আরিফ আজম :
‘কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন ছাড়া এ দেশের অগ্রগতি অসম্ভব’ এ কথা মাথায় রেখেই সরকার ও এশিয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে ফেনী জেলায় ৮৫০টি সেচ পাম্প স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করা হয়। ২০১৪ সালে শুরু হওয়া সেচ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প-মুহুরী সেচ প্রকল্প কয়েকদফা সময় বাড়িয়েও শেষ করতে পারেনি। শুধু তাই নয়, সদর উপজেলায় কাজ শেষ হওয়ার আগেই এক-তৃতীয়াংশ পাম্প নানা কারনে অচল হয়ে পড়ায় সেচ সুবিধা পাচ্ছেনা কৃষকরা। ফলে জেলাব্যাপী ৬শ কোটি টাকার এ প্রকল্প ভেস্তে যাওয়ার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আমনের পর কৃষকরা বোরো আবাদ করলেও পানি না পাওয়ায় অনেকে আবাদ করছেন না। কেউ কেউ শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে পানি নিয়ে আবাদ করতে হচ্ছে। অনেক এলাকায় শতশত একর জমি অনাবাদি পড়ে আছে।
কাজিরবাগ ইউনিয়নের সোনাপুর এলাকায় ১২০ একর জমি আবাদ করেছেন গাজী রফিক আহম্মেদ মিয়াধন। ফেনীর সময় কে তিনি জানান, সেচ পাম্পে কার্ড সিস্টেমে ১ হাজার টাকায় ৬-৭ ঘন্টা চলার কথা। এর মধ্যে বিদ্যুত চলে গেলে কিংবা যান্ত্রীক সমস্যা দেখা দিলে ওই টাকায় প্রয়োজনমত পানি পাওয়া যায়না। এজন্য শ্যালো মেশিন বসিয়ে পানি নিয়ে ধানের চারা রোপন করেছি।
ফরহাদনগর ইউনিয়নের কাটামোবারক ঘোনা এলাকার বাসিন্দা ওবায়দুল হক ফেনীর সময় কে জানান, সেচ পাম্প বসানো হলেও কোন সুবিধা পাওয়া যাচ্ছেনা। খরচ পোষাতে না পেরে তিনি সহ অনেকে ধানের বদলে শস্য আবাদ করেছেন। পানি পেলে উপকৃত হতেন বলে তিনি জানান।
বিভিন্ন সূত্র ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৪ সালে ফেনী জেলায় ৮৫০টি পাম্প বসানোর কার্যক্রম শুরু হয়। এর মধ্যে ফেনী সদর উপজেলার কালিদহ, কাজিরবাগ, ফরহাদনগর, লেমুয়া, ফাজিলপুর, ছনুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বসানো হয়েছে ৮৯টি। এর মধ্যে ৩৭টি পাম্পই অচল বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের আওতায় বসানো পাম্পের মদ্যে ২৪০টিতে ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ায় বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
ওই সূত্র আরো জানায়, কোন পাম্পের ট্রান্সফরমার চুরি হয়ে গেছে, কোনটিতে চুরির ভয়ে ট্রান্সফরমার বসানো হচ্ছেনা। নিম্মমানের ইলেকট্রিক পণ্য ব্যবহার করায় বিদ্যুত সংযোগ দেয়াই হয়নি। শুধু তাই নয়, ভুগর্ভস্ত পাইপ লাইনে মানহীন পাইপ ব্যবহার করায় পানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। এসব বিষয়ে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত উপজেলা পর্যায়ের সেচ কমিটির সভায় বেশ আলোচনা হলেও পাউবো ও বিএডিসি প্রতিনিধি কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।
মুহুরী সেচ প্রকল্প ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাঈন উদ্দিন আহমেদ কামরান ফেনীর সময় কে বলেন, “খাদ্য ভান্ডারে সহযোগিতায় সরকারের কোটি কোটি টাকার প্রজেক্ট। মানুষের উন্নয়নের জন্য এডিবির মাধ্যমে ৬শ কোটি টাকা দিয়েছে। সাড়ে ৮শ পাম্প বসানোর কথা। তাদের হিসাবে ৪শ ৪৫টি পাম্প বসেছে।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের হিসাবে ৩শটি বসেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ অকেজো, পাইপা ফাটা, ইলেকট্রিক্যাল পাম্প নষ্ট, সেকশন পাইপ খারাপ, ট্রান্সফরমার চুরি, মাটির নিচের পাইপগুলো একদিকে মানহীন অন্যদিকে গাড়ীর চাকার চাপে নষ্ট হয়ে গেছে। এর জন্য কাউকে দায়ী করা যাবে এমন ব্যবস্থাও নেই। সবমিলে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন নেই।”
ফেনীস্থ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদ শাহারিয়ার ফেনীর সময় কে বলেন, প্রকল্পটির একাধিকবার সময় বাড়ানো হলেও আগামী জুনের মধ্যে কাজ শেষের কথা রয়েছে।