দৈনিক ফেনীর সময়

ফেনীতে বহুমুখী সংকটে ইটভাটা মালিকরা দুশ্চিন্তায়

ফেনীতে বহুমুখী সংকটে ইটভাটা মালিকরা দুশ্চিন্তায়

নিজস্ব প্রতিনিধি :

ফেনীর বিভিন্ন স্থানে কাঁচা ইট প্রস্তুত করা থাকলেও বহুমুখী সংকটে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ভাটা মালিকরা। কয়লার দাম বৃদ্ধি, মাটি কাটায় নজরদারি ও শ্রমিক সংকটে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

ইটভাটা মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, জেলায় ছোট-বড় ৯৮টি ইট ভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার শ্রমিক। ইট পোড়ানোর মৌসুমে ৩-৪ মাস কাজ করেই তাদের সারা বছরের রোজগার হয়। চলতি মৌসুমে কয়লার সংকট ও দাম মাত্রাতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে মালিকরা প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প পরিমাণ কয়লা সংগ্রহ করে ভাটা চালিয়ে নিচ্ছেন।

সরেজমিনে বিভিন্ন ইট-ভাটায় গিয়ে দেখা যায়, গত বছরের উৎপাদিত ইটের বিক্রি প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিন্তু নতুন করে উৎপাদনে না যাওয়ায় ইট সংকট দেখা দিয়েছে। ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে সরকারি উন্নয়ন কাজে ঠিকাদাররা ইট কিনে কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। আর নতুন ইট উৎপাদনের পর যে দামে বিক্রি হবে তা বর্তমান বাজার দরের দ্বিগুন।

সদর উপজেলার খাইয়ারা ব্রিকস এর স্বত্ত¡াধিকারী নুরুল আফসার মজনু জানান, এক বছর আগেও যে কয়লা টন প্রতি ২০ থেকে ২২ হাজার টাকায় কেনা যেতো সেটি এখন ৩০ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। শুধু তাই নয় কুমিল্লার দাউদকান্দি, সিলেট, গাজীপুর কালিগঞ্জ, ভৈরব থেকে কয়লা আনতে পরিবহন ব্যয়ও বেড়ে গেছে। এভাবে কতদিন চালিয়ে নেয়া যাবে সেটিই এখন দেখার বিষয়।

ফেনী-মাইজদী সড়কের তেমুহনী সংলগ্ন তুষার ব্রিকস এর পরিচালক আমজাদ হোসেন মানিক জানান, ভাটা মালিকরা সরাসরি মাটি কিনেন না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভাটা মালিকরা জলাভূমি থেকে মাটি কিনতে চান। এ ব্যবসাকে ঘিরে অসাধু মধ্যস্বত্ত¡ভোগী রয়েছে। তাদের প্রলোভনে অনেক জমির মালিক মাটি বিক্রি করে থাকেন। দুই ফুটের অনুমোদন নিয়ে দেখা যাচ্ছে ৫ ফুট কেটে নিচ্ছে। এসবের কারণে ইট ভাটায় মাটি সংগ্রহে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

সোনাপুর ব্রিকস এর মালিক আবু তাহের জানান, একদিকে পরিবেশগত সমস্যা অন্যদিকে দিনদিন কয়লার দাম ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় তিনি ভাটা বন্ধ করে দিয়েছেন। গতবছর সীমিত পরিসরে চালিয়ে ৭০ লাখ টাকার বেশি লোকসান গুনেছেন।

হাইওয়ে ব্রিকস এর মালিক দেলোয়ার হোসেন মানিক জানান, গত মৌসুমে ৮ রাউন্ডে ৭ থেকে সাড়ে ৭ লাখ করে মোট ৬০ থেকে ৭০ লাখ ইট তৈরী হয়। কয়লার দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। ১ হাজার ১শ টাকা প্রতি ১শ ফুট মাটি এখন ১ হাজার ৬শ থেকে ১ হাজার ৮শ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এক সপ্তাহ ধরে ইট পোড়ানো হচ্ছে। এভাবে কতদিন চলবে জানিনা। ইট কেনার সাথে বিক্রির হিসাব মেলানো যায়না।

ফেনী জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জিএমহাট ব্রিকস এর মালিক আনিছুল হক মজুমদার জাহাঙ্গীর জানান, ব্রিকস ফিল্ড মালিকরা শাখের করাতে আটকে গেছে। এক্ষেত্রে হতাশ হয়ে পড়েছেন মালিকেরা। চলতি মৌসুমে একটি ইট উৎপাদনে ১৫ থেকে ১৬টাকা খরচ হবে। প্রচুর টাকা খরচ করে ১০ লাখ কাঁচা ইট কেটে রাখা আছ। পোড়াতে না পেরে লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন বলে জানান তিনি।

ফেনী জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও স্টার লাইন গ্রæপের ভাইস চেয়ারম্যান জাফর উদ্দিন জানান, জেলায় সরকারিভাবে ১২০টি ইটভাটার অনুমোদন থাকলেও পূর্বের বছর ৭০টি চালু ছিল। এবছর মাত্র ৫০টি ইতিমধ্যে চালু হয়েছে। কয়লার অভাবে এগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ইট কেনা মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ব্যাংক-বীমা ঋণ না দেয়ায় অনেক ইট ভাটা বন্ধ হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে মালিকরা সংকটের মধ্যে পড়েছেন। যার ফলে উন্নয়ন কর্মকান্ড অনেকাংশে স্থবির হয়ে পড়েছে। নির্মাণ সামগ্রীর অন্যতম উপাদান ইট। এটি টিকে রাখার জন্য সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ পাওয়া ও ভ্যাট-ট্যাক্স কমানোর জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবী জানান এ শিল্প উদ্যোক্তা।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান ফেনীর সময় কে বলেন, পরিবেশের ক্ষতি করে উন্নয়ন করা যাবেনা। সরকারি বিধি বিধান মেনে ইট উৎপাদন করতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করলে উন্নয়ন কাজ গতি পাবে। টপসয়েলের মাটি না কেটে পরিত্যক্ত ভূমি, জলাভূমি কিংবা খাল-নদীর পাড় থেকে মাটি সংগ্রহ করে ইট তৈরি করতে আহবান জানান তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!