নিজস্ব প্রতিনিধি :
ডলার সংকটের প্রভাব পড়েছে ফেনীর ফল মার্কেটেও। আমদানী বন্ধ থাকায় খালি পড়ে আছে কোল্ড স্টোরেজ সমূহ। অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে অনেকেই দোকান বন্ধ রেখে সাময়িক ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। নানাভাবে ফল সংগ্রহ করলেও ভোক্তাদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। গতকাল একাধিক কোল্ড স্টোরেজের মালিক, খুচরা ব্যবসায়ী ও আড়ৎদারের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ এ ফল বাজারের চিত্র।
আমদানিকৃত ফলই বছরের বেশিরভাগ সময়ের চাহিদা পূরণ করে। ক’মাস ধরে জেলায় ফল আমদানী অনেকাংশে কমে যাওয়ায় হু হু করে বাড়তে থাকে দাম। এতে করে ফলের বাজারে একধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। শহরের মহিপাল ও শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কের একাধিক খুচরা বিক্রেতা জানিয়েছেন, কেজিপ্রতি কালো আঙ্গুর ৩৪০ টাকা, সাদা আঙ্গুর ২৫০ টাকা, নাশপাতি ২৭০ টাকা, আপেল প্রকারভেদে ২৪০ টাকা, ৩৫০ টাকা, আনার ৩শ থেকে ৩২০টাকা, মাল্টা ২৩০-২৪০ টাকা, কমলা ২৩০ টাকায় বিক্রি করছেন। দেশীয় ফল বরই প্রকারভেদে ১১০ থেকে ১৮০ টাকা, পেয়ারা ৬০-৭০ টাকা, আনারস এক জোড়া ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মহিপাল হাজী সৈয়দ আহমদ মার্কেটের মনছুর ফ্রুট এজেন্সির স্বত্ত¡াধিকারী মনছুর আহমেদ জানান, চাহিদানুযায়ী সরবরাহ কম হলেও ভারত থেকে কিছু কিছু ব্যবসায়ী আমদানী করছেন। তবে অন্যদিনের চেয়ে গতকাল দাম কিছুটা কমেছে। দুই-তিনদিন আগে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হওয়া ২০ কেজি ওজনের সাদা আঙ্গুর গতকাল বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৬শ টাকায়। কিছুদিনের মধ্যে এ সংকট কেটে উঠলে অন্যান্য ফলের দামও কমবে বলে তার আশা।
আরেক ব্যবসায়ী ছায়েদ ফ্রুট এজেন্সির মালিক মোহাম্মদ মাছুম জানান, ফলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। বাজারে আমদানি করা ফলের পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় দাম বেড়ে যায়। বেশি দামে ফল বিক্রি করলেও দাম বৃদ্ধির ফলে লাভ কমেছে, বিক্রিও কমেছে। ফল আমদানী হওয়ার বিষয়টি শুনেছি। সেসব ফল খুচরা পর্যায়ে পৌঁছলে দাম কমবে।
ছায়েদুল হক শেখ নামে এক ব্যবসায়ী জানান, মহিপাল কমিউনিটি সেন্টারের নিচে আল্লার দান ফ্রুট এজেন্সি ও নজির আহম্মদ ফল মার্কেটে শেখ এন্টারপ্রাইজ নামে দুটি দোকান রয়েছে। তিনি সাউথ আফ্রিকা, মিশর, চায়না থেকে ফল এনে ব্যবসা করেন। গত দুই মাস আগে একবার আনতে পেরেছিলেন। প্রায় দেড় কোটি টাকার ফল আনার চেষ্টা করলেও নতুন করে এলসি না দেয়ায় এখন আর আনা যাচ্ছেনা।
মহিপাল হাজী নজির আহাম্মদ কোল্ড স্টোরের ম্যানেজার আজিজুল হোসেন জানান, কোল্ড স্টোরের ৪টি কামরায় ছোট-বড় মিলিয়ে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার কার্টুন ফল সংরক্ষণ করা যায়। অন্য বছর এই মৌসুমে পুরো স্টোর ভর্তি ফল থাকলেও এখন রয়েছে মাত্র ৫ থেকে ৭ হাজার কার্টুন। এই স্টোরে ১৫ জন শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে। তাদের বেতন ও বিদ্যুত বিল পরিশোধে লোকসান গুনতে হচ্ছে।
স্টার লাইন গ্রæপের ভাইস চেয়ারম্যান জাফর উদ্দিন জানান, ডলারের দাম বৃদ্ধির ফলে আমদানি খরচও বেড়ে গেছে। এর ফলে ব্যবসায়ীরা আমদানি অনেকাংশে বন্ধ রেখেছেন। স্টার লাইন কোল্ড স্টোরে ১ হাজার ৫শ টন মালামাল মজুদ রাখা গেলেও বর্তমানে প্রায় খালি পড়ে আছে বলে তিনি জানান।
মহিপাল ফল আড়ৎদার মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ জানান, আমদানীকারদের কাছ থেকে বেশি দামে ফল কেনার পর হঠাৎ দাম কমে যায়। দীর্ঘদিন লোকসান গুনতে থাকায় তার দোকান নুর-এ পরশ ফ্রুটস এজেন্সি গত তিন মাস বন্ধ রেখেছেন।