আলী হায়দার মানিক
দৈনিক ‘ফেনীর সময়’ ফেনীর সংবাদপত্র জগতের ইতিহাস পাল্টে দেয়ার নাম। তখন ছোট্ট শহর ফেনী থেকে দৈনিক পত্রিকা বের করা ছিল দু:স্বপ্নের। সেই দুঃস্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন আধুনিক সংবাদপত্রের অন্যতম কারিগর জনাব মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন। তাঁর সাথে ছিলেন এক ঝাঁক তরুণ-নবীন ও মেধাবী সংবাদকর্মী। রাষ্ট্র তথা প্রজাতন্ত্রের সুশাসন নিশ্চিত করতে সংবাদ মাধ্যম পাহারাদারের ভূমিকা পালন করে। রাষ্ট্রের কল্যাণমূলক ও জনগুরুত্বপূর্ণ সর্বোপরি সুশাসন যেমন সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসে ঠিক তেননি সংবাদ মাধ্যম সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করে রাষ্ট্রকে উন্নয়নের দিকে ধাবিত করে। এদিক থেকে সংবাদপত্রকে রাষ্ট্রের চতুর্থস্তম্ভ (ঋড়ঁৎঃয ঊংঃধঃব) বলা হয়। আবার সাংবাদিকতা একটি মহান ও চ্যালেঞ্জিং পেশা। একটি কৌশল, চিন্তার পরিবর্তন, ধ্যান-ধারণা বিবর্তন, সমাজ বিপ্লব কিংবা সাংস্কৃতিক রূপাস্তরের ধারক-বাহক। সে শুধু ইতিহাস নির্মাণ করে না-ইতিহাস নির্মাণের সাহায্য করে, পথ নির্দেশনা দেয়। সাংবাদিকতা মানুষের জীবন আচরণের এক নিত্যসঙ্গী। সাংবাদিকতা একটি মহৎ ও সম্মানজনক চ্যালেঞ্জিং পেশা। সাংবাদিকতা জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, কঠোর শ্রমসাধ্য, সীমিত আয় উপার্জন নির্ভর একটি পেশা। তবে এটা পৃথিবীর একটি আদর্শ পেশা হিসেবে স্বীকৃত।
ফেনীকে বলা হয় সাংবাদিকতার সূতিকাগার। এখানে যুগে যুগে জন্ম নিয়েছে দেশ সেরা সাংবাদিক। সেই সাংবাদিকতা পেশায় নিজেকে জড়িয়ে নিই ২০০৩ সালের দিকে। আমার সাংবাদিকতা পেশাই নয় শুধু, যিনি আমার ব্যক্তিগত জীবনেরও অভিভাবক জনাব মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন এর সাংবাদিকতা দেখে আমার ব্যক্তিগতভাবে সাংবাদিকতা পেশার প্রতি আগ্রহ বাড়ে সেই হাই স্কুল জীবন থেকে। সেই থেকে এ পেশার প্রতি আমার জড়িয়ে থাকা। ২০০৫ সালের ৩০ অক্টোবর জনাব মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন সম্পাদিত সাপ্তাহিক আলোাকিত ফেনী প্রকাশিত হয়। তখন থেকে সংবাদপত্রের সাথে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত হয়ে আছি। তখনকার সময় আলোকিত ফেনী বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। আলোচিত অনেক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
২০০৯ সালের ১৭ মার্চ ছিল ফেনীর সংবাদপত্র জগতের এক ঐতিহাসিক দিন। সেইদিন ফেনীর তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোমিনুর রশিদ আমিন দৈনিক ‘ফেনীর সময়’ এর ডিক্লারেশন প্রদান করেন পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রকাশক জনাব মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন এর হাতে। সেইদিনও উপস্থিত থেকে ইতিহাসের অংশ হয়ে আছি। সেই থেকে অধ্যবধি পত্রিকাটির সাথে যুক্ত রয়েছি।
২০০৯ সালের ১৭ জুন দৈনিক ‘ফেনীর সময়’ উদ্বোধনী সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। তৎকালীন জেলা প্রশাসক জনাব আবদুল কুদ্দুস খান প্রধান অতিথি থেকে ফেনী প্রেসক্লাবে পত্রিকার মোড়ক উম্মোচন করেন। মোড়ক উন্মোচনের দিন ফেনী প্রেসক্লাবে উপস্থিত অনেকেই বলেছেন ১৮ জুন কি ২০০৯ইং অর্থাৎ কাল কি পত্রিকা বের হবে? মফস্বলে তখন সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা বের করা খুবই কষ্টসাধ্য কাজ সেখানে দৈনিক পত্রিকা বের করা ছিল দুঃস্বপ্নের মত। ১৮ জুনও পত্রিকা বের হয়ে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়। সেই দুঃস্বপ্নকে যুগান্তকারী রূপ দিয়েছেন আধুনিক সাংবাদিকতা ও মফস্বল সাংবাদিকতার স্বপ্নদ্রষ্টা জনাব মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে আসছে। দৈনিক ‘ফেনীর সময়’ এখন বৃহত্তর নোয়াখালীর সর্বাধিক প্রচারিত পত্রিকা।
দৈনিক ‘ফেনীর সময়’ এর সাথে রয়েছে এক ঝাঁক তরুণ মেধাবী উদীয়মান সংবাদকর্মী। যাদের লিখনিতে আজ পত্রিকাটি এ জনপদের সেরা পত্রিকা হিসেবে পাঠকনন্দিত হয়েছে। পাঠক আমাদের একমাত্র আস্থা ও ভালোবাসার ঠিকানা। পাঠক আমাদের স্বপ্ন দেখান। আমরা আপনাদের সাথে আছি। আপনারাও আমাদের সাথেই থাকুন। আজকের এ আনন্দের দিনে আমি ব্যক্তিগতভাবে আমাদের অগণিত পাঠক, শুভার্থী, শুভাকাঙ্খি, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের জানাই রক্তিম শুভেচ্ছা ও প্রাণঢালা অভিনন্দন।
সংবাদপত্রের সাথে যুক্ত হওয়া একটি গৌরবের বিষয় এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এ জগতে নেই কোন অর্থ, বৃত্ত ও প্রাচুর্য। রয়েছে পাহাড় সমপরিমান সম্মান। সেই সম্মানের মায়ায় সত্যিকারের সংবাদপত্র প্রেমীরা সময় কাটিয়ে থাকেন। হাঁটি হাঁটি পা পা করে মাস, বছর, যুগ ও শতাব্দী পার করে থাকেন। যাঁরা এ সংবাদপত্রের মায়ার জালে আবদ্ধ হয়ে থাকেন তারা কিন্তু এখানে টাকার অংক কষেন না। এ পেশায় যুক্ত হওয়ার পর যারা নিয়মিত তারা ধীরে ধীরে নেশায় আশক্ত হয় ওঠেন। নিজের স্বাভাবিক জীবন-যাপনে ব্যাঘাত ঘটলেও পেশার প্রতি সম্মান ও মায়ার জালে আবদ্ধ হওয়ায় ছাড়তে পারেন না এ পেশা। কিন্তু যুগের পর যুগ কষ্ট সহ্য করতে হয় সবাইকে।
সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। পৃথিবীতে শত শত কোটি মানুষ বসবাস করে থাকেন। সবাই কোন না কোন পেশায় যুক্ত রয়েছেন। এমন কোন পেশা নেই যে পেশাকে মহান পেশা বলা হয়। শুধু মাত্র সাংবাদিকতাকে মহান পেশা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এ সংবাদপত্রে যুক্ত হওয়ার পর অনেকের অভাব-অনটন লেগেই থাকে। কিš‘ কারন একটাই যে সে যেন নিজেকে মায়া ও ভালোবাসার জালে অবদ্ধ করে নিয়েছে। এখানে রয়েছে নানা মুখী জটিলতা ও কঠিন এবং কন্টকাকীর্ণ পথ। আর এ কন্টকাকীর্ণ পথ মাড়িয়ে যেতে হবে বহুদূর। যে পথ শুদূর প্রসারিত। সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হয়ে অনেকে পরিবারের সাথে দেয়া কমিটমেন্টও ঠিক রাখতে পারেন না অনেক ক্ষেত্রে। সংবাদপত্রের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের পরিবারও অনেকাংশে তাদের উপর অতিষ্ঠ বলা যায়। এ মহান পেশায় যুক্ত থেকে ফেনীর কৃতি সন্তানরা জগত বিখ্যাত সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ইতিহাস সেটি স্বাক্ষী দিচ্ছে। ফেনীতে সাংবাদিকতায় সুনাম অর্জন করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংবাপত্রে উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন। তাদের অনেককে আমরা হারিয়ে ফেলেছি। সংবাদপত্র জগতে দৈনিক ‘ফেনীর সময়’ এর যাত্রা হাজার বছর অব্যাহত থাকুক এমনটি প্রত্যাশা রইল।
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক ফেনীর সময় ।