দৈনিক ফেনীর সময়

সোনাগাজীতে বাড়ছে শিশু শ্রম, অটোরিক্সা চালিয়ে সংসার চলে শিশু রবিউল ও মাসুদের

সোনাগাজীতে বাড়ছে শিশু শ্রম, অটোরিক্সা  চালিয়ে সংসার চলে শিশু রবিউল ও মাসুদের

আমজাদ হোসাইন :

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে দীর্ঘ দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। তখন সোনাগাজী উপজেলার আদর্শগ্রাম এলাকার রবিউল ইসলাম (১১) স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল। সব ঠিক থাকলে এবার তার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার দীর্ঘ ছুটিতে বাবা চাকুরী চলে যাওয়ায় তার পরিচয়ই বদলে গেছে। সে শিশু রবিউল এখন ভাড়ায় চালিত অটোরিক্সা চালক।

প্রতিদিন সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে রিকশা চালিয়ে পুরো দিনের আয় সন্ধ্যায় তুলে দেন মায়ের হাতে। এতে তার ওপর তৈরী হয়েছে পরিবারের নির্ভরশীলতা। তাই বিদ্যালয়ে ফেরা নিয়ে পরিবার থেকেও কোন রকম তাগাদা নেই।

রবিবার দুপুরে পৌরশহরের জিরোপয়েন্ট এলাকায় কথা হয় করোনায় শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়া শিশু রবিউলের সঙ্গে।

রবিউল জানায়, বাবা-মা ও তারা দুই ভাই নিয়ে চার সদস্যের পরিবার। তার বাবা একটি ওয়ার্কশপে চাকুরী করতেন। বড় ভাইও বাবার সঙ্গে কাজ শিখতেন। করোনাকালে বাবা অসুস্থ্য হয়ে পড়ায় ওয়ার্কশপের চাকুরী চলে যায়। একই সঙ্গে তার ভাইও বেকার হয়ে পড়েন। পরে সংসারের হাল ধরতে রবিউল রিকশা চালানো এবং তার ভাই গ্রামে গ্রামে ফেরি করে সবজি বিক্রি শুরু করে।

রবিউল বলে, বর্তমানে তাদের দুই ভাইয়ের রোজগারের টাকা দিয়ে বাবার ওষুধ খরচ পরিবারের জীবিকা চলে। বড় ভাই স্থানীয় একটি বাজারে সবজি বিক্রি করে তার ভাই তেমন লাভ করতে পারেন না। পরিবারের কথা ভেবে রিক্সা চালানো ছাড়তে পারছে না। তবে রিকশা চালানোর পাশাপাশি তার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। কিন্তু মা-বাবা দুজনই অসুস্থ হওয়ায় একই সঙ্গে কীভাবে দুদিক সামাল দেবে, সেটি ভেবে পাচ্ছে না।

পৌরশহরের জিরোপয়েন্ট এলাকায় কথা হয়, আরেক কিশোর রিক্সাচালক মো: মাসুদের (১২) সঙ্গে। মাসুদ জানায়, করোনাকালে স্কুল বন্ধের সময় ঘরে বেকার বসে না থেকে এলাকার একজনের কাছ থেকে দৈনিক একশ টাকায় ভাড়ায় একটি ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা নেয়। সে স্থানীয় একটি মাদরাসায় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। দীর্ঘ বিরতির পর মাসুদের মাদ্রাসা খুললেও পরিবারের চাহিদা মেটাতে শ্রেণি কক্ষে ফেরা হয়নি তার।

মাসুদ বলে, তারা চার ভাই-বোন। বাবা নেই। এত দিন বড় ভাইয়ের আয়ে পুরো পরিবার চলত। কিন্তু করোনার সময় ভাই বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছেন। এরপর থেকে সংসারের খরচ নিয়ে তার মা বেকায়দায় পড়েছেন। ঘরে ছোট এক বোন রয়েছে। সংসারের হাল ধরতে রিকশা চালানো পেশায় তাকে যোগ দিতে হয়েছে। এখন রিকশা চালানো বাদ দিলে তার মা আর বোন বেকায়দা পড়বে।

এভাবে রবিবার পৌরশহর এলাকায় বিভিন্ন দোকানে, ওয়ার্কশপে ও যানবাহনে কাজ করা অন্তত ৭-৮জন শিশু-কিশোরের সঙ্গে কথা হয়। তারা করোনাকালে পরিবারের কথা চিন্তা করে শিক্ষাজীবন থেকে ঝড়ে পড়ার করুন কথা শোনায়।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় রবিউল ও মাসুদের মতো অনেক শিক্ষার্থীই লেখাপাড়া বাদ দিয়ে যোগ দিয়েছিল নানা কাজে। তাদের কেউ নিজের ইচ্ছায়, কেউবা পরিবারের প্রয়োজনে কাজে যোগ দিলেও তারা এখন পুরোদস্তর শিশু শ্রমিক। বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও তাদের স্কুলে ফেরার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কারণ তাদের আয়ের ওপরই পরিবারগুলো নির্ভরশীল।

জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: নুরুল আমিন বলেন, করোনায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন কেড়ে নিয়েছে। তবে উপজেলায় কতজন শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়েছে তার হিসেব করতে পারেননি। তবে শিশু শ্রম ও শিশু শ্রমিক কমাতে সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!