আলী হায়দার মানিক :
পরশুরাম সীমান্তে অবস্থিত বিলোনিয়া স্থলবন্দর অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিশেষ অবদান রাখার কথা থাকলেও দেশের ভাগ্য উন্নয়নের তেমন একটা আলোর মুখ দেখেনি। এ স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে পণ্য রপ্তানী হলেও দীর্ঘ দুই বছর পর ৪ টন পেঁয়াজ আমদানী হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে বিলোনিয়া স্থলবন্দর চালু হয়। চালু হওয়ার পর থেকে আমদানি ও রপ্তানি স্বাভাবিক থাকলেও ২০১৯ সালে বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হলে বিএসএফ কাজ বন্ধ করে দেয়। যে অংশ আন্তর্জাতিক সীমারেখায় অবস্থিত। সে অংশের কাজ বন্ধ করে দেয়। প্রায় চার বছরেও কোনো সমাধান মেলেনি। এ স্থলবন্দর চালুর ফলে ত্রিপুরাসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্যে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি বেড়ে যাবে বলে ব্যবসায়ীরা আশা করলেও দীর্ঘ প্রায় ১৩ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি। এতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা হলেও কমবে বলে ধারণা ছিল। বাংলাদেশের স্থল বাণিজ্যের সিংহভাগই ভারতের সঙ্গে। কারণ ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে রয়েছে পৃথিবীর পঞ্চম দীর্ঘ সীমান্ত এলাকা। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০ লাখ লোক প্রতি বছর ভারতে পর্যটন, শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবা নিতে যায়। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার হলেও এ স্থলবন্দর অনেকটা নিষ্প্রাণ।
বিলোনিয়া স্থলবন্দর অফিস সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে সব পণ্য রপ্তানী হলেও পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, মরিচ, পাথর, কয়লা, সিমেন্ট, ইট, বালি, চিনি, ভুট্টা, গম, মসুর ডাল, ছোলা, সয়াবিন তেলসহ ১৫টি পন্য আসবে।
বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা আল আমিন ভূঁইয়া জানান, বিলোনিয়া স্থলবন্দর বিরোধপূর্ণ সমস্যা সমাধান হলে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আন্তর্জাতিক সীমারেখার ১৫০ গজের মধ্যে কোনো অবকাঠামো নির্মাণে গেলে দুই দেশের সম্মতি লাগে। এখানে অবকাঠামো নির্মাণ নিয়ে ভারত অলিখিতভাবে না করে দিয়েছে। এটা নিয়ে দিল্লিতে দ্বিপক্ষীয় সভা হয়েছে। আমরা আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে এটার সমাধান হবে। আমাদের আরও দুটি স্থলবন্দরে এ সমস্যা ছিল, সেখানেও সমাধান হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। স্থলবন্দর কর্তৃক ব্যবহার উপযোগী, অবকাঠামো উন্নয়ন, পণ্য লোডিং-আনলোডিং, পণ্য সংরক্ষণ, পরিচালনা ও ব্যবাপনার জন্য সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ঘোষিত ১৮১টি শুল্ক স্টেশনের মধ্যে ২৪টি স্থল শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। স্থলবন্দরগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠবে। বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবসা-বাণিজ্য আর আন্তর্জাতিক যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষে মানুষে সদ্ভাব, সংস্কৃতির আদান-প্রদান ও সৌহার্দ বৃদ্ধিতে অনন্য ভূমিকা পালন করবে।
বিলোনিয়া স্থলবন্দর সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুর রহমান জানান, বাংলাদেশ থেকে সিমেন্ট, প্লাস্টিকে বিভিন্ন পণ্য, বিভিন্ন রকম রশি ও বালি যাচ্ছে। ভারত থেকে বিগত প্রায় দুই বছর ৪ টন পেঁয়াজ এসেছে। ভারত থেকে ১৫টি পণ্য আসার কথা থাকলেও ভারতীয় সীমান্তের আশপাশে পণ্য আমদানি ও রফতানিতে খরচ বেশি হয় বলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এ স্থলবন্দর দিয়ে পন্য আমদানী করেননা বলে তিনি জানান।