দৈনিক ফেনীর সময়

সোনাগাজীতে নদী ভাঙনে বিলীন কয়েকশ ঘরবাড়ি

সোনাগাজীতে নদী ভাঙনে বিলীন কয়েকশ ঘরবাড়ি

নিজস্ব প্রতিনিধি :

নোয়াখালীর মুছাপুর রেগুলেট নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পর থেকে ছোট ফেনী নদীর কোম্পানীগঞ্জ ও সোনাগাজীর অংশে দুই তীরে তীব্র ভাঙন ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে ভাঙনে ফসলি জমি, ফলের বাগান, রাস্তা ও কয়েকশ বসতভিটাও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীভাঙনের কারণে হুমকিতে রয়েছে আরও শতশত বাড়িঘর। নদীভাঙন ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আরও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসী।

স্থানীয় লোকজন জানায়, নোয়াখালী ও ফেনীর সীমান্তবর্তী মুছাপুর এলাকায় রেগুলেটর না থাকায় সমুদ্রের জোয়ারের পানি নির্বিঘ্নে প্রবেশ করায় ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চর চান্দিয়া, চর দরবেশ, বগাদানা ও চর মজলিশপুর ইউনিয়নের ছোট ফেনী নদীর তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে নদী ভাঙনের কারনে বেশ কয়েকটি রাস্তা ও ছোট ছোট কালভার্ট ও সেতুও ভেঙে নদীতে চলে গেছে। বিশেষ করে উত্তর-পশ্চিম চর দরবেশ, কাজীরহাট, আউরারখিল, কাটাখিলা, কুঠিরহাট ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা এতই বেশি যে রাতে-দিনে সমান তালে বাড়িঘর ও ফসলি জমিসহ বিভিন্নস্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙনরোধে প্রশাসন এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এখন ভাঙন গ্রামগুলোর ঘনবসতির দিকে যাচ্ছে।
বুধবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের আউরারখিল এলাকায় নদীতীরের মানুষ ঘরবাড়ি ভেঙে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। গাছগুলোও কেটে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। অনেক গাছপালা ভেঙে পানিতে ডুবে গেছে। গ্রামগুলোয় চলছে ঘরবাড়ি সরিয়ে নেওয়ার কর্মযজ্ঞ। ভাঙন আবার অনেকের বসতভিটার একদম কাছে চলে আসছে। কেউ কেউ নদীতে বাঁশ ও গাছ দিয়ে বাঁধের মত করে বসতবাড়ি রক্ষায় চেষ্টা করছেন। চলতিবছর গত দুমাসে উপজেলার অন্তত ২০টি এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। কিন্তু এখানো স্থায়ীভাবে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তাদের দেখার কেউ নেই।

আউরারখিল গ্রামের জেলেপাড়ার বাসিন্দা রেখা রানী দাস ঘরের কিছু জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, নদীটি তাঁদের বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দুরে ছিল। গত আগষ্ট মাসে হঠাৎ করে বন্যায় মুছাপুর রেগুলেট ভেঙে নদীতে চলে যাওয়া পর থেকে জোয়ারের সঙ্গে প্রতিদিন বাড়িঘরে পানি ঢুকে যায়। রাতে বাড়িতে থাকতে পারেন না। জোয়ারের পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। তাদের আশপাশে শতাধিক বাড়ি ও বেশ কিছু গাছের বাগান ছিল। হঠাৎ করে বাড়িঘরের সঙ্গে নদী ভাঙনে গাছপালা বিলীন হয়ে গেছে। তার ঘরের বেশিরভাগ অংশ নদীতে চলে গেছে। বিকেলে বা রাতের মধ্যে যে কোন সময় পুরো বাড়ি নদী গর্ভে চলে যেতে পারে। তাই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।

একই গ্রামের বিদেশী চন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, হঠাৎ করে ভাঙনের শিকার হয়ে পরিবারগুলো আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। তাঁদের অনেক দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। চোখের সামনে বাড়িঘর নদীতে চলে যাচ্ছে কিছুই করতে পারছিনা। কিন্তু এখানে স্থায়ীভাবে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তাই মাত্র দুমাসের মধ্যে কয়েক শ মানুষ গৃহহারা হয়েছেন। তাদের দেখার যেন কেউ নেই।

আউরারখিল গ্রামের বাসিন্দা কামাল উদ্দিন বলেন, গ্রামের পশ্চিম পাশ দিয়ে ছোট ফেনী নদী চলে গেছে। বন্যার পর থেকে নদীতে প্রবল স্রোত বইছে। প্রায় দুই থেকে তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন চলছে। পাড় ভেঙে নদীতে আছড়ে পড়ছে। গত ১০বছর আগে তার বাড়ি নদীগর্ভে চলে যায়। এখন অন্যের জমিতে থাকেন। এ গ্রামেও ভাঙন হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত গ্রামের চার ভাগের দুই ভাগ এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে যেভাবে ভাঙন চলছে, তাতে কোনো ব্যবস্থা না নিলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বহু ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আউরারখিল দূর্গামন্দির ও সমাজ কমিটির সভাপতি মেঘনাথ চন্দ্র দাস বলেন, তাদের পরিবারের সবাই এখন নদীভাঙনে সর্বস্বান্ত। তার ২০জন নিকট আত্মীয় গত দুই সপ্তাহে নদী ভাঙনের শিকার হন। তারা সব হারিয়ে এখন অন্যের বাড়ি ও বস্তিতে বসবাস করেন। এমন বহু পরিবার এখন সব হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে। এত মানুষ সব হারানোর পরও ভাঙনরোধে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। তারা এলাকাবাসীর উদ্যোগে বালুভর্তি বস্তা ও বাঁশ-গাছ কেটে নদীতে বাঁধ দিয়ে নিজেদের ঘরবাড়ি রক্ষার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কিছুইতে তা ঠিকছে না। দ্রুত স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নিতে তারা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদেরকে জানিয়ে তাঁদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

পাউবোর সেকশন কর্মকর্তা এ এম রকি বলেন, সোনাগাজী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙনের স্থানগুলো পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, মুছাপুর রেগুলেটর নদীগর্ভে বিলীনের পর শুধু পুরো সোনাগাজী উপজেলার চারপাশে নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ইতিমধ্যে শতশত ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!