মোহাম্মদ সফিউল হক :
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে চা চুমুক দিতে দিতে আমরা সাধারণত যে কাজটি করি তা হলো সোশ্যাল মিডিয়াতে চোখ বুলানো। হোক সেটা ফেসবুক, টুইটার কিংবা ইন্সটাগ্রাম। আগে যেখানে সকালে নিয়মিত খবরের কাগজ পড়া হতো, সেখানে এখন চোখ বুলানো হয় ফেসবুক কিংবা ইন্সটাগ্রাম টাইমলাইনে। শুধু সকালবেলাই যে সোশ্যাল মিডিয়াতে চোখ বুলানো হয় তা কিন্তু না। দুপুর, বিকাল, সন্ধ্যা, রাত- যখনই সময় হয় সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের একবার ঢুঁ মেরে আসতেই হবে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি কেন আমাদের এত আকর্ষণ তা কি কখনও ভেবে দেখেছেন? সোশ্যাল মিডিয়া কি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নাকি বিনোদনের উদ্দেশ্যে সময় কাটানোর জায়গা?
বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা। অনলাইনে যতগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আছে, তারমধ্যে ফেসবুকই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। আর, এই ফেসবুক ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশ তরুণ। বর্তমানে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় সাত কোটি। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটিরও বেশি। প্রায় ছয় কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন নিজেদের মুঠোফোনে, আর তার অর্ধেক সংখ্যক মানুষ ফেসবুকে যুক্ত। মূলত এটি পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর অনেক ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক আছে। কখনো কখনো ইতিবাচকতা বেশি। আজকাল ফেসবুকে বিভিন্ন ভালো কাজের প্রচার-প্রচারণা চলে, এমনকি ফেসবুকে পেজ তৈরি করে গড়ে উঠছে সামাজিক ব্যবসাও। কেউ কেউ ফেসবুকে লাইভ করেও হয়ে উঠছেন সেলিব্রেটি। অনেকেই রাজনীতি, অর্থনীতি, দর্শন, সাহিত্য ও সামাজিক বিষয় নিয়ে লিখেন। কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার খবরও সবচেয়ে বেশি ছড়ায় ফেসবুকের মাধ্যমে।
খুব সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত হত্যা কিংবা আবরার হত্যার প্রতিবাদ সবচেয়ে বেশী হয় ফেসবুকে। বরিশালের আগৈলঝড়া উপজেলার সাবেক ইউএনও হাজী তারিক সালমান সেখানে ইউএনও থাকাকালীন স্বাধীনতা দিবসে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছিলেন। সেখানে বিজয়ী পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া এক শিশুর আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি সংযুক্ত করা হয় স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের দাওয়াতপত্রে। এই ছবিটিকে ‘বিকৃত’ আখ্যা দিয়ে ইউএনও সালমানের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে মামলা করেন স্থানীয় এক আইনজীবী নেতা। বিষয়টি চরমভাবে সমালোচিত হয়। ফেসবুকের মাধ্যমে পুরো দেশের মানুষই ইউএনও সালমানকে সমর্থন করেন, হয়রানিমূলক মামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। এভাবে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কানেও পৌঁছায়, তিনিও এ ব্যাপারে সালমানকে সমর্থন করেন।সিলেটে শিশু রাজন হত্যার বিচারও সম্ভব হয়েছে ফেসবুকে প্রচার ও প্রতিবাদের কারণে। রাজনের ওপর নির্যাতনের ভিডিওটি ভাইরাল হয়। এতে অপরাধী শনাক্ত হয়, সবশেষে দ্রুত তাদেরকে ধরে বিচারের আওতায় আনা হয়।
তবে ফেসবুকে চরম নেতিবাচক দিকের সন্ধানও পাওয়া যাচ্ছে। কিছুদিন আগে ঢাকার উত্তরা এলাকায় এক কিশোর হত্যার ঘটনায় তরুণদের ফেসবুক ব্যবহারের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। তারা ফেসবুক পেজ খুলে গড়ে তুলেছিল সন্ত্রাসী দল। এছাড়া ফেসবুক ব্যবহার করে তরুণীদেরকে প্রেমের কথা বলে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাও ঘটছে। ঘটছে ব্ল্যাকমেইলিং। ফেসবুকে ধর্মীয় উস্কানিমূলক ছবি ছড়িয়ে অনেক জায়গায় মানুষকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। পরবর্তীতে এ নিয়ে দেখা দিয়েছে সমস্যা। তবে, বেশিরভাগ তরুণরাই পড়াশোনা, সমাজসেবা, রক্তদানসহ নানা রকম সৃজনশীল-সৃষ্টিশীল কাজে যুক্ত হচ্ছেন, সংগঠন গড়ে তুলছেন ফেসবুকের মাধ্যমে।
আমরা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করি নিজের ব্যবসার প্রসারে প্রচারণার জন্য অথবা কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য কিংবা বন্ধু-বান্ধবের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার জন্য। এখন কথা বলা দরকার সোশ্যাল মিডিয়াতে আমরা প্রতিদিন কী ধরনের পোস্ট করি তা নিয়ে। ব্যক্তিগত পোস্টের কথা ধরলে আমরা কোথায় ঘুরতে যাচ্ছি, কোথায় খেতে যাচ্ছি, নতুন কোন পোশাক কিনছি, আমাদের সাথে প্রতিদিন মজার কী সব ঘটনা ঘটছে তার সবই সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। সেই সাথে আমাদের পছন্দের বিষয়গুলো, যেমন- কোনো গান, কবিতা, ছবি এগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়ে থাকি। কখনও কি ভেবে দেখেছি যে, এসব পোস্ট দেয়ার বিনিময়ে আমরা নিজেরা কী পাচ্ছি? বা এসব পোস্ট যারা দেখছে তাদের মনে আমাদের ব্যাপারে কী ধারণা তৈরি হচ্ছে? আমেরিকার উইসকন্সিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ক্যাটালিন এল. টোমা এবং কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জেফারি টি. কক এই বিষয়ে একটি গবেষণা করেন। গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে তারা বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা চাই নিজেদেরকে সবার সামনে ভালোভাবে উপস্থাপন করতে। নিজের জীবনের সুন্দর এবং মজার দিকগুলো সবার সামনে আমরা তুলে ধরি। কারণ নিজেকে ভালো একটি অবস্থানে দেখতে সবাই ভালোবাসে। এখানে বেশিরভাগ সময় আমরা আমাদের দুঃখ-কষ্টের গল্পগুলো লুকিয়ে রাখি। কারণ আমরা নিজেদের খারাপ সময়গুলো সবার সামনে তুলে ধরতে চাই না। তাই আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় যা যা পোস্ট করছেন তা দেখে আরেকজনের মনে এই ধারণা তৈরি করছে যে, আপনার জীবনমান তাদের থেকে ভালো। তাদের মতে, আমরা এসব পোস্ট দিয়ে অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আমরা অন্যদের দেখাতে চাই আমরা প্রতিদিন কী কী করি।
অনেক ক্ষেত্রে কেউ কেউ অস্বাভাবিক মাত্রায় সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে থাকেন। আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে সোশ্যাল মিডিয়াতে পড়ে থাকেন এবং তা একসময় নেশার পর্যায়ে চলে যায়, তাহলে আপনি স্বাভাবিকভাবে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন। কারো সাথে সামনা সামনি কথা বলা আর সারাক্ষণ মেসেজের মাধ্যমে কথা বলা কিন্তু এক না। অনেক সময় দেখা যায়, খেতে বসে সামনের জনের সাথে কথা না বলে আমরা মোবাইল ফোনে বুদ হয়ে আছি। আমাদের অভিভাবক সমাজে তাদের সন্তানদের নিয়ে যে মন্তব্যটি সবচেয়ে বেশি শোনা যায় তা মোবাইল ফোনে বেশি সময় কাটানো নিয়ে। টেলিভিশন, কম্পিউটার কিংবা মোবাইল ফোন– সবক্ষেত্রেই স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা নিয়ে আমাদের অভিভাবক সমাজ বরাবরই চিন্তিত। এর পেছনে অবশ্যই কারণ আছে।অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, খেলার মাঠ না থাকায় এবং বাইরে খেলাধুলার পরিবেশ না থাকার কারণে পিতা-মাতাই বিভিন্ন ইলেকট্রনিক খেলনা, মোবাইল ফোন, ভিডিও গেমস, ট্যাব, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, টেলিভিশন ইত্যাদি দিয়ে শিশুদের ব্যস্ত রাখছেন। এমন বাবা-মায়ের অসচেতনতার কারণেই শিশুদের ডিজিটাল মিডিয়ায় আসক্তি বাড়ছে। অন্যদিকে এই ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহার করে নতুন নতুন উদ্ভাবন দিয়ে বিশ্বে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে তরুণরা। মেধা বিকাশের পাশাপাশি সামাজিক, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে এগিয়ে আসছে তরুণরা। ডিজিটাল মিডিয়ার ভালো-মন্দ দুটি দিকই আছে। তবে অনেকাংশে ডিজিটাল মাধ্যমের নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহারে অলস হয়ে তরুণদের কর্মক্ষমতা ও মানসিক শক্তি কমে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দীর্ঘ সময় নিয়ে টেলিভিশন দেখলে বা বসে থাকলে শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ফলে অল্প বয়সেই শিশুর নানা সমস্যা দেখা দেয়। বড়দের অতিরিক্ত পরিমাণে স্মার্টফোন ব্যবহারের প্রভাব পড়ছে কিন্তু ছোটদের উপরও। যে বয়সে তাদের খেলতে মাঠে যাওয়ার কথা, সেই বয়সে তারা ঘরে বসে মোবাইল ফোন নিয়ে পড়ে থাকছে। মনোবিজ্ঞানী শেরি টারকেল এই বিষয়ে একটি কথা বলেছেন, “স্মার্টফোন আমাদের সবাইকে একসাথে আলাদা করে ফেলছে।”
জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক কিন্তু এই সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে বেশ চিন্তিত। মার্ক জাকারবার্গ ফেসবুক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মূলত সবার সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য। কিন্তু বর্তমান সমাজে এর ঠিক বিপরীত প্রভাবটাই পড়ছে। মানুষজন একে অপর থেকে আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। ফেসবুকের গবেষণা পরিচালক ডেভিড গিনেসবার্গ এবং গবেষণা বিজ্ঞানী মোইরা বুর্কের তত্ত্বাবধায়নে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে একটি পরীক্ষা চালানো হয়। পরীক্ষাটি ছিলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের ব্যক্তি মানসিকতার উপর কীরকম প্রভাব ফেলে তা জানার জন্য পরীক্ষাটির জন্য শিক্ষার্থীদের তিন দিন তিনটি ভিন্ন ভিন্ন কাজ করতে দেয়া হয়। প্রথম দিন তাদের বলা হয় ফেসবুকে নিউজ ফিড কেবল স্ক্রল করে যেতে। সাধারণ লাইক, কমেন্ট এসব করে যেতে। এগুলো করতে হবে একটানা ১০ মিনিট। ১০ মিনিট পর দেখা যায়, কোনো কাজ করার জন্য তারা খুব একটা ভালো মানসিক অবস্থায় ছিলো না। অর্থাৎ তারা অন্য কাজ করার প্রতি কিছুটা অনীহা দেখাচ্ছিলো।দ্বিতীয় দিনে তাদের বলা হয় কাছের কোনো বন্ধুর সাথে ১০ মিনিট ফেসবুকে চ্যাট করতে। ১০ মিনিট পরে তাদের মানসিকভাবে বেশ উৎফুল্ল দেখা যায়। তারা অন্য যেকোনো কাজ তখন বেশ আগ্রহের সাথে করতে পারছিলো। অর্থাৎ প্রথম দিনে তারা যেখানে একা একা সময় কাটিয়ে বিরক্ত ছিলো, সেখানে দ্বিতীয় দিনে এসে কারো সাথে যোগাযোগ করতে পেরে তারা বেশ ভালো মেজাজে ছিলো। তৃতীয় দিনে তাদের বলা হলো, ফেসবুকে কোনো একটি পোস্ট দিতে। সেই পোস্টের মাধ্যমে তারা অন্যদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে লাগলো এবং সেই অনুযায়ী লাইক-কমেন্ট আসতে লাগলো। এতে তাদের মন দ্বিতীয় দিনের চেয়েও বেশি উৎফুল্ল হতে দেখা যায়। তারা অন্য কাজে আরও বেশি আগ্রহ প্রদর্শন করে। এর কারণ ছিলো, তৃতীয় দিনে তারা একাধিক মানুষের সাথে যোগাযোগ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলো, যেখানে দ্বিতীয় দিন তারা যোগাযোগ করেছিলো কেবল একজনের সাথে।অর্থাৎ যত বেশি আমরা মানুষজনের সাথে কথা বলে সময় কাটাবো, ততোই আমাদের সময়টা ভালো কাটবে। সোশ্যাল মিডিয়ার আবির্ভাব হয়েছে মূলত এজন্যই। মানুষজনের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করার জন্য। কিন্তু তা না করে আমরা কেবল সময় কাটানোর জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় পড়ে থাকি। অর্থাৎ আমাদের বন্ধুরা এবং পরিবারের সাথে যে সময়টা কাটানো উচিৎ, তা আমরা করছি না। এজন্য সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারে আমাদের একটি লাগাম টানা দরকার।
তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে ইন্টারনেট কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নির্ভর অনেকেই ভুগছেন নিরাপত্তাহীনতায়। বিশেষ করে যেসব নারী ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, এদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের ছবি প্রকাশ করে হয়রানির শিকার হয়েছে এমন অনেক ঘটনাই আমরা দেখে থাকি। ইন্টারনেট বা অনলাইন ভিত্তিক কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন এমন নারীর সংখ্যা অনেক। অনলাইন দ্বারা প্রতিনিয়তই কোনো না কোনোভাবে বাজে মন্তব্য, নির্যাতন এবং সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন নারীরা। বাংলাদেশে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে ক্রমান্বয়। ভিন্ন ভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধের শিকারে নারীর সংখ্যাটাই বেশি। সম্প্রতি মার্কিন রিসার্চ ইনস্টিটিউট ডাটা অ্যান্ড সোসাইটির একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইন্টারনেট পুরুষের তুলনায় নারীদের জন্য বেশি ভয়ানক। কেননা অনলাইনে নারীদের হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এছাড়া জরিপে দেখা যায়, প্রতি ১০ জন নারী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মধ্যে একজন যৌন হয়রানির শিকার হন, যা পরুষের ক্ষেত্রে ২০ জন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মধ্যে একজন।
আমাদের দেশের রক্ষণশীল সমাজে মেয়েদের সামান্য খোলামেলা ছবি প্রকাশের কারণে সাইবার হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। বর্তমানে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ইন্টারনেটে আত্মপ্রদর্শনের প্রবণতা বেশি লক্ষণীয়। তাই অনেক সময় অসচেতনভাবেই কিশোরীরা সামান্য খোলামেলা ছবি দিয়ে থাকেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। অথচ একবারও ভাবেন না এর ফল কতটা মারাত্মক হতে পারে। ফেসবুক চ্যাট কিংবা ভিডিও চ্যাট থেকে ছবি বা ভিডিও নিয়ে একটু পরিবর্তন করে সেসব ছবি ইউটিউব অথবা বিভিন্ন সাইটে ছড়িয়ে দিচ্ছে অপরাধীরা। বিশ্বের পশ্চিমা সমাজে একজন মেয়ের খোলামেলা ছবি প্রকাশ বড় কোনো বিষয় না। কিন্তু বাংলাদেশের রক্ষণশীল সমাজে এমন বিষয়ে মানুষ নানা নেতিবাচক মন্তব্য করেন, অপকর্মে লিপ্ত হন। নারীদের অবশ্যই ইন্টারনেট জগতে বিভিন্ন সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। এছাড়া নিজের কোনো তথ্য বা ছবি প্রকাশের আগে অবশ্যই নিজের ব্যক্তিগত পরিধি নিয়ে চিন্তা করতে হবে।
অতিরিক্ত পর্যায়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আকৃষ্ট হয়ে থাকার ফলে আমরা বন্ধুশূন্যতায় ভুগতে পারি। অনলাইনে আমাদের হাজার বন্ধু থাকা সত্ত্বেও সামনা সামনি কথা বলার জন্য যদি কাওকে না পাওয়া যায়, তবে সেই বন্ধুত্বের কোনো মূল্য নেই। এর ফল হিসেবে হীনম্মন্যতায় ভোগা, একাকীত্বের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করার মতো ঘটনা ঘটা খুবই স্বাভাবিক। তাই আমাদের উচিৎ সোশ্যাল মিডিয়ার বাইরের যে জগতটি আছে, তার সাথে আরও বেশি যোগাযোগ সৃষ্টি করা।
লেখক : ব্যাংকার, কবি ও প্রাবন্ধিক।