আরিফ আজম :
সকাল ৮টার দিকে কাজে যোগ দেন তবারক, আলী আজ্জমরা। রাত ৯টার পর বাসায় ফেরেন। প্রতিদিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রোজগার করেন ৫ থেকে ৬শ টাকা। জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এই আয়ে কোনমতে টানাটানি করে সংসার চালাচ্ছেন তারা। শুধু তবারক-আলী আজ্জমরাই নয়, তাদের মতো ফেনী শহরের তাকিয়া রোড, ইসলামপুর রোডের দিনমজুরদের প্রায় সবার জীবন চলে এভাবে। গতকাল বিকালে জীবনমান নিয়ে জানতে চাইলে তাদের চোখে-মুখে হতাশা। তাদের মতে, আয় না বাড়লেও প্রতিদিনই ব্যয় বাড়ছে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির এমন পরিস্থিতিতে সংসারের চাকা সচল রাখতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হয়।
বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ থানার সোনাখালী এলাকার বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেন খান তবারক কাজের খোঁজে ফেনী আসেন ১৯৮২ সালে। এদিক-ওদিক কাজ করে দিশা না পেয়ে ১৯৮৮ সালে ঢুকে পড়েন তাকিয়া রোড-ইসলামপুর রোডে। বিভিন্ন গোডাউন থেকে মালামাল পণ্য পরিবহনে লোড-আনলোড করে কেটে যায় প্রায় ৩৫ বছর। গ্রামের বাড়িতেই থাকেন স্ত্রী, ২ ছেলে ও ১ মেয়ে। বড় ছেলে রুবেল হোসেন প্রতিবন্ধী। ছোট ছেলে নাজমুল হাসান এইচএসসি পাশ করে এখন চাকুরীর খোঁজে রয়েছে।
তবারক জানান, “ফেনী শহরে আসার পর মাল লোড-আনলোডের জন্য এলাকা থেকে ২০-২৫ জনকে এখানে এনে কাজে লাগিয়ে দিই। কাজ শুরুর দিকে প্রতিদিন দেড়শ-দুইশ টাকা আয় হলেও সংসার ভালোই চলত। এখন প্রতিদিন আয় ৫ থেকে ৬শ টাকা। তবুও নিজে বাসা আর খাওয়া খরচ রেখে বাড়িতে টাকা পাঠালে তারাও চলতে কষ্ট হয়। প্রতিবন্ধী ছেলের খরচ চলে দার-দেনা করে। আয়ের সাথে খরচের কোন মিল নেই। প্রতিবন্ধী ছেলে এমনকি কারো অসুখবিসুখ হলেও ধারদেনা করতে হয়। তখন ধার শোধ করতেও সবসময় চাপ থাকে।”
৩৫ বছর বয়সী আলী আজ্জমের বাড়ি ফিরোজপুর জেলার জিয়ানগর থানায়। ২০০৮ সাল থেকে ফেনী শহরের তাকিয়া রোডে লোড-আনলোড শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। আলী আজ্জম জানান, “আগে ৩শ-৪শ টাকা পেলেও সংসার চালাতে বরকত পেতাম। এখন ৫-৬শ টাকায়ও বরকত হয় না। আলিম উদ্দিন রোডের বাসা বাড়ায় চলে যায় ৪ হাজার টাকা। প্রতিদিনই জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। এগুলো দেখার কেউ নেই। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শরীরের ঘাম ঝরিয়েও সংসার চালাতে দিশা পাইনা।”