দৈনিক ফেনীর সময়

সোনাগাজীতে বালু তোলা নিয়ে সংঘর্ষে বারইয়ারহাটের মেয়র গুলিবিদ্ধ

সোনাগাজীতে বালু তোলা নিয়ে সংঘর্ষে বারইয়ারহাটের মেয়র গুলিবিদ্ধ

নিজস্ব প্রতিনিধি :

সোনাগাজী উপজেলার বড় ফেনী নদীতে বালু তোলা নিয়ে দ্বন্ধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম খোকন। এসময় তার সঙ্গে থাকা আওয়ামীলীগ নেতা অশোক সেন ও যুবলীগকর্মী সাহেদ খান নামের দুই সহযোগীও আহত হন। গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের থাকখোয়াজের লামছি মৌজার কলমির চর সংলগ্ন ফেনী নদীতে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে মেয়র রেজাউল করিম খোকনের বালু ভতি চারটি ট্রলার জব্দ করেছে সোনাগাজী থানা পুলিশ। মেয়র খোকন বারইয়াহাট পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

ঘটনাস্থলে থাকা থোকনের লোকজন দাবি করেন, মিরসরাইয়ের করেরহাট ইউনিয়নে স্থাপিত একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জায়গা ভরাট করতে ফেনী নদীর মিরসরাই অংশ থেকে ড্রেজার নিয়ে বালু তুলতে যান খোকন ও তার কিছু লোকজন। তখন ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ফাজিলপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুল হক রিপনের লোকজন তাদের ওপর হামলা করে। এসময় তারা গুলি করলে মেয়রসহ তিনজন আহত হন।

তবে হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন মজিবুল হক রিপন। তিনি বলেন, ‘বারইয়ারহাট পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম খোকন আমার ইজারা নেওয়া এলাকায় অবৈধভাবে বালু তুলতে এলে স্থানীয় লোকজন তাদের তাড়িয়েছেন বলে শুনেছি। এছাড়া তাদের বালু উত্তোলনের ফলে ওই এলাকার বাড়িঘর হুমকির মুখে পড়ায় স্থানীয়রা আগ থেকেই ক্ষুদ্ধ ছিল। এ ঘটনায় আমার কোনো যোগসূত্র নাই। আমি বৈধ ইজারাদার হলেও ওই এলাকায় এখনো একবারের জন্যও যাইনি।’

তিনি বলেন, বালুমহাল ও ঘটনাস্থল সোনাগাজী উপজেলার কলমির চরে হলেও বারইয়ারহাটের মেয়র মিরসরাই এলাকা দাবী করে জোরারগঞ্জ থানায় মামলা করতে পারলে সুবিধা নিতে পারবেন। এজন্য তার লোকজনও ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে নিতে মিরসরাই এলাকা বলে প্রচার করছেন।

মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মাহমুদা আক্তার বলেন, দুপুর ১২টায় ছররা গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত অবস্থায় মেয়র রেজাউল করিম খোকন, অশোক সেন ও শাহেদ খান নামের তিনব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। তাদের মধ্যে খোকনের কোমরের অংশে, অশোক সেনের শরীরের কয়েকটি স্থানে ছররা গুলির আঘাত আছে। অশোক সেনের বাঁ হাতের কব্জিতে ভাঙার মতো রয়েছে। সাহেদ খান সামান্য আহত হয়েছেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুল হক হিরণ বলেন, ফেনী নদীতে সংঘর্ষে বারইয়ারহাট পৌরসভার মেয়র গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাস্থলটি তার ইউনিয়নের ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের থাক খোয়াজের লামছি মৌজার কলমির চর এলাকায়। কিন্তু মিরসরাইয়ের সঙ্গে সীমানা বিরোধ থাকায় ফায়দা নিতে মিরসরাইয়ের লোকজন ফেনী নদী ও কলমির চরকে তাদের অংশ বলে দাবী করেন।

সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মো: খালেদ হোসেন বলেন, ফেনী নদীতে বালু তোলার জেরে বারইয়ারহাট পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম খোকনসহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে শুনেছেন। খবর পেয়ে তিনি নিজেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন। পরে নদী থেকে বালু ভর্তি চারটি ট্রলার জব্দ করে পুলিশের হেফাজতে নিয়েছেন। পুলিশ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।

তিনি বলেন, ফেনী নদীতে ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুল হক রিপনের বালু মহালের ইজারা থাকলেও বারইয়ারহাট পৌরসভার মেয়রের কোন বৈধ ইজারা নেই। মুলত নদীতে আধিপত্য বিস্তার ও বালু মহালের বৈধ-অবৈধতা নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!