নিজস্ব প্রতিনিধি :
ফেনী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নেজারত শাখায় জারিকারক পদে চাকরী করেন জহির আহমেদ। বেতন তুলতে মিজান রোডের সোনালী ব্যাংকে যেতে সিএনজি অটোরিক্সায় উঠেন তিনি। পথিমধ্যে তাকে চেতনানাশক দিয়ে অজ্ঞান করে দেয় দূর্বৃত্তরা। একপর্যায়ে তাকে দাগনভূঞা পৌর শহরের একটি টিনশেড ঘরে আটকে বিবস্ত্র করে মারধর করে। দাবী করা হয় মুক্তিপণ। তাকে উদ্ধারের জন্য সাহায্য কামনা করে সহকর্মীদের মোবাইল ফোনে জানানো হলেও অনেকে বিশ্বাস করতে চায়নি দিনদুপুরের এমন ঘটনা।অবশেষে জেলা নাজির কবির আহমেদের মাধ্যমে এনডিসি সজীব কুমার রুদ্র বিকাশে ২০ হাজার টাকা পাঠালে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
এ ধরনের ঘটনার শিকার শুধু জহিরই নন, জেলা শহর সহ বিভিন্ন এলাকায় পরপর একাধিক ঘটনায় ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে জনমনে। এসব ঘটনায় ব্যবহৃত সিএনজি অটোরিক্সার বেশিরভাগই নিবন্ধনহীন। এ কারনে চক্রের সদস্যদের ধরতে পুলিশকে বেগ পেতে হচ্ছে।
তদন্তকারি সূত্র জানায়, জারিকারক জহির উদ্দিনকে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় জড়িত দাগনভূঞা পৌর এলাকার শিমুল ও জায়লস্কর ইউনিয়নের রফিকুল
ইসলাম রাকিব নামে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। রিমান্ডে তারা কয়েকজনের তথ্য দিয়েছে। সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই জসিম উদ্দিন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে সংগঠিত এ ধরনের তিনটি ঘটনায় মামলা হয়েছে। অপর একটি অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। গত মাসের ৩ আগস্ট শহরের শিল্পকলা একাডেমী সম্মুখস্ত শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কে ছিনতাই করতে জড়ো হলে পুলিশ সেখানে ছুটে যায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় লক্ষ্মীপুর সদর থানার কসবা এলাকার সামছুল হকের ছেলে কফিল উদ্দিন (৩০), একই এলাকার মফিজ মিয়ার ছেলে মো: সেলিম (৩০), একই জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানার চিলাদী গ্রামের জেবল হকের ছেলে মো: সুমন (২০), সফিক উল্যাহর ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন (২৮) কে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে দুটি স্টিলের ছোরা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় শহর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো: হায়াত উল্লাহ বাদি হয়ে ফেনী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
এদিকে গত ১২ সেপ্টেম্বর ফেনী শহরে সিএনজি অটোরিক্সায় বাসায় ফেরার পথে হেনস্তার শিকার হন এক স্কুল শিক্ষিকা। তিনি একজন সাংস্কৃতিক কর্মীও। দীর্ঘক্ষন গাড়ীতে দুই বখাটে দুইপাশে ও একজন কোলে বসে হাত-মুখ, গলা চেপে, শরীরের বিভিন্ন স্থানে খামচি এবং মাথা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কিল-ঘুষি দিয়ে আঘাত করে বখাটেরা। তার সাথে ধস্তাধস্তির পর গলায় থাকায় ৬ আনা ওজনের স্বর্ণের চেইন ও নগদ ৮ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছিনতাই চক্র। একপর্যায়ে তাকে ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের কাশিমপুর এলাকায় নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় তারা। ঘটনার পর থেকে ওই নারী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এ ঘটনায় তার অভিযোগটি ডিবি পুলিশ তদন্ত করছেন।
১৭ সেপ্টেম্বর ফুলগাজী উপজেলার পুরাতন মুন্সিরহাট থেকে রবিবার বিকালে সিএনজি অটোরিক্সায় ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নারী চিকিৎসক ফারিন। ছিনতাইকারীরা তাকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে টাকা ও জিনিসপত্র নিয়ে যায়।
ফেনীর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ আনোয়ারুল আজিম ফেনীর সময় কে জানান, ফেনী জেলায় রেজিষ্ট্রেশন থাকা ৫ হাজার সিএনজি গাড়ী রয়েছে। অথচ ৮ থেকে ১০ হাজার গাড়ী চলাচল করে। প্রতিমাসে অন্তত আড়াইশ থেকে ৩শ গাড়ী আটক করা হয়। এ জেলায় ড্যাম্পিং ব্যবস্থা না থাকায় ইলেক্ট্রনিক্স মেশিনে মামলার মাধ্যমে জরিমানা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
ফেনীর পুলিশ সুপার জাকির হাসান ফেনীর সময় কে জানান, ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ছিনতাই ঘটনায় রোধ ও চক্রের সদস্যদের ধরতে পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে। ঘটনায় ব্যবহৃত সিএনজি অটোরিক্সার নিবন্ধন না থাকায় অপরাধীদের শনাক্ত করতে বিলম্ব হচ্ছে।