আরিফ আজম :
ফেনীতে এক বছরে কৃষি খাতে ব্যাংক থেকে ২৭১ কোটি ৮২ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। আগের বছরের তুলনায় এর পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৩৪ কোটি টাকা। ৪৪টি ব্যাংক থেকে ৪৬ হাজারের বেশি ব্যক্তি এ ঋণ পেয়েছেন। কৃষি ব্যাংক সর্বোচ্চ ঋণ বিতরণ করলেও বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানায়, সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮শতাংশ মুনাফা হারে ফেনীতে ৪৬ হাজার ৭শ ১৫ ব্যক্তিকে ২৭১ কোটি ৮২ লাখ টাকার ঋণ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ঋণ বিতরণ করেছে কৃষি ব্যাংক। তারা ১৬ হাজার ৮শ ১৮ ব্যক্তিকে ৮৪ কোটি ৯ লাখ টাকার বেশি ঋণ দিয়েছে। ১ হাজার ৪শ ৭০ জন ব্যক্তিকে ইসলামী ব্যাংক দিয়েছে ৫৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এছাড়া বিতরণ তালিকায় শীর্ষে থাকা বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) ৩ হাজার ৮শ ২৪ ব্যক্তিকে ১৯ কোটি ১২ লাখ, সোনালী ব্যাংক ৩ হাজার ৪৮ জনকে ১৫ কোটি ২৪ লাখ ও জনতা ব্যাংক ২ হাজার ৪শ ৬২ ব্যক্তিকে ১২ কোটি ২৬ লাখ টাকা বিতরণ করেছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কৃষি খাতের মধ্যে ফসল, কৃষি / সেচ যন্ত্রপাতি, দুগ্ধ উৎপাদন, ডেইরী, পোল্ট্রি/ মৎস্য, কৃষি পণ্যের প্রক্রিয়া ও বাজারজাতকরণ, দারিদ্র বিমোচন, মসলা উৎপাদন খাতে ঋণ বিতরণ করা হয়। ফসলে ৯২ কোটি ৯ লাখ, কৃষি / সেচ যন্ত্রপাতিতে ২ কোটি ৯ লাখ, ডেইরীতে ৪০ কোটি ৩০ লাখ, পোল্ট্রিতে ৪১ কোটি ২৫ লাখ, মৎস্যে ৩৮ কোটি ৫১ লাখ, কৃষি পন্যের প্রক্রিয়া ও বাজারজাতকরনে ২ কোটি ৪৮ লাখ, দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচীতে ৪২ কোটি ৭ লাখ, মসলা উৎপাদনে ৪ শতাংশ ৪৮ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়।
সূত্র আরো জানায়, জেলায় রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকের ৩৪১ কোটি ৪ লাখ টাকা বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ থাকলেও অর্জিত হয়েছে প্রায় ৮০শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত ৭টি ব্যাংক ১৬২ কোটি ২৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বিতরণ করেছে। বেসরকারি ব্যাংক ৩৭টির মধ্যে ৩৬টি ব্যাংক ১০৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকার বেশি বিতরণ করে। এর মধ্যে জেলায় ঋণ বিতরণ না করা ব্যাংকের তালিকায় শুধুমাত্র মেঘনা ব্যাংকের নাম রয়েছে। ইতিমধ্যে জেলা কৃষি ঋণ বিতরণ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছেন। ইতিপূর্বেও ঋণ বিতরণের জন্য মেঘনা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে বেশ কয়েকবার তাগিদ দেয়া হয়।
অপর বেসরকারি ব্যাংক খাতের লক্ষ্যমাত্রার সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে প্রাইম ব্যাংক। ১০ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তারা শুধুমাত্র বিতরণ করেছে ৭০ হাজার।
মেঘনা ব্যাংক ফেনী শাখার ব্যবস্থাপক মো: জামাল উদ্দিন ফেনীর সময় কে জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনানুযায়ী ঋণ বিতরণে তারা প্রস্তুত থাকলেও গ্রাহকরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা না দেয়ায় ঋণ বিতরণ করা হয়নি।
জেলা কৃষি ঋণ বিতরণ কমিটির সদস্য সচিব ও সোনালী ব্যাংক ফেনী প্রিন্সিপাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো: হারুন উর রশিদ ফেনীর সময় কে জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সব ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দেয়া হয়েছে।
জেলা কৃষি ঋণ বিতরণ কমিটির আহবায়ক ও জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান ফেনীর সময় কে বলেন, কৃষিঋণ মেলা সহ বিভিন্ন প্রচারাভিযান চালাতে সভায় বেশ কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আশা করছি আগামী অর্থবছরে ব্যাংকসমূহ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে। এছাড়া যেসব ব্যাংক ঋণ বিতরণে ব্যর্থ কিংবা তুলনামূলক কম করেছেন তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।