শরিফুল ইসলাম অপু
একটি দেশের কিংবা রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে দেশের তরুণ প্রজন্ম। গত দুই দশকে আমাদের তরুণ প্রজন্ম ধীরে ধীরে মেধাহীন হয়ে পড়েছে। সৃজনশীল কর্মকান্ডে তাদের অংশগ্রহণ কমে গেছে। নেতৃত্বগুন কিংবা সাংগঠনিক সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়ছে আমাদের তরুণ প্রজন্ম। তারা আজ বিপদগামী, তাদের সামনে নেই কোন ইতিবাচক দিক নির্দেশনা। যার ফলে সমাজে বেড়ে গিয়েছে অস্বস্তি, অসম্মান ও অসুস্থ্য প্রতিযোগিতা।
ক্রীড়াই শক্তি, ক্রীড়াই বল, ক্রীড়া নিয়ে এগিয়ে চল। বহুল পরিচিত এই শ্লোগান আজ প্রায় বিলীন। সুস্থ্য ধারার বিনোদন বলে একটি বিষয় রয়েছে আমাদের সমাজে। ক্রীড়াকে সেই বিবেচনায় সবার উপরে রাখা যায় নির্ধিদ্বায় । ক্রীড়া চর্চা কেবল ঐ ক্রীড়াবিদকে সুস্থ্য রাখে, বিষয়টি এটুকুই নয়। বরং এর মাধ্যমে পুরো একটি জাতিকে সমৃদ্ধ করা সম্ভব। ক্রীড়ায় মেধা ও মননের বিকাশ ঘটে, পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে আসে খ্যাতি।
ক্রীড়াচর্চা তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় করতে পারলে সমাজের অনেকটুকু সমস্যা কেটে যাবে বলে মনে করি। বিশেষ করে বর্তমান সময়ের মাদকাসক্তি, ইভটিজিং ও কিশোর গ্যাং এর মতো অপরাধ সমুহ অনেকাংশে কমে আসবে। একটা সময়ে তরুণ-যুবরা ক্রীড়া চর্চায় বেশ সম্পৃক্ত ছিলো। স্কুল-কলেজ শেষে বিকেলের সময়ে ক্রীড়া চর্চায় মেতে উঠতো অধিকাংশ। সেসময়ে মেধাবীর সংখ্যাও তাই বেশী ছিলো। ছিলো সৌজন্যতাবোধ ,ছিলো একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি। কালের পথ-পরিক্রমায় এটিতে ভাটা পড়েছে। প্রযুক্তির ভুল ব্যবহার ও অপসংস্কৃতির দৌরাত্ম্যে সেসব থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তারা।
উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা তথ্য-প্রযুক্তির প্রজন্ম সৃষ্টিতে উঠে-পড়ে লাগলাম। অপরিকল্পিত ভাবে সবার হাতে হাতে মুঠোফোন আর ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে ‘ডিজিটাল’ করণের নামে শুরু হলো মেধাহীন চেষ্টা।
প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির ব্যবহারের চেয়ে আমরা বেশী শিখলাম এর অপব্যবহার। একটি সুন্দর, সুস্থ্য ও স্থিতিশীল সমাজ ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে ক্রীড়াঙ্গনকে আরও বেগবান করতে হবে। তরুণদের এতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। মাঠ পর্যায়ে খেলাধুলা আয়োজনে গুরুত্ব বাড়াতে হবে।
এক্ষেত্রে সংগঠকদের বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে। মাঠ পর্যায়ে সঠিক সংগঠকদের খুঁজে বের করে তাদের সুযোগ করে দিতে হবে। তাদের কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে হবে, অনুপ্রাণিত করতে হবে । আমাদের সমাজে এখন কাজের মানুষদের দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়, এতে সামনে চলে আসে ‘কাজ করার ভান’ করা সংগঠকরা। এতে করে খেলাধুলার সঠিক পরিবেশ খুঁজে পাওয়া যায়না,যার ফলে তরুণদের আর এতে সম্পৃক্ত করা যাচ্ছে না। মনে রাখা জরুরী, সংগঠন করা সহজ, কিন্তু সংগঠক হওয়া কঠিন।
সত্যিকারের ক্রীড়া সংগঠকদের সমন্বয় করতে হবে, তাদের মাধ্যমে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। সৃজনশীল নানা আয়োজন করে শিশু-কিশোরদের আগ্রহ ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের মধ্যে খেলাধুলার প্রবণতা সৃষ্টি করতে হবে,অভিভাবকদের মাঝে ক্রীড়া চর্চার গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে সমাজের বিশিষ্টজনদের, ক্রীড়ায় পৃষ্টপোষকতা বাড়াতে হবে। পরিবেশ যথাযথ হলে পৃষ্ঠপোষকও পাওয়া সহজ হয়ে যাবে। এদেশের একটা পরিচিত চিত্র ছিলো, মাঠে-ঘাটে, পাড়া-মহল্লার রাস্তায়-অলিগলিতে খেলছে শিশুরা। এচিত্র আবার ফিরিয়ে আনতে হলে দায়িত্ব নিতে হবে সরকার সহ সামাজিক সংগঠকদের। স্থানীয় প্রশাসন, জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে সার্বজনীনভাবে ভাবতে হবে। যোগ্যতা বুঝে কাজের বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। কাজের মানুষদের খুঁজে বের করে তাদের হাতে তুলে দিতে হবে ক্রীড়ার বহুমুখী চর্চা। এতে দেশ যেমন উপকৃত হবে, তেমনি সমাজও হবে শান্তিপূর্ণ, সৌহার্দ্যপূর্ন। যা এখন বেশ জরুরী।
লেখক : ক্রীড়া সংগঠক।