আসিফ আহমদ:
আধুনিক বিশ্বের আবিষ্কার গুলোর মধ্যে অন্যতম বিস্ময় চ্যাটজিপিটি। এটি একটি এআই চ্যাটবট। গল্প কবিতা প্রবন্ধ লেখা থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক পরিকল্পনার খসড়া তৈরি এবং কোড লিখতেও সক্ষম। যে কোন প্রশ্নের উত্তর মুহূর্তেই হাজির করতে পারে আলাদীনের দৈব জীনের মতন। চ্যাটজিপিটির সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয় হলো, তার দেওয়া উত্তর গুলো পড়ে বুঝার উপায় নেই মানব লিখিত জবাব নাকি কোন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার! এতটাই সাবলীল মানবিক। তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে যান্ত্রিক ছাপ প্রস্ফুটিত। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন ধীরেধীরে এই সমস্যাও কাটিয়ে উঠবে চ্যাটজিপিটি।
এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সিস্টেমটি তৈরি করেছে ওপেনএআই। ২০১৫ সালে গঠিত ওপেনএআই-এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ইলন মাস্ক, স্যাম অ্যান্টম্যান এবং আরও অনেকে, যাদের সম্মিলিত মূলধন ছিল এক বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে এর সিইও হিসেবে কর্মরত আছেন স্যাম অ্যান্টম্যান। ২০১৮ সালে দায়িত্ব থেকে সরে গেলেও এর দাতা হিসেবে রয়ে গেছেন ইলন মাস্ক।
সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে চ্যাটজিপিটির ব্যবহারকারী সংখ্যা ১০০ মিলিয়নেরও বেশি। এবং ওয়েবসাইটে প্রতি মাসে ১ বিলিয়ন মানুষ ভিজিট করছে। ২০২২ সালের নভেম্বরে চালু হওয়া চ্যাট জিপিটি মাত্র দুই মাসেরও কম সময়ে এই কৃতিত্ব অর্জন করে। এই ১০০ মিলিয়ন ব্যবহারকারী অতিক্রম করতে আজকের তুমুল জনপ্রিয় ফেসবুকের লেগেছিলো চার বছর! স্ন্যাপচ্যাট মাইস্পেস তিন বছর, ইনস্টাগ্রাম দুই বছর এবং গুগলো প্রায় এক বছর সময় নিয়েছিলো।
চ্যাটজিপিটি মাত্র কয়েক মাস বয়সী, তবে ইতিমধ্যেই ব্যবসায়িক বিশ্বে তরঙ্গ সৃষ্টি করে বসেছে। বিশেষজ্ঞর বলছেন- চ্যাটজিপিটির জন্য কিছু চাকরি হুমকির সম্মুখীন হতে পারে! বিশেষত হোয়াইট-কলার জব। অ্যামাজন কোম্পানির কিছু কর্মী, চ্যাট জিপিটির উপর নিরিক্ষা চালায়। শেষে তারা বলে, ‘এটি গ্রাহক সহায়তার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে, এবং কর্পোরেট কৌশল সম্পর্কে এর উত্তর গুলো দারুণ শক্তিশালী।
একটি সাম্প্রতিক গোল্ডম্যান সার্চ সমীক্ষায় দেখা গেছে জেনারেটিভ এআই টুলস, প্রকৃতপক্ষে, বিশ্বব্যাপী ৩০০ মিলিয়ন ফুল-টাইম চাকরিকে প্রভাবিত করতে পারে, যা চাকরির বাজারে একটি উল্লেখযোগ্য ব্যাঘাত! বিশেষ করে কোডার, সফটওয়্যার ডেভেলপার এবং ডেটা বিশ্লেষক এ আই দ্বারা স্থানচ্যুত হতে পারে। বিজ্ঞাপন, গবেষণা, সাংবাদিকতা, মোদ্দা কথা লেখালেখির সাথে জড়িত যে কোনও কিছু চ্যাটজিপিটি দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। কারণ এআই পাঠ্য-ভিত্তিক ডেটা ভালভাবে পড়তে, লিখতে এবং বুঝতে সক্ষম।
এতো গেলো কেবল, আমাদের বিশ্লেষণ। খুদ চ্যাটজিপিটির কী বক্তব্য এই সম্পর্কে? তোমার দ্বারা কি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে?
চ্যাটজিপিটি উত্তর দেয়, ‘একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভাষার মডেল হিসাবে, আমি মানবজাতি বা অন্য কোন জীবিত প্রাণীর ক্ষতি করার ক্ষমতা নেই। আমার একমাত্র উদ্দেশ্য হল সাহায্য করা এবং আমার সাথে যোগাযোগকারী ব্যবহারকারীদের তথ্য প্রদান করা। যাইহোক, এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে আমার প্রতিক্রিয়াগুলি ব্যক্তিদের দ্বারা কীভাবে ব্যবহার বা ব্যাখ্যা করা হয় তা শেষ পর্যন্ত তাদের উপর নির্ভর করে। যেকোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করার সময় সতর্কতা এবং সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু তোমার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে তো মানুষ চাকরিচ্যুত হচ্ছে।
ওপাশ থেকে দ্রুত রিপ্লাই আসে, ‘এটা সত্য যে এআই আসাতে চাকরি শিল্পে কিছুটা পরিবর্তন হচ্ছে, কিন্তু এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে এটি এআইয়ের জন্য অনন্য নয়। ইতিহাস জুড়ে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি কাজ এবং শিল্পের বিবর্তনের দিকে পরিচালিত করেছে, এবং এই পরিবর্তনগুলির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া ব্যক্তি এবং সংস্থার উপর নির্ভর করে। পরিশেষে, চাকরির বাজারে এআইয়ের প্রভাব বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করবে, যার মধ্যে এআইর নির্দিষ্ট প্রয়োগ, কর্মশক্তির দক্ষতা এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সম্প্রতি সকল অবাক করে দিয়ে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভয়াবহ নেতিবাচক সব বিষয় নিয়ে অকপটে কথা বলতে। গুগল থেকে পদত্যাগ করেন, এআই গডফাদার জিওফ্রে হিন্টন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ‘আসন্ন সময়টা ভয়াবহ হতে চলেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্যে।’
এই ব্যপারে সতর্ক করে নিজের কাজের জন্য অনুশোচনা করেন বিশ্ব বিখ্যাত কম্পিউটার বিজ্ঞানী জিওফ্রে। তিনি আরো বলেন, ‘এআই শিল্পে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় সকলে নৃত্য নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করছে।ফলে এর অপব্যবহার ঠেকানো হয়ে পড়েছে দুষ্কর। এই কৃত্রিম মেধা বিশ্বকে এমন এক জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে সত্য মিথ্যে ফারাক করাটা কঠিন হয়ে উঠছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশে ভুল তথ্যের বিস্তার, চাকরির বাজারে অস্থিরতা সহ নানান ভয়াবহ বিষয়ে খোলাখুলি কথা বলার জন্যই মূলত আমি চাকরি ছেড়েছি। এআই চ্যাটবটের বেশ কিছু ভয়ংকর রুপ রয়েছে, যতদূর আমি বলতে পারি এই মুহুর্তে এআই আমাদের চেয়ে বুদ্ধিমান নয়। কিন্তু ধারণা করছি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অতিদ্রুত আমাদের ছাড়িয়ে যাবে!
এর আগেও বিশ্ব ধনী ইলন মাস্ক ও অ্যাপেলের সহ প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওজনিয়াক এবং টেকজোন কোম্পানি গুলোর নেতৃবৃন্দ একাংশ শংকা প্রকাশ করেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অগ্রগতি নিয়ে। চ্যাটজিপিটির ফাউন্ডার ও টেসলার সিইও ইলন মাস্ক এক ইন্টারভিউতে বলেন, ‘পারমাণবিক বোমার চেয়েও বেশি ভয়ানক এআই! সুতরাং আগামীতে এআই বা চ্যাটজিপিটির প্রবল উত্থান, মানবসভ্যতার জন্য যে হুমকি হয়ে দাড়াবে এটা হলফ করে বলা যায়।