নিজস্ব প্রতিনিধি :
বন্যা পরবর্তী সময়ে ঋতু পরিবর্তন ও ঠান্ডা-গরমে ফেনীর সোনাগাজীতে গত এক মাসে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় ১ হাজার ৪৪১জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ডায়রিয়ায় ৮৪৯জন, নিউমোনিয়ায় ৫৯২জন। তবে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মাত্র ৫০৬জন। বাকীরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্হিবিভাগ ও স্থানীয় উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি শিশু। এছাড়া চলতি মাসের গত সাতদিনে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৫১জন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশুদের জন্য ৬টি শয্যা থাকলেও গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে ৫১ শিশু হাসপাতালে ভর্তি ছিল। পরে ১৫ শিশুকে চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভর্তি হওয়া শিশু রোগীদের মধ্যে ৬০ শতাংশই জ্বর, সর্দি,কাশি, এলার্জি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিল। ১ থেকে ৭ বছর বয়সী শিশুর পাশাপাশি ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে নবজাতকও ছিল। গত মাসে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত প্রতিদিন গড়ে হাসপাতালে শিশুসহ ১০-১৫ ভর্তি করা হয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানান।
মঙ্গলবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগ থেকে ৫৮৩জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে শিশুসহ প্রায় ২৫০জন রোগী জ্বর, সর্দি-কাশি, মাথাব্যথা, শরীরব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার লক্ষণ নিয়ে এসেছেন। গতকাল দুপুরে ১৫ শিশুকে ছেড়ে দেওয়া হলেও বর্তমানে বিভিন্ন রোগে হাসপাতালে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ৩৬ শিশু চিকিৎসাধীন রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিবন্ধন বইয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে জ্বর,সর্দি,কাশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত প্রায় ১ হাজার ৪৪১জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছন। এরমধ্যে ৫০৬জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে শিশু ২৬০ জন। গতকাল দুপুরে ১৫ শিশুসহ ২৭জনকে চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হলেও দুপুর পর্যন্ত ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ৮৫জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
উপজেলার সোনাপুর এলাকার বাসিন্দা ছকিনা আক্তার বলেন, রোববার রাতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে যান। ভোররাতে ঘুম থেকে ওঠে বার্থরুম সেরে আবারও ঘুমিয়ে পড়েন। এর কিছুক্ষণ পর পেটে ব্যাথা শুরু হয়। একই সঙ্গে ডায়রিয়া হতে থাকে। পরে ওষুধ খাওয়ার কয়েক ঘন্টা পরও নিয়ন্ত্রণে না আসায় সোমবার সকালে হাসপাতালে এসে ভর্তি হন।
পৌরসভার চর গনেশ এলাকার দুই বছর বয়সী সাজিদ হোসেনের মা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, সোমবার দুপুরে গোসল করানোর পর থেকে তাঁর ছেলের জ্বর শুরু হয়। দুধ খাওয়ানোর পর বমি করতে থাকে। এর কিছুক্ষণ পর থেকে ডায়রিয়া শুরু হয়। রাতেই তাকে হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসকেরা ভর্তি করাতে
বলেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক সাদেকুল করিম বলেন, গত এক মাসে ঠান্ডা-গরমজনিত, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া, জ্বর, সর্দি, কাশি, এলার্জি, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৪হাজার ২৪০জন রোগী হাসপাতালের বর্হিবিভাগ ও জরুরী বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ও শিশু বিশেষজ্ঞ মো: আরমান বিন আবদুল্লাহ বলেন, বন্যা পরবর্তী সময়ে ঋতু পরিবর্তনের কারণে ঠান্ডা-গরম ও কয়েকটি ভাইরাসের কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিশু ও বৃদ্ধ ব্যক্তিরা ডায়রিয়া-নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এর মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশ শিশুকে সুস্থ করতে হাসপাতালে ভর্তি করে টিকা দিতে হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা উৎপল দাশ বলেন, বন্যা পরবর্তী সময়ে ঋতু পরিবর্তন ও ঠান্ডা-গরম, পঁচা-বাসি খাবার গ্রহণসহ দূষিত পানি পানে হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগ, জ্বর,সর্দি, কাশি, এলার্জি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। শয্যা সংকট হলেও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ও বহির্বিভাগে আসা রোগীদের সেবা দিয়ে সুস্থ করতে চিকিৎসকেরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৩৫জনসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ৮৫জন রোগী ভর্তি রয়েছে।