নিজস্ব প্রতিনিধি :
ফেনী কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা সাইফুল্লাহ বলেছেন, “বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স:) এর উম্মত হতে পেরে আমরা ধন্য। এজন্য আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের মহান দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। যে যে কোন বিষয়ের উপর কসম করা হয়। যেমন আমরা বলি আল্লাহর কসম। যে যে বিষয়টিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন সে সেই বিষয়ের উপর কসম করেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ফজরের কসম করেছেন। যে কোন ফরজ হতে পারে। রাতের শেষ অথবা দিনের শুরু। আল্লাহ তা’আলার কাছে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ফরজ। আল্লাহ তা’আলা যে ফরজের উপর কসম করেছেন সেটি হলো কোরবানীর দিনের ফরজ। আল্লাহ তাআলা ১০ রাতের কসম করেছেন। এখানে দিনও রয়েছে। যে ব্যক্তি ফজরের নামাজের পরে নিজকে অনুসন্ধানে বের করেন না রাসুল (স:) তাদের জন্য দোয়া করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জোড় ও বিজোড়ের কসম করেছেন। এখানে জোড় ধারা বুঝানো হয়েছে ১০ তারিখ কোরবানীর ঈদ ও বিজোড় ধারা বুঝানো হয়েছে হজ্ব।”
শুক্রবার জুমার খুতবার আলোচনায় তিনি আরো বলেন, “আল্লাহ বলেন আমি যে ফজরের জোড়ের বা কোরবানীর কসম করেছি এবং বিজোড় বা হজ্বের কসম করেছি এর মাধ্যমে তোমরা ভালো কাজগুলো আকড়ে ধরবে এবং খারাপ কাজগুলো বর্জন করো। হে জ্ঞানীরা তোমরা এগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহন করুন। এর মাধ্যমে ভালো-মন্দের পার্থক্য নির্ণয় করা হয়। আল্লাহ তা’আলার কাছে এ দিবসগুলোর মর্যাদা অনেক বেশী। বিশ্ব নবী বলেন হিজরী বছরের ৩৫৪ দিনের মধ্যে জিলহজ্ব মাসের প্রথম ১০দিনের চেয়ে উত্তম, সেরা এবং আল্লাহর কাছে অধিক ভালোবাসা ও পছন্দের আর কোন দিন হতে পারে না। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করেন ইয়া রাসুল আল্লাহ এ ১০টা দিন কি আল্লাহর পথে কোন মুজাহিদ জিহাদ করে সেই দিন থেকেও উত্তম ও অধিক গুরুত্বপূর্ণ? নবীজি বলেন উত্তম। মুজাহিদের জিহাদের ময়দানে যে কাজ করেছেন সেই সময় থেকেও জিলহজ্ব মাসের প্রথম ১০দিন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ ১০ দিনের যে কোন ইবাদত অনেক গুরুত্বপূর্ণ।”
ফেনী আলিয়া কামিল মাদরাসার এ মুহাদ্দিস আরো বলেন, “আপনারা কমপক্ষে ফজরের নামাজ ও এশার নামাজ জামাতের সাথে আদায় করবেন। তাহলে আপনারা পুরো রাত ইবাদতের সওয়াব পাবেন। আর যে ব্যক্তি এ দুই ওয়াক্ত জামাতের সাথে নামাজ আদায় করবেন তার বাকী ৩ ওয়াক্তও জামাত বিহীন পড়া হবে না। সুতরাং আপনারা জামাতের সহিত নামাজ আদায় করবেন। মনে রাখবেন ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম। ঈদের আগের দিনসহ ঈদের পরে ৪দিন রোজা রাখা হারাম বা কবিরা গুনাহ। আবার দেখুন একদিন রোজা রাখলে পুরো বছর রোজা রাখার সওয়াব আল্লাহ রাব্বুল আলামিন লিখে দিবেন। কেউ যদি আরাফাতের দিবসে রোজা রাখেন তাহলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ওই ব্যক্তির পিছনের এক বছরের গুনাহ মাপ করে দিবেন এবং সামনের এক বছরের গুনাহও মাপ করে দিবেন।”
মাওলানা সাইফুল্লাহ আরো বলেন,“ বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (স:) বলেছেন আমরা যত দোয়া করি না কেন সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দোয়া হচ্ছে আরাফাত দিবসের দোয়া। ওইদিনের দোয়ার কারনে জাহান্নাম হারাম করে দেয়া হবে। আর আমরা বেশী বেশী করে পড়বো ‘‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়া আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া ওয়ালিল্লাহিল হামদ’’ ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরে পুরুষরা উ”চস্বরে বলবে একবার আর মহিলা আস্তে আস্তে বলবেন। শুধু তাই নয় আমরা এ ১০দিন বেশী বেশী করে তাকবীর পড়বো এবং ইবাদত করবো।”
তিনি আরো বলেন, “কোরবানী করা যাবে ১০, ১১ ও ১২ তারিখ মাগরিবের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত। তবে উত্তম সময় ১০ তারিখ। তবে ঈদের নামাজ আদায় করার আগে কোরবানী করা যাবে না। আপনি হয়তো মনে করবেন ফেনী শহরে তো ৭টা ঈদ জামাত হয়েছে। আপনার গ্রামের পাড়া-মহল্লায় এখনো ঈদ জামাত হয়নি কিš‘ আপনি কোরবানী করে ফেলেছেন তাহলে আপনার কোরবানী হবে না। ৬ প্রকারের পশু দিয়ে কোরবানী করতে পারবেন। গরু ও মহিষ দুই বছর বয়স হতে হবে। ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা বয়স ১ বছর হতে হবে। উটের বয়স ৫ বছর হতে হবে। আপনারা সর্তক থাকবেন যে কোন পশু দিয়ে কোরবানী করা যাবে না, যেমন- পশু চোখে দেখে না, কানের ৩ ভাগে একাংশ নেই, দাঁত নেই, দেখতে অসুন্দর, পশু হাটাচলা করতে পারে না, লেজ না থাকলে, রোগ-বালাই আছে এ ধরনের পশু দিয়ে কোরবানী করা যাবে না। শিং দেখবো, নাক দেখবো, চোখ দেখবো, লেজ দেখবো, পা দেখবো, দেখতে সুদর্শন কিনা সব দেখে পশু ক্রয় করতে হবে। আপনি যার সাথে কোরবানী করছেন তার সব বিষয় ঠিক আছে কিনা সেইদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। না হয় একা কোরবানী দেয়া উত্তম। প্রয়োজনে আপনি ছাগল দিয়ে কোরবানী করেন। আপনার ভাই প্রবাসে আছে তার অনুমতি নেয়া ছাড়া কোরবানী করলে কোরবানী হবে না। এ জন্য আপনি আগে অনুমতি নিতে হবে। আপনারা মনে রাখবেন আকিকা ও কোরবানী এক সাথ করবে না। যেহেতু এ বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে তাই আমরা আকিকাটা আলাদা করবো। সাহাবায়ে কেরাম ছাগল ছাড়া আকিকা দেননি। তাই আমরা ছাগল দিয়ে আকিকা দিবো ইনশাল্লাহ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সহি-শুদ্ধ ও সঠিকভাবে চলার তাওফিক দান করুন। ”