দৈনিক ফেনীর সময়

ন্যাশনাল ব্যাংকে নতুন পর্ষদ পরিচালক পদ ফিরে পেলেন মিন্টু

নিজস্ব প্রতিনিধি :

বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে ব্যাংকটি পরিচালনার জন্য নতুন পর্ষদ গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও বাংলাদেশ ব্যাংকে নতুন গভর্নর নিয়োগের পর এই প্রথম একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে নতুন পর্ষদ গঠন করা হলো। নতুন পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ব্যাংকটির উদ্যোক্তা ও সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু।

ব্যাংকিং খাতের সূত্রগুলো জানিয়েছে, ন্যাশনাল ব্যাংকের আগের পরিচালকদের অনেকেই চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের নামে-বেনামে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ছিলেন। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ব্যাংকটিকে এস আলম গ্রুপের হাত থেকে মুক্ত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ইসলামী ব্যাংকসহ ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংক বর্তমানে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

নতুনভাবে পর্ষদ গঠনের পর ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক পরিচালক জাকারিয়া তাহের ও মোয়াজ্জেম হোসেন। পাশাপাশি ব্যাংকটিতে চারজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সাতজনের মধ্য থেকে ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান নিযুক্ত হবেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙ্গে দেওয়ার আদেশে স্বাক্ষর করেন। ওই আদেশে বলা হয়েছে, ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নীতিনির্ধারণী দুর্বলতার কারণে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার অবনতি, ব্যাংকিং সুশাসন ও শৃঙ্খলা বিঘ্ন করার মাধ্যমে ব্যাংক ও আমানতকারীদের স্বার্থের পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে পর্ষদ সম্পৃক্ত। এ জন্য ব্যাংক কোম্পানি আইন ৪৭ (১) ও ৪৮ (১) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও জনস্বার্থে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের বিদ্যমান পরিচালনা পর্ষদ বাতিলের আদেশ দেওয়া হলো। এই আদেশ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানোর জন্য ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) নির্দেশনা দেওয়া হয়।

আলাদা এক আদেশে ন্যাশনাল ব্যাংকে শেয়ারধারী পরিচালক ও স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। স্বতন্ত্র পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক জুলকার নায়েন, সীমান্ত ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুখলেসুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মেলিতা মেহজাবিন ও সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ আব্দুস সাত্তার সরকার।

জানতে চাইলে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘ব্যাংকটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে কয়েকটি গ্রুপ। এখন এটিকে পুনর্গঠন করার বিকল্প নেই। সেটা করারই চেষ্টা করা হবে।’

সংকটে থাকা বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সর্বশেষ গত মে মাসে পুনর্গঠন করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর সাড়ে চার মাস আগে আরও একবার ব্যাংক পর্ষদ পুনর্গঠন করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ন্যাশনাল ব্যাংক একসময় নিয়ন্ত্রণ করত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী সিকদার গ্রুপ। মে মাসে পর্ষদ পুনর্গঠনের সময় সিকদার গ্রুপকে ব্যাংক থেকে বের করে চেয়ারম্যান করা হয় চট্টগ্রামের কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানকে।

সেসময় পুনর্গঠিত পর্ষদে অন্য পরিচালকদের অনেকে এস আলম গ্রুপ সংশ্লিষ্ট ছিলেন। স্বতন্ত্র পরিচালকদের একজন ছিলেন হিসাববিদ রত্না দত্ত, যিনি এস আলম গ্রুপের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) সুব্রত কুমার ভৌমিকের স্ত্রী। আরেক পরিচালক এহসানুল করিম ছিলেন এস আলম গ্রুপের আইনজীবী। নতুনভাবে গঠিত পর্ষদে তাঁদের সবাইকে বাদ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংক প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা সুদ মওকুফের সুবিধা দিয়েছিল এস আলম গ্রুপকে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!