দৈনিক ফেনীর সময়

অনিশ্চিত গন্তব্যে বাংলাদেশ

অনিশ্চিত গন্তব্যে বাংলাদেশ

বহুধর্ম-বর্ণের মেলবন্ধনে গড়ে উঠেছে আমাদের বাংলাদেশ। বাঙ্গালি জাতির সামাজিক, সাংস্কৃতিক,ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রয়েছে হাজার বছরের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। সময়ের পরিক্রমায় বাঙ্গালির জাতিসত্তা একটি মজবুত ভিত্তির উপর এসে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব ইতিহাসে বহুজাতির মেলবন্ধনে গড়ে উঠা এমন দেশ খুঁজে পাওয়া ভার হবে,যেখানে বাঙ্গালি জাতির মতো বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মাঝে অহিংস ধর্মীয় সহাবস্থান রয়েছে। এদেশে আছে মসজিদ,মন্দির, গির্জাসহ বিভিন্ন উপাসনালয়। এতে নানান ধর্মীয় জনগোষ্ঠী নির্বিঘ্নে নিজেদের ধর্মীয় আরাধনা করে থাকেন। এখানে কেউ কারো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না। আদত বহুজাতিক সমাজব্যবস্থায় বাঙ্গালিজাতি সাম্প্রদায়িক বিভেদের রেখা ভুলে গিয়ে প্রাণের মিলনে, আত্মার বাঁধনে মিলে মিশে একাকার। এই ঐক্যের মেলবন্ধন ও চেতনাবোধ থেকেই পাকিস্তান সরকারের দুঃশাসনের ক্রান্তিলগ্নে সহজে ঐক্যবদ্ধ হতে পেরেছিল এজাতি। সে দিনের নিশ্ছিদ্র জাতিগত ঐক্যের ফলে অর্জিত হয়েছে সার্বভৌম একটি দেশ, যার নাম “বাংলাদেশ।” মাত্র নয় মাসের সংগ্রামের ফসল এটি। এত অল্প সময়ে পৃথিবীর কোন দেশে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জন করার এমন নজির নেই। হাতের মুঠোয় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে, দু,চোখে মুক্তির স্বপ্ন নিয়ে দল বেঁধে রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল কারখানার শ্রমিক, মাঠের কৃষক, মেঠো- মুজুর, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, ছাত্র-শিক্ষক,শিল্পী -সাহিত্যিকসহ সাধারণ মানুষ।স্বাধীনতা ছিল জাতির প্রাণের দাবী। প্রাণের মূল্যে অর্জিত বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধশালী, উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তর করার জন্য নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিরন্তর প্রচেষ্টা করে আসছে সবশ্রেণির পেশার মানুষ।বহুজাতিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় রাষ্ট্রের সকল স্তরে নাগরিক হিসেবে সব ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণ সাংবিধানিক অধিকার। যার ফলে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণি পেশায় জড়িয়ে আছে এদেশের সব সম্প্রদায়ের অনুসারী। শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রশাসক, বিচারক, ব্যবসায়ী, কৃষক, শ্রমিক, জেলে, নাপিত, চামার কামার,,তাঁতি সব শ্রেণি- পেশার মানুষের মেধা, শ্রম, ঘামের বিনিময়ে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ দুঃখের সাথেই বলতে হয়, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর জন্ম নেওয়া বাংলাদেশর বয়স এখন ৪৮ বছর। এই সুদীর্ঘ সময়ে রাষ্ট্রপরিচালনার রীতি -নীতি আমাদের জাতিকে সামগ্রিক ভাবে এগিয়ে নিতে পারে নি। জাতির অন্তর্নিহিত শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে জাতীয় উন্নয়নে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে আমাদের শাসনব্যবস্থা। সময়ের পরিক্রমায় জাতি এখন চৌপথে বিভক্ত হতে চলছে। এদিকে অধিকাংশ রাজনৈতিকদলের আন্তরিকতাপূর্ণ মনোযোগ দেখতে পাওয়া যায় না। সবাই ক্ষমতার উষ্ণতা উপভোগ করতে অধিকন্তু তৈরি হয়ে থাকেন। ক্ষমতার মনোভাব থেকে যারা শাসনকাজ পরিচালনা করেন তারা সাধারণত জনবান্ধব শাসক না হয়ে জনবিদ্বেষী শোষকে পরিণত হন। দায়িত্ববোধ থেকে ক্ষমতায় আরোহণ করলেই দেশ ও জাতিকে কাঙ্ক্ষিত মানের সুশাসন উপহার দেওয়া সম্ভব। আমাদের দেশ পরিচালনায় যে সকল রাজনৈতিকদল স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ভূমিকা রখে আসছে এমন সবকয়টি দলের ক্ষেত্রে দায়িত্ববোধের দিক থেকে সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করেছে এরূপ দৃষ্টান্ত অপ্রতুল । প্রত্যেক সরকারের কাছে ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রতিযোগিতাই বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। বারবার ক্ষমতায় আসার জন্য রাষ্ট্রের সর্বস্তরে দলীয়করণের নগ্ন সংস্কৃতি প্রদর্শন করে নাই এমন কোন সরকার বাংলাদেশে ভাগ্যে আজ অবধি জুটে নাই। এর ফলে যোগ্যতা ও মেধার মূল্যায়ন কোথাও হচ্ছে না। অতিমাত্রায় স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণের কারণে রাষ্ট্রের বিভিন্ন কাঠামো নড়বড় হয়ে পড়েছে। এই অনিয়মের কারণে প্রতিটি সেক্টরে দুর্নীতি আখড়া গড়ে উঠেছে। ব্যাংক- বীমা, শিক্ষা,চিকিৎসাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে চলছে চরম স্বেচ্ছাচারীতা। যার ফলে রাষ্ট্রের এগিয়ে যাওয়ার কাঙ্ক্ষিত গতি ব্যাহত হচ্ছে। দায়িত্বহীনতার সংস্কৃতি যেমন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি গোটা দেশে অশান্তি, উচ্ছৃঙ্খলতা, অরাজকতা যেন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজনৈতিক সহিংসতা, পরমতঅসহিষ্ণুতা,প্রতিপক্ষ দমননীতি (পালাক্রমে) ক্ষমতাশীল দলের যেন রুটিনওয়ার্ক বা দলীয় এজেন্ডার অবধারিত কর্মসূচি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি যেন একটি চলমান প্রক্রিয়া। যে দল যখন ক্ষমতায় আসে তারা নিজেদের ভয়ংকর মূর্তি নিয়ে জাতির সামনে হাজির হন। ক্ষমা, উদারতা ও মহানুভবতার পরিবর্তে হৃদয়ে প্রতিশোধ পরায়ণতা কাজ করতে থাকে। যা কোন সভ্য দেশের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। এই চলমান প্রতিহিংসা জাতির অভ্যন্তরে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও আন্তরিকতাকে সমূলে ধ্বংস করে দিতে যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছে। যে জাতি মনের দিক থেকে উন্নত, সে জাতি জ্ঞানে ও সম্পদের দিক থেকেও উন্নিত লাভ করে। পৃথিবী ঐ জাতিকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে। ইতিহাস বলে,বাঙ্গালি বীরের জাতি। তারা কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করতে জানে না।

অতীতে সকল অন্যায়, অবিচার, জুলুম, শোষণের বিরুদ্ধে বাঙ্গালিজাতি সম্মিলিত প্রয়াসে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল। ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় বিজয় ছিনিয়ে এনে বাঙ্গালি জাতিসত্তাকে বিশ্বমান চিত্রে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। বাঙ্গালিজাতির জাতীয়তাবোধ, স্বদেশপ্রেম আর অদম্য সাহসিকতা দেখে সেদিন গোটা পৃথিবী বিস্ময়ে অবাক হয়েছিল। তারুণ্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র, অকাল প্রয়াত কবি ‘সুকান্ত ভট্টাচার্য ‘ তা অবলোকন করে লিখেছিলেন, ‘শাবাশ বাংলাদেশ, এই পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয় / জ্বলে -পুড়ে- মরে ছারখার/ তবু মাথা নোয়াবার নয়।’

কালের ব্যবধানে জাতির জীবন থেকে এই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস হারিয়ে যেতে বসেছে। মোহগ্রস্ত রাজনীতি, ক্ষমতালোলুপ নেতৃত্ব পুরোজাতিকে ধীরেধীরে অনিবার্য সংঘাতের পথে নিয়ে যাচ্ছে। স্বার্থের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে কেউকেউ জাতির ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। এ জাতির ভাগ্য নিয়ে এমন নির্মম রসিকতা করার অধিকার কে? কাকে? কখন দিয়ছে? জানি, এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে না। তবে এটি সত্য যে, জাতি হিসেবে বাঙ্গালি খুবই সংকটাপন্ন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। এ জাতির সামনে দৃশ্যমান এমন কোন নেতা বা অভিভাবক নেই যে, যিনি ক্রান্তিলগ্নে জাতিকে মুক্তির সঠিক ঠিকানা দিবেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙ্গালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে জাতির জীবনে অসহায়ত্বের অশুভ সূচনা ঘটে। সেই থেকে আজ অবধি বাঙ্গালির জীবনে অভিভাবক শূন্যতা পূরণ হয়নি। তার অন্যতম করণ, কোন রাজনৈতিক দল / নেতৃবৃন্দ ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠতে পারেননি। তাই প্রকৃত জনসেবার প্রত্যয় থেকে জনস্বার্থে, জনগণের জন্য রাজনীতি করতে পারছেন না। আর এই কারণেই এদেশের কোন একজন রাষ্ট্র প্রধান/ রাজনীতিবিদ জাতির শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের স্থানটুকু অর্জন করতে পারেন নি যে,যার নেতৃত্বে নির্ভর করে জাতি সকল সমস্যার কাঙ্ক্ষিত সমাধানে পৌঁছতে পারবে। সেই লক্ষ্য নিয়ে কেউ এখন আর রাজনীতি করেন না। চিন্তা-ভাবনা করেন বলেও মনে হয় না। অনেকেই ক্ষমতা পেলে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে, দেশের বাইবে দেশের অর্থ-সম্পদ পাচার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।বিদেশে বাড়ি- গাড়ি কিনে নিজের আখের গুছানোর চেষ্টায় মেতে উঠেন। অনেকে আবার ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা রকম অবৈধ ব্যবসায়-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন।

ক্ষমতার উৎসবিন্দু থেকে রাজনীতির অনুশীলন করার কারণে যেকোন দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সংকুচিত হয়ে আসে। বলতে গেলে বাংলাশের বর্তমান অবস্থাও তাই। এতে ক্রমান্বয়ে রাষ্ট্রে সংঘাত ও সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে। সাম্প্রতিক একাদশ জাতীয়সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশ দৃশ্যত (সরকার ও বিরোধীদল) দুই শিবিরে বিভক্ত পড়েছে। এর বাইরে থেকে ছোটখাট কয়েকটা দল এখনো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। সরকারের বাইরে থাকা সব দলের দাবী একটি। তাহলো- অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে (ক্ষমতাসীনদলের প্রভাবমুক্ত) নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার গঠন। এক্ষেত্রে একদিকে ক্ষমতাসীনদের অনমনীয় মনোভাব, অপর দিকে রয়েছে বিরোধী দলগুলোর অকাট্য দাবী। যা দেখে জনমনে অজানা আতঙ্ক-উদ্বেগ বেড়েই চলছে। নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে যুদ্ধংদেহী মনোভাব অতীতের বীভৎস ঘটনাগুলো যেমন স্মরণ করিয়ে দেয় তেমনি আগামীর জাতি-রাষ্ট্রের প্রত্যাশিত পথচলাকে অবরুদ্ধ করে। এই অনাকাঙ্খিত রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারীতা থেকে বের হতে না পারলে জাতি হিসেবে এক সময় আমরা অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দি হয়ে যাবো। বাঙ্গালি জাতির জন্য এটা হবে আআত্মঘাতী। যে জাতি এত বড় লড়াই সংগ্রাম করে ভিনদেশীর কবল থেকে মুক্ত হতে জানে, স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে, তারা নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় জর্জরীত হয়ে স্বাধীনতার সুফল থেকে বঞ্চিত হবে তা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। এটা জাতির জন্য লজ্জার। এই দ্বন্দ্ব চলতে থাকলে তা হবে আমাদের চেতনার বিরুদ্ধে, ইতিহাস-ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে। প্রকারান্তরে এই দ্বন্দ্ব আমাদের মহান ভাষাআন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার চেতনার বিরুদ্ধে যাবে। কারণ উল্লেখিত সকল আন্দোলন-সংগ্রামই হলো বাঙ্গালি জাতির ঐক্যের সেতুবন্ধন। নীচক ব্যক্তি ও দলীয় জেদাজিদি ধরে রেখে আমাদের জাতীয় চেতনারমূলে কুঠারাঘাত করে জাতিকে কেউ বিভক্ত করবেন না।

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠবাঙ্গালির এই গর্বিত সুনাম পৃথিবীর বুকে অম্লান ও অক্ষত থাকতে দিন। অনেক রাজনৈতিক বিভাজন ও প্রতিহিংসার সুযোগ নিয়ে রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে বিশৃঙ্খলা হয়। একটি জনকল্যাণ মুখী, উন্নত, সমৃদ্ধ, ও শৃঙ্খলিত রাষ্ট্র গড়তে সকল রাজনৈতিকদল ও সম্প্রদায়ের সহযোগিতা অপরিহার্য। দ্বিধাবিভক্ত জনগোষ্ঠী নিজদেশ ও জাতিকে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে নিয়ে যেতে পারে না। এই অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলার সুযোগে দেশে ধর্মান্ধতা, গোড়ামী,সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, মাদকচক্র, দুর্নীতি,খুন, ধর্ষণ, ঘুষবাণিজ্যসহ সব ধরণের অপরাধ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। আইন,বিচার, শাসন বিভাগে নেমে আসে চরম নৈতিক অবক্ষয়। আলোচ্য সমস্যাবলী থেকে আমাদের দেশ কতটা মুক্ত ও পরিচ্ছন্ন তা বুঝতে খুব বেশি জ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নেই।কেবল আত্মসচেতন ব্যক্তি মাত্রই তা বুঝতে পারবে। বাংলাদেশের অতীত ও বর্তমানকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দীর্ঘ এসময় বহু শাসকের পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু শাসনেরউল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসেনি। নেতৃত্বে পরিবর্তন হলেও নীতির পরিবর্তন সে অর্থে হয় নি। তাই আমরা বৈষম্যহীন শাসনব্যবস্থা জাতিকে উপহার দিতে পারছি না।

আমরা যতদিন প্রতিহিংসার চর্চা থেকে বের হয়ে আসতে পারবো না ততোদিন এই গ্লানি বহন করে যেতেই হবে। এভাবে চলতে থাকলে জাতির অকাল পতন তরান্বিত হবে। অনিবার্য সংঘাত থেকে জাতিকে রক্ষা করতে হলে দোষারোপের রাজনীতি পরিহার করতে হবে। জাতিকে এগিয়ে নিতে নির্ভরযোগ্য নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে হবে। অতীত ইতিহাস, ঐতিহ্যকে মূল্যায়নে নিয়ে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে হবে। যারা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন, নতুন প্রজন্মের সামনে আধুনিক, দুর্নীতি ও বৈষম্যমুক্ত, জনকল্যাণ মূলক বাংলাদেশের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক চেতনাভিত্তিক শতবছরের রূপকল্প নিয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ভাবাদর্শ এদেশের নতুন প্রজন্মের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া এদেশকে নিশ্চিত গন্তব্যে নিয়ে যেতে এর কোন বিকল্প নেই। একাজটি নিশ্চিত ভাবে করতে পারলেই আঠারো বছরের মতো দুর্বার তারুণ্যশক্তি নিয়ে তরতর বেগে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। আর তা যদি করতে ব্যর্থ হন, তাহলে মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল অর্জন ও আত্মত্যাগ বৃথা যাবে। তখন জাতির আর কিছুই করার থাকবে না। শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবে আর হতাশার গ্লানি থেকে কবি ‘শামসুর রাহমানের’ কবিতার সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে থাকবে, ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ বিরানায়/ মুক্তিযুদ্ধ হায়, বৃথা যায়, বৃথা যায়, বৃথা যায়।’

লেখক : প্রভাষক, কবি ও প্রাবন্ধিক।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!