দৈনিক ফেনীর সময়

ফেনী পাসপোর্ট অফিসে ৫শ আবেদন ঝুলে আছে

ফেনী পাসপোর্ট অফিসে ৫শ আবেদন ঝুলে আছে

আলী হায়দার মানিক :

ফেনী পাসপোর্ট অফিসে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারনে বিগত প্রায় দুই বছর যাবত ঝুলে আছে প্রায় ৫শতাধিক আবেদন। ঝুলে থাকা আবেদনগুলোতে ব্যাংক চালান, তথ্য ও ঠিকানা পরিবর্তন গোপনসহ নানা অনিয়ম ধরা পড়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফেনী শহরের মহিপাল সার্কিট হাউজ সড়কের প্রবেশপথে স্থাপিত আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। দালালের দৌরাত্বে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আবেদনকৃত পাসপোর্টগুলো ঝুলে আছে বছরের পর বছর। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকের জাল ব্যাংক চালান, তথ্য গোপন ও পরিবর্তিত তথ্য ব্যবহার করে আবেদন। জাল চালান, তথ্য ও ঠিকানা পরিবর্তন করায় প্রায় ৫শতাধিক পাসপোর্ট ঝুলে আছে। বিগত সময়ে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে গ্রাহকরা অতিষ্ঠ হয়ে যাওয়ায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কড়া নজদারিতে তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো: মাহবুবুর রহমান সহ একেএকে বদলী করা হয় বেশ কয়েকজনকে। সাম্প্রতিক সময়ে জেলা পুলিশের অভিযানে ৭ জন দালালকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনার পর অফিসের আশপাশে দালালদের আনাগোনাও কমতে থাকে।

নাম প্রকাশে অনিশ্চুক একাধিক গ্রাহক জানান, আমরা গ্রামের নিরীহ মানুষ। প্রবাসে যাওয়ার আশায় পাসপোর্ট করার জন্য পরিচিত লোকের মাধ্যমে আবেদন করি। ব্যাংক চালান করার জন্য সে টাকাও নিয়ে যায়। পাসপোর্ট পাবো পাইচ্ছি বলে কাল ক্ষেপন করতে থাকে। পরে অন্য লোকের মাধ্যমে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে খবর নেয়ার পর জানতে পারি জাল ব্যাংক চালান করে আবেদন করা হয়েছে। এরপর যার মাধ্যমে পাসপোর্ট জমা করেছি তাকে মোবাইল ফোনে বারবার কল করেও পাওয়া যাচ্ছে না। অপরদিকে পাসপোর্ট অফিস জানিয়েছেন জাল ব্যাংক চালানের দায়ে এই আবেদন বাতিল করা হবে। আমরা খেটে খাওয়া গরীব মানুষ। বিদেশে গিয়ে সামান্যটুকু জায়গা ভোগান্তি আর অনিয়মের আখড়া হিসেবে পরিচিত ছিল।

একসময়ে পাসপোর্ট তৈরি জন্য ফেনীর মানুষ নোয়াখালী গিয়ে আবেদন করতে হয়েছে। জনস্বার্থে সেটি ২০১০ সালে ফেনী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস শহরের পাগলা মিয়া সড়কে (জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উত্তর পাশে) ভাড়া বাড়িতে কার্যক্রম শুরু করে। দীর্ঘ ৮ বছর সেখানে কাজ করার পর নিজস্ব ভবন সার্কিট হাউজ রোডে কার্যক্রম শুরু করে ২০১৮ সালের শেষের দিকে। নোয়াখালী থেকে ফেনী আঞ্চলিক অফিস হওয়াতে মানুষ যেমন একদিকে উকৃত হয়েছে অন্যদিকে তেমনি হয়রানির শিকারও হতে হয়েছে। কিছুতেই হয়রানি ও অনিয়ম রোধ করা সম্ভব হয়নি। তবে অনিয়ম-দূর্নীতি বন্ধে একের পর এক বদলী সহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নানা উদ্যোগে জনগুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠানটিতে সেবার মান এখন অনেকটা বেড়েছে।

ফেনী পাসপোর্ট অফিসের সহকারি পরিচালক সাধন সাহা ফেনীর সময় কে জানান, সরকারি সেবা প্রধানের অন্যতম একটি বিভাগের নাম পাসপোর্ট অফিস। এখানে আসা মানুষদের সেবা দেয়ার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে আমরা কস্ট পাই তখনি যখন দেখি মানুষ অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নেয়। বিভিন্ন ব্যাংকের জাল চালান করে পর্যন্ত পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা হয়েছে। অথচ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এ চালান প্রদান করেনি। এছাড়াও তথ্য গোপন ও ঠিকানা পরিবর্তন করেও গোজামিলের আশ্রয় নিয়ে আবেদন করা হয়। যে আবেদনগুলো কখনো পাসপোর্ট ডেলিভারি দেয়া সম্ভব নয়।

তিনি আরো বলেন, জনবল সংকটের কারনে কিছুটা সেবার গতি কম হলেও জনবল নিরসন হলে সেবার মান আরো উন্নত হবে। ফেনী একটি প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা। জাতীয় পরিচয় না থাকলেও ভিসা-টিকিট থাকলেও জরুরী ভিত্তিতে এমআরপি পাসপোর্ট সেবা দেয়া হয়। অনেকে সাধারণ পাসপোর্টের ক্ষেত্রে তথ্যগত সংশোধন, পাসপোর্ট গোপন কিংবা সঠিক ডকুমেন্ট সম্পর্কে ধারনা না থাকায় হয়রানীর শিকার হয়ে থাকেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!