নিজস্ব প্রতিনিধি :
ফুলগাজীতে চলমান দ্বন্ধে অস্থির হয়ে উঠছে ছাত্রলীগের রাজনীতি। কর্মসূচীতে যোগ দেয়া কর্মীদের টাকা আত্মসাত করায় খোদ উপজেলা সভাপতি রেজাউল কবির মজুমদার ইয়ামিনের উপর ক্ষুদ্ধ হয় তৃণমূল নেতাকর্মীরা। এর প্রেক্ষিতে প্রায় সবকটি ইউনিয়নের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা গণপদত্যাগের জেরে সব ইউনিয়ন ও কলেজ কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।
আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদের বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সের সামনে গত ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিতে জড়ো হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ওইদিন কর্মসূচীতে আসা নেতাকর্মীদের জন্য ইয়ামিনের কাছে ৬ হাজার টাকা দেন উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল আলিম মজুমদার। মুন্সিরহাট ইউনিয়ন থেকে তুলনামূলক বেশি নেতাকর্মী এলেও তাদের শুধুমাত্র ১ হাজার টাকা দিয়ে ইয়ামিন বাকি টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছিল। এনিয়ে মুন্সিরহাট ইউনিয়ন সভাপতি নোমান পাটোয়ারী ও সাধারণ সম্পাদক রমিজ উদ্দিন পাটোয়ারী রিপাতের সাথে ইয়ামিনের বাকবিতন্ডা হয়। হাতাহাতির একপর্যায়ে রিপাতকে মারধর করতে উদ্যাত হয় ইয়ামিন। এ ব্যাপারে ফেনী পৌরসভার লিবার্টি সুপার মার্কেটের জেলা ছাত্রলীগ কার্যালয়ে বসে সমাধান করেন সংগঠনটির জেলা সভাপতি তোফায়েল আহাম্মদ তপু ও সাধারণ সম্পাদক নুর করিম জাবেদ।
পদত্যাগী একাধিক নেতা জানান, জেলা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বিষয়টি মিমাংসা করার পরও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপির কাছে অভিযোগ করেন ইয়ামিন। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে আমজাদহাট ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ড সম্মেলন বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে উপজেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আমজাদ হাট ইউনিয়ন কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে সবাই একযোগে পদত্যাগ করেন।
উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আবদুল আলিম মজুমদার জানান, উপজেলা ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের মধ্যে দীর্ঘদিন বনিবনা হচ্ছিল না। তবুও জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পদত্যাগকারীদের অভিযোগ তদন্ত করা প্রয়োজন।
জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি তোফায়েল আহাম্মদ তপু জানান, বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিকভাবে বসা হয়েছে। পরবর্তীতে উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে সমাধানের কথা ছিল। এর মধ্যেই তারা পদত্যাগ করে।
উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন বাপ্পী জানান, ইয়ামিনের সাথে মুন্সিরহাটের রিপাতের ভুলবোঝাবুঝি হয়েছিল। সেটি সমাধান করেছি। এরপর সবার একসঙ্গে পদত্যাগপত্র ফেসবুকে দেখেছি। বিষয়টি জেলা ছাত্রলীগকে জানানো হলে তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।
উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল কবির মজুমদার ইয়ামিনের বক্তব্য জানতে দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। পদত্যাগ লিপিতে উল্লেখ করা হয়েছিল, “উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল কবির মজুমদার ইয়ামিন দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে পারেনি। তার অযোগ্য নেতৃত্বের কারনে দলীয় কর্মসূচীতে আসতে নেতাকর্মীরা অনিহা প্রকাশ করে ও অর্থলোভী। পদত্যাগীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার নির্মাণে দৃঢ় অঙ্গিকারাবদ্ধ ও পদপদবীতে না থেকেও ফেনী জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপির হাত শক্তিশালী করতে কাজ করে যাবে বলে পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করা হয়।”
এর আগে ২০২২ সালের ২৬ মে ফুলগাজী উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে রাকিবুল হাছান পিয়াশকে সভাপতি ও ফারুক হোসেন বাপ্পীকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মিজানুর রহমান আজহারীর পক্ষে পোস্ট শেয়ার করায় শিবির সম্পৃক্ততার দায়ে পিয়াশকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এরপর সভাপতি পদে রেজাউল কবির মজুমদার ইয়ামিনকে দায়িত্ব দেয়া হয়।