আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার ও পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে দুটি এক্সকাভেটর মেশিন দিয়ে খাল সংস্কারের কাজ চলছে। কাজ দেখে মনে হচ্ছে শুধুমাত্র লোক দেখানো কাজ করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া পাঁয়তারা ছাড়ান আর কিছুই না। খালের দুইপাশের জঙ্গলা পরিস্কারসহ খালের মাঝখান থেকে নামেমাত্র হালকা কিছু ময়লা সরানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাল সংস্কার কাজে নিয়োজিত কেউই কিছুই বলতে রাজি হননি। সবার এক কথা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও ঢাকায় ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলেন।
দখলের বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দোকানি বলেন, ১০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনিসহ ৫-৬জন খাল পাড়ের এই জায়গায় ব্যবসা করছেন। কখনোও তাদের উচ্ছেদ করা হয়নি। কিন্তু শহরে দোকান করার জায়গা না থাকায় আবার এই স্থানে এসে ব্যবসা করেন।
শহরের তাকিয়া সড়কের দক্ষিণ মাথার ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিন বলেন, তাকিয়া রোডের দক্ষিণ মাথায় খাল পাড়ে কসাইরা গরু-মহিষ জবাই করে নাড়ি-ভুড়িসহ অপ্রয়োজনীয় জিসিন খালের পানিতে ফেলে দেয়। এতে করে দুর্গন্ধের কারণে দোকানে বসাও মুসকিল হয়ে পড়ে। দোকানে ক্রেতাও আসতে চান না। আবার খালে শহরের ময়লা ফেলা হচ্ছে। পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পরিবেশ হচ্ছে দূষিত। পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোন লাভ হয় না।
খাল পাড়ের বাসিন্দা ফুলরা বেগম বলেন, খালের পানির পচা দুর্গন্ধে বাড়িতে থাকা যায় না। পচা পানিতে মশা জন্ম নিচ্ছে। মশা ও দুর্গন্ধের কারণে আত্মীয়-স্বজন কেউ এখানে আসতে চান না। পানি চলাচলের ব্যবস্থা না থাকায় বাতাস ও বৃষ্টি হলেও দুর্গন্ধ আরও বেড়ে যায়।
পশ্চিম বাজার এলাকার খায়েজ আহাম্মদ নামে আরেকজন বাসিন্দা বলেন, খালপাড়ে স্থান তাদের নিজেদের জায়গা। তারা খালপাড় ঘেষে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেছেন। রাতের আঁধারে স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়ীরা ময়লা-আবর্জনা খালে ফেলে যায়। পৌরসভার পক্ষ থেকে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট কোন ব্যবস্থা না থাকায় মানুষ বাধ্য হয়ে খালে ময়লা ফেলে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী নুর নবী বলেন, পৌরসভা এলাকার খালগুলোর এমন অবস্থা হয়েছে, যে দেখামত চেহারা নেই। জোয়ার-ভাটা না থাকায় ময়লা-আবর্জনায় খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি। পৌরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত রাখতে এবং পানি চলাচল স্বাভাবিক করতে খালগুলো পাউবো সংস্কার করছে। পৌরসভা ও স্থানীয় প্রশাসনের তদারকি না থাকলে ভরাট কিংবা দূষণ রোধ করা কঠিন হবে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি ফেনী জেলায় চার-পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০-২৫ কিলোমিটারের বেশ কয়েকটি খাল সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সোনাগাজী পৌরসভা এলাকায় ৪-৫ কিলোমিটার খাল রয়েছে। খাল সংস্কারের কাজটি সরাসরি ঢাকা থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে তার কিছু বলার নেই। তবে খালের যে অবস্থা কোন ঠিকাদারই অল্প খরচে এ কাজ করতে চাইবে না।
পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, খালগুলো রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ডের। এরপরও পৌরসভার অংশে বারবার সতর্ক করা সত্তে¡ও বিশেষ করে বাজারের ব্যবসায়ীরা বর্জ্য ও ময়লা ফেলে থাকেন। এখন সংস্কার কাজ চলছে। এরপর নতুন করে কেউ যেন আর এই কাজ না করেন, সে বিষয়ে তিনি উদ্যোগ নেবেন।