নিজস্ব প্রতিনিধি :
সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা পরীক্ষা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফির গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে আলোচিত হত্যার ঘটনায় আদালতে রায় ঘোষনার তিন বছর পর একটি স্বার্থান্বেষীমহল নতুন করে তার পরিবার নিয়ে ষড়যন্ত্র ও নুসরাতের চরিত্র নিয়ে নানা মিথ্যাচার শুরু করছে বলে অভিযোগ করেন নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। ওই চক্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নানাভাবে ভিডিও বানোয়াট কথাবার্তা প্রচার করে পরিবারকে সমাজে হেয়প্রতিপন্নসহ নানা ধরনের ভয়ভীতি-হুমকি প্রদান করছে। এতে পরিবারটি বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
রবিবার দুপুরে ফেনী প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান এ অভিযোগ করেন। লিখিত বক্তব্যে নুসরাতের ভাই নোমান বলেন, আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একটি কুচক্রীমহল পরিকল্পতভাবে তার বোনের চরিত্র হননসহ নানাপ্রন্থা অবলম্বন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে আদালতের রায়কে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, স্থানীয় এক সাংবাদিক ও বাংলাদেশে দন্ডপ্রাপ্ত আসামি আমেরিকায় পলাতক ইউটিউবার ইলিয়াস হোসেন বিপুল অর্থগ্রহনের বিনিময়ে পরস্পর যোগসাজশে তার বোন নুসরাত জাহান রাফির চরিত্র হনন করে মিথ্যা, ভিত্তিহীন, মনগড়া বক্তব্য, ত্রুটিপূর্ণ ছবি, ভিডিও ও অডিও এডিটিং করে একটি কন্টেন্ট তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে এক ঘৃণ্য অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। ইলিয়াস হোসেনের কন্টেন্টে পরিকল্পিতভাবে নুসরাতের উপর অগ্নি সন্ত্রাসের ঘটনাকে আত্মহত্যার ঘটনা বলে চালানো জোর প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। অথচ বাস্তবতা হলো, নুসরাত ছিলো অত্যন্ত সাহসী, মেধাবী ও প্রতিবাদী স্বভাবের একজন শিক্ষার্থী। ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে এ্যাম্বুলেন্সে নুসরাত তার গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়ার ঘটনার বর্ণনা দেয়। আমি তার বক্তব্য মোবাইল ফোন রেকর্ড করি। এমনকি আমার বোন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে (আইসিইউ) জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা অবস্থায়ও চিকিৎসকদের কাছে মৃত্যুকালীন জবানবন্দি দিয়েছে।
মাহমুদুল হাসান নোমান আরও বলেন, যেকোন ফৌজদারি মামলার বিচার কার্য সম্পন্ন হওয়ার সময় তথ্য-উপাত্ত বিচার-বিশ্লেষণ, মৃত্যুকালীন জবানবন্দি, সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও সাক্ষীদের জেরাসহ বাদী ও বিবাদীপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে দীর্ঘ শুনানীয়ান্তে আদালত মামলার রায় প্রদান করেন। এরপরও আদালত কর্তৃক ঘোষিত রায়ে সংক্ষুব্ধ পক্ষ উচ্চ আদালতে আপীল করার বিধানও রয়েছে। কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে নুসরাত জাহান হত্যা মামলার দন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের পরিবারের সদস্যদেরকে অবৈধ উপায়ে দন্ড মুক্তির প্রলোভন দিয়ে প্ররোচিত করে বিপুল অর্থের বিনিময়ে একজন স্থানীয় সাংবাদিক ও আমেরিকায় পলাতক আসামি ইলিয়াস হোসেনরা আদালতের ঘোষিত রায়ের বিরুদ্ধাচরণসহ কুৎসা রটনা, মানববন্ধন করতঃ বিতর্কিত মন্তব্য করে বিচারক তথা আদালতকে জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টায় মেতে উঠেছে। এ সকল বিতর্কিত ও অপরাধমূলক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি এটর্নী জেনারেল, আইন মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে।
প্রসঙ্গত; ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল মাদরাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে তিনি মারা যান। এ হত্যাকান্ড সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ মামলার রায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ ১৬ আসামিকে মৃত্যুদন্ড দেন। পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে অর্থদন্ড করা হয়। রায়ে সন্তুষ্ট হয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞা জানায় নুসরাতের পরিবার। বর্তমানে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামি কারাগারে রয়েছেন। আসামিদের আপীলের প্রেক্ষিতে মামলাটি হাইকোর্টে আপীল শুনানীর জন্য অপেক্ষমান রয়েছে।
এর আগে ২০১৯ সালে ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় তার মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করলে পুলিশ অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে। মামলা তুলে না নেয়ায় ৬ এপ্রিল নুসরাতের হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় বোরকা পরা পাঁচজন। এ ঘটনায় ৮ এপ্রিল তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান আটজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীপক্ষের মানববন্ধন-স্মারকলিপি
বহুল আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলার পুন:তদন্ত চেয়ে ফেনী শহরের ট্রাংক রোডে ব্যানার পোষ্টার-ফেষ্টুন হাতে মানববন্ধন করেছে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামীর পরিবারের সদস্যরা। রবিবার প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনের আগে তারা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর মামলাটি পুনঃতদন্তের দাবীতে স্মারকলিপি প্রদান করে। এর আগে একই দাবীতে গত ৮ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুরে সোনাগাজী পৌরশহরেও মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করে আসামি পক্ষের লোকজন।