নিজস্ব প্রতিনিধি :
একসময় ভাঙা বেড়া আর টিনের ঘরে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হলেও ফেনীতে এখন সেই দৃশ্য কমতে শুরু করেছে। শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও গড়ে উঠছে সুউচ্চ ৪ তলা ভবন। এসব ভবনেই চলছে পাঠদান কার্যক্রম। মেঘের গর্জন কিংবা বৃষ্টি হলে এখন আর স্কুল বন্ধ করে দিতে হয়না। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার গত ১৪ বছরে ফেনী জেলা সদরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এমন অর্ধশতাধিক ভবন করেছে সরকার। এসব দৃষ্টিনন্দন ভবন নজর কাড়ছে এলাকাবাসীর। ভবন নির্মাণে শুধু শিক্ষক-শিক্ষার্থীই নয়, এলাকাবাসীও আনন্দিত।
সদর উপজেলার বলিগাঁও ইউনিয়নের মধুয়াই উচ্চ বিদ্যালয়। ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর টিনশেডের জরাঝীর্ণ ভবনে চলতো পাঠদান কার্যক্রম। ওই স্কুলে ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বর্তমানে সাড়ে ৩শ শিক্ষার্থী রয়েছে। এখানে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে চারতলা ভবনটি নির্মাণ করা হলে ২০২২ সালে উদ্বোধন করা হয়।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ফেনী পৌরসভা সহ সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে প্রায় ১শ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৮টি নতুন নির্মাণ করছে সরকার। এর মধ্যে ৩৯টির নির্মাণ কাজ শেষ করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ শেষের অপেক্ষায় রয়েছে। দুই ধাপে প্রতিটি ভবনের জন্য ২ কোটি ৮৫ লাখ ও ৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমান সরকার বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করে ফেনীর তিনটি সংসদীয় আসনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রতি আসনে ১০টি করে ৩০টি স্কুল ও ৬টি করে ১৮টি মাদরাসায় ভবন নির্মাণ করে। একইভাবে জেলায় ৩২টি স্কুলে ভার্টিকেল ভবন নির্মাণ করে। এছাড়া রাজস্ব তহবিলের আওতায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জেলায় ৭৫ থেকে ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০৮টি স্কুল ও মাদরাসায় ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এর মধ্যে বেশিরভাগ ভবনে পাঠদান চললেও ৩০শতাংশ ভবনের কাজ শেষের পথে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নান্দনিক ভবন নির্মাণ, আধুনিক ক্লাসরুমসহ অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো নির্মান করা হয়েছে। এক্ষেত্রে পুরোনো জরাঝীর্ণ ভবন, শ্রেণি কার্যক্রমে ব্যাঘাত হয় এমন স্কুলকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এসব ভবনে ১২টি শ্রেণিকক্ষ, একটি গার্লস কমনরুম, প্রধান শিক্ষক/সহকারী শিক্ষকদের কক্ষ, ১৬টি টয়লেট বøক, সিঁড়ি, পানি সরবরাহ এবং অভ্যন্তরীণ বৈদ্যুতিক কাজ ও সোলার সহ ৪তলা ভিত বিশিষ্ট ৪তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হয়। এর পাশাপাশি বিভিন্ন বিদ্যালয়ে জরাজীর্ণ ভবন মেরামত ও সংস্কার করা হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আহমেদ কনস্টাকশনের স্বত্তাধিকারী সাইফুদ্দিন আহমেদ জিতু জানান, তিনি মোটবী ইউনিয়নের লস্করহাট এসসি লাহা ইনস্টিটিউশনের নির্মানাধীন ভবন নির্মাণের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মান সরকারের বড় একটি প্রদক্ষেপ।
মধুয়াই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান ফিরোজ জানান, তিনি ২০১৮ সাল থেকে এ বিদ্যালয়ে নিয়োজিত রয়েছে। এখানে ভবন নির্মাণ হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীরা ব্যাপকভাবে উপকৃত হচ্ছে। শ্রেণিকক্ষের আর কোন সমস্যা নেই বলেও তিনি জানান।
ছনুয়া-ফাজিলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আলম জানান, একসময় টিনের ছাউনি আর বেড়ার ঘর ছিল। ২০১৪ সালে নতুন ভবন নির্মাণের পর বিদ্যালয়ের সভাপতি মোহাম্মদ বেলাল ও স্থানীয় বাসিন্দা শমরিতা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা: এবিএম হারুনের সহায়তায় টিনশেড ভবনটি সংস্কার করা হয়। সেখানে গ্রæপ ভিত্তিক ও ধর্মীয় বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি কার্যক্রম চালানো হয়।
পূর্ব কাছাড় তোফাজ্জল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ হানিফ জানান, ১৯৯৪ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার সময় বেড়ার ঘর ছিল। এরপর টিনশেড বিল্ডিং হলেও শ্রেণি কার্যক্রম চালাতে অনেক কষ্ট হতো। ওই ভবনটি জরাঝীর্ণ হলেও মেরামত করে চালানো হতো। ২০২২ সালে চারতলা নতুন ভবনের কাজ শেষ হয়েছে। এরপর থেকে এখানেই শ্রেণি কার্যক্রম চলছে। তবে জায়গা সংকট থাকায় ভবন আকারে ছোট হয়েছে বলে তিনি জানান।
ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ছনুয়া উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি করিম উল্যাহ বি.কম জানান, ছনুয়া স্কুল সহ তার ইউনিয়নে তিনটি প্রতিষ্ঠানে চারতলা ভবন নির্মিত হয়েছে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দারুন খুশি।
সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শুসেন চন্দ্র শীল ফেনীর সময় কে বলেন, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় নতুন স্কুল ভবনে নান্দনিকতা নিয়ে আসা হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদানের উপযোগী আধুনিক, বিজ্ঞানসম্মত ও পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণ, স¤প্রসারণ ও সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। ফেনী জেলা আওয়ামলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর সার্বিক সহযোগিতায় এই জেলায় উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান ফেনীর সময় কে বলেন, উন্নত পরিবেশে শিক্ষাদানের বিষয় বিবেচনায় রেখে বিদ্যালয়ের ভবন আধুনিক ডিজাইনে দৃষ্টিনন্দন করে নির্মাণ করা হচ্ছে। দৃষ্টিনন্দন নতুন ভবন নির্মাণের ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যালযে যেতে আগ্রহ বেেেড়ছে। একইসঙ্গে বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়বে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।