আলী হায়দার মানিক :
ফেনী শহরের পাড়া-মহল্লা সহ গ্রামাঞ্চলে পাগলা কুকুরের উপদ্রব আশংকাজনক হারে বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে রাতের বেলায় পথচারীরা আতংকে পথ চলতে হয়। একইভাবে ভোরবেলায়ও মক্তব ও স্কুল-মাদরাসাগামীরা কুকুরের আক্রমনের শিকার হয়। কুকুরের কামড়ে আহত রোগীরা প্রতিদিন ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ভ্যাকসিন নিতে আসেন।
চিকিৎসকরা জানান, জলাতঙ্ক রেভিস ভাইরাসজনিত একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত কুকুর রোগটির প্রধান বাহক। এছাড়া বিড়াল, শিয়াল, বেজি, বানরও রোগটি ছড়াতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ফেনী পৌরসভার পূর্ব বিজয়সিংহ এলাকায় জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত পাগলা কুকুরের কামড়ে গত একসপ্তাহে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে নারী-পুরুষ ও শিশুরা রয়েছে। এ ঘটনায় ওই এলাকার মানুষের মাঝে ভয়, আতঙ্ক ও উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। আহতদের মধ্যে পূর্ব বিজয়সিংহের খোয়াজ মোহাম্মদ ভ‚ঁঞা বাড়ির সাইফুল ইসলাম সোহাগের ছেলে সাইমুন ইসলাম অনন্তর (৯), মো: সেলিমের মেয়ে সায়মা (৭) ও একই বাড়ির সাইদুল হকের মেয়ে ইবনাত (৮), হাজী বকর মেম্বার বাড়ির রুবেলের ছেলে ফাহিম (৮), হাজী বাসু মিয়া কন্টাক্টর বাড়ির আলী আশরাদের স্ত্রী রওশন আক্তার (৫৫) এর নাম জানা গেছে।
একাধিক ব্যক্তি জানান, বিগত কিছুদিন ধরে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায়, বাসা-বাড়ির সামনে, বাজার এবং পুরো পূর্ব বিজয় সিংহ এলাকায় কুকুরের দাপট বেড়েছে। প্রায় সময়ই এরা দলবেঁধে পথচারীদের বিরক্ত করছে।
কুকুরের কামড়ে আহত শিশু সাইমুন ইসলাম অনন্তের বাবা সাইফুল ইসলাম সোহাগ জানান, সন্ধ্যায় ঘরের সামনে পাগলা কুকুর এসে কামড় দিয়ে পালিয়ে যায়। এসময় তার কান্নার আওয়াজে বাড়ির লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। তখন তাকে ঔষধ খাইয়ে দেয় এবং পরদিন সকালে নিয়ে গেলে ভ্যাকসিন দেয়া হয়।
পূর্ব বিজয় সিংহের খোয়াজ মোহাম্মদ ভ‚ঁঞা বাড়ির নুরুল আলম খোকন বলেন, গত বেশ কিছুদিন কুকুর আতঙ্কে ভুগছি। সকালে দোকানের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে যাওয়ার পথে ঘর থেকে সিএনজি স্টেশন পর্যন্ত যাওয়া খুব কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ঘর থেকে বাহির হওয়ার পর কখন যে পাগলা কুকুরের কামড়ের শিকার হতে হয় এই আতংকে থাকতে হবে।
শিক্ষক আকতার হোসাইন জানান, আমরা ছোট বেলায় দেখেছি কুকুর নিধন করা হতো। এখন আগের মতো কুকুরও দেখা যায় না। সাম্প্রতিক সময়ে মানুষের মাঝে পাগলা কুকুর আতঙ্ক বিরাজ করছে। তখন খবর নিয়ে জানতে পারি কুকুর নিধনে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেই হিসেবে বোধহয় পৌরসভা কিংবা স্বাস্থ্য বিভাগ কুকুর নিধন করতে পারছেন না। তবে নাগরিক সুবিধার জন্য কিছু একটা উপায় বের করা উচিত।
হাজী বাসু মিয়া কন্টাক্টর বাড়ির রওশন আক্তার নামের এক নারী জানান, সকালে ঘর থেকে বের হতেই দেখি ঘরের সামনে একটি কুকুর এসে দাঁড়িয়ে আছে। ওই কুকুরকে তাড়া করলে সেই আমাকে কামড়ে পায়ের মাংস নিয়ে যায়। এসময় শোর-চিৎকারে বাড়ির লোকজন এগিয়ে এলে কুকুরটি পালিয়ে যায়।
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: মো: আসিফ ইকবাল ফেনীর সময় কে জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগীরা ভ্যাকসিন নিতে আসছে। এদের মধ্যে নারী-পুরুষ ও শিশুরা রয়েছে। তবে শিশুর সংখ্যা বেশি। তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এনিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ঘটনার সাথে সাথে আক্রান্ত স্থান ভালো ভাবে কাপড় ধোঁয়ার সাবান দিয়ে ধুঁয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
জানতে চাইলে ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী ফেনীর সময় কে জানান, কুকুর নিধনে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা জানিয়েছেন সাম্প্রতিক সময়ে পৌর এলাকায় কুকুরের উপদ্রব বেড়েছে।
মেয়র স্বপন মিয়াজী আরো বলেন, কুকুর নিধনে আমাদের ইচ্ছা থাকলেও উচ্চ আদালতের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ফেনী জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পৌরসভার পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে কুকুরের কামড়ে কোন রোগী গেলে সাথে সাথে যেন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। হাসপাতালে ভ্যাকসিনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রয়েছে।