নিজস্ব প্রতিনিধি :
ফেনী কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা সাইফুল্লাহ বলেছেন, আজকের জুমা আমাদের জন্য অতিব গুরুত্বপূর্ণ। যারা আজকের জুমার নামাজে উপস্থিত হতে পেরেছেন তারা অনেক সৌভাগ্যবান। আজকে আল্লাহর মেহমান হাজী সাহেবদের ধ্বনিতে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক’ মুখরিত হচ্ছে আরাফাতের ময়দান। কোরবানি করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য হাসিল করবো। পশু জবাই করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন ও কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কোরবানি হচ্ছে একটি উৎসব। এটি হচ্ছে ত্যাগের উৎসব। কোরবানি করার মধ্যদিয়ে আমরা ঈদুল আযহা উদযাপন করবো। কোরবানি হ আরবী শব্দ। কোরবানী করা যাবে ১০, ১১ ও ১২ এ তিন দিন। ১২ তারিখ মাগরিবের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত কোরবানি করা যাবে। তবে সবচেয়ে উত্তম কোরবানি হচ্ছে ১০ তারিখ।
শুক্রবার জুমার খুতবার আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, মানব জাতির ইতিহাস যত পুরোনো কোরবানির ইতিহাস তত পুরোনো। পৃথিবীর প্রথম মানুষ হযরত (আ:) ও আদি মাতা হাওয়া (আ:) এর দুইজন সন্তান হাবিল এবং কাবিল। সেখান থেকে কোরবানি সূচনা হয়েছে। তাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে হাবিল আল্লাহর হুকুম মেনে নিয়েছে কিš‘ কাবিল মেনে নিতে রাজি না। সে বলে আমার বোনকে বিয়ে করবো। কিš‘ ইসলামী শরিয়তে তা হারাম। হাবিল এটা দুম্বা কোরবানি করেন। আর কাবিল কোরবানি জন্য সংগৃহীত নিকৃষ্ট মানের সামগ্রী উৎসর্গের জন্য পাহাড়ের চ‚ড়ায় রেখে আসেন। হাবিল যে কোরবানি দিয়েছে সেই কোরবানি আসমান থেকে আগুন এসে দুম্বা জ্বালিয়ে দিয়ে আল্লাহ দরবারে কোরবানি কবুল করেন। কাবিল দায়িত্বপালনে হেঁয়ালিপনা অবাধ্যতা তার কোরবানিকে নষ্ট করে দেয়। তাই তাঁর কোরবানি মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের দরবারে কবুল হয়নি। ভাই হাবিল তার ভাই কাবিল কে বুঝানো চেষ্টা করলো যে তুমি মুত্তাকিদের অন্তভ‚ক্ত হও এবং তুমি আল্লাহকে ভয় করো। আমি আল্লাহর আইন মানি আমার কোরবানি কবুল হয়েছে। আর তুমি আল্লাহর আইন না মানায় তোমার কোরবানি কবুল হয়নি। একটি কাকের যে জ্ঞান সেই জ্ঞান কাবিলের মধ্যে ছিল না। নিজের ভাইকে মেরে ফেলে কিভাবে লাশ গোপন করবে সেই জ্ঞান তার কাছে ছিল না। সেটি কাক তাকে শিক্ষা দিয়েছে।
ফেনী আলিয়া কামিল মাদরাসার এ মুহাদ্দিস আরো বলেন, আপনারা মনে রাখতে হবে ঈদের নামাজের আগে কেউ কোরবানি করবেন না। ঈদের নামাজের আগে কেউ কোরবানি করলে তার কোরবানি হবে না। যে যেখানে কোরবানি করবেন সেই এলাকায় বা পাড়া-মহল্লায় যখন ঈদ জামাত হবে তারপর পশু কোরবানি করবেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন- ‘কুল ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়াইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন’ অর্থাৎ আমার নামাজ আল্লাহর জন্য, আমার কোরবানি আল্লাহর জন্য, আমার জীবন আল্লাহর জন্য ও আমার মরন আল্লাহর জন্য। বড় গরু এবং একাধিক পশু কোরবানি দি”িছ এটি কি মানুষকে দেখানোর জন্য, নাকি আল্লাহর সš‘ষ্টি অর্জন? আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন আমার জন্য কোরবানি গরুর গোস্ত কিংবা রক্ত কিছুই পৌঁছবে না। আল্লাহর দরবারে পৌঁছবে আল্লাহর প্রতি কার বেশী দরদ ছিল সেটি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মনের খবর জানেন।
মাওলানা সাইফুল্লাহ আরো বলেন, কোরবানির পশুটা নিখুঁত ও দেখতে সুন্দর কিনা সেটি ভালোভাবে দেখবেন। চোখ ঠিক আছে কিনা? পশমগুলো ঠিক আছে কিনা? নাক ঠিক আছে কিনা? লেজ ঠিক আছে কিনা? কান ঠিক আছে কিনা? পা ঠিক আছে কিনা? গোস্ত আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে কিনা? সবকিছু দেখে সুন্দর ও সুদর্শন পশু ক্রয় করা উত্তম। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, গরু, মহিষ, দুম্বা, ভেড়া, উট ছাগল এগুলো আমার এক একটা নির্দশন। কোরবানির পশু দেখাশোনা করা এবং তাকে লালন-পালন করা তাকওয়ার বহি:প্রকাশ। তাকবির দেয়ার ক্ষেত্রে আপনারা সর্তক থাকবেন। শনিবার ফজরের নামাজ থেতকে প্রত্যেক ফজর নামাজের পর পর রবি, সোম, মঙ্গল ও বুধবার আসর নামাজ পর্যন্ত তাকবির দিবেন। পুরুষরা উ”চস্বরে ও মহিলারা আস্তে আস্তে তাকবির দিবেন। কোরবানি দেয়া ওয়াজিব ও তাকবির দেয়া ওয়াজিব। উ”চস্বরে তাকবির পড়তে পড়তে ঈদের নামাজে যাবেন। ফজর নামাজ পড়ে আপনারা ঈদের নামাজের জন্য প্র¯‘তি নেয়া শুরু করে দিবেন। ঈদের দিন ইশরাকের নামাজ পড়া জায়েজ নেই। পশু জবাইয়ের সময় হাতে গণনা করে নাম দেয়ার প্রয়োজন নেই। আপনার নিয়ত হ”েছ বড়। আপনারাতো আগেই নিয়ত করে নিয়েছেন। যারা এ আমলটি করেছেন যে- দাড়ি-চুল ও নখ কাটেননি তারা কোরবানি করে এগুলো পরিস্কার করবেন। ধারালো ছুরি দিয়ে পশু জবাই করবেন।
তিনি আরো বলেন, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আপনাদের যাদেরকে কোরবানি করার তাওফিক দিয়েছেন তারা কোরবানি করবেন। কিš‘ যাদের কোরবানি করার তাওফিক নেই তাদের খোঁজখবর রাখা আপনার আমার দায়িত্ব। আপনার পাশের বাড়ি কিংবা পাশের বাসায় কেউ কেউ থাকতে পারেন যে কোরবানি করতে পারছেন না। মনে রাখবেন অনেকে আপনার বাড়িতে গোস্ত নিতে আসবেন না। আপনি দায়িত্ব নিয়ে তাদের বাসা-বাড়িতে গোস্ত পৌঁছে দিবেন। লজ্জায় আপনাকে বলবে না যে সে কোরবানি করছেন না। আপনি তাকে গোস্ত দিবেন। আত্মীয়-স্বজন ও গরীবদের জন্য তিন ভাগের এক ভাগ দিয়ে দিবেন। কারন তিনি আপনার প্রতিবেশী। আপনি ই”ছ করলে সব গোস্ত খাইতে পারবেন। কিš‘ আপনার প্রতিবেশী কোরবান দিতে পারেননি। এ ব্যাপারে আপনারা সর্তক থাকবেন। কোরবানি করা ওয়াজিব আর জোহরের নামাজ আদায় করা ফরজ। আপনারা কোরবানির গোস্ত কাটার সময় জোহরের নামাজ পড়তে ভুলে যান। এ বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। ঈদ কে ঘিরে নারী-পুরুষ পর্দা মেনে চলতে হবে। ঈদ বলে কিছুতেই বেহায়াপনায় জড়িত হওয়া যাবে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সব বিষয়গুলো মেনে সঠিকভাবে আমল করে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।