আরিফ আজম :
ফুলগাজী উপজেলার মুহুরী নদীর চারটি স্থানে দীর্ঘদিন ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু তুলছে একটি চক্র। এতে নদী তীরবর্তী কবরস্থান, ফসলি জমি ও গাছের বাগান হারিয়ে যাচ্ছে। হুমকির মুখে রয়েছে মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধও। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ফেনী-বিলোনীয়া পুরাতন রেল সেতু।
এনিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করলেও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সালেহ আহম্মদ মিন্টু ও সাধারণ সম্পাদক একরাম পাটোয়ারীর নেতৃত্বে বালু তোলায় কেউ ভয়ে মুখ খুলতে সাহস করেনা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফুলগাজী বাজারের পুরাতন রেললাইন সংলগ্ন স্থানে ৬টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। এর পাশেই রয়েছে ফসলি জমি আর গাছের বাগান। জমিতে আবাদ রয়েছে বোরো ধান। অল্প অল্প ভেঙ্গে ফসলি জমি নদীতে পড়ে যাচ্ছে। ফসলি জমির পাশ দিয়ে বালু তোলার পাইপ টানা হয়েছে। বালু তোলার কারণে ফসলি জমি ভেঙ্গে নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে। এসব বালু দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে আশরাফিয়া মাদরাসার পাশে মাছের ঘের ভরাট করা হচ্ছে।
জমির মালিক সরকারের হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের অডিটর ফজলুল হক নয়ন ফেনীর সময় কে বলেন, “তার পৈত্রিক ৪০ শতক ফসলি জমি ছিল। বালু তোলার কারনে অব্যাহত ভাঙ্গনে সব বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এখন মনে হয় ২৪-২৫ শতক জায়গা আছে। বিষয়টি নিয়ে ইতিপূর্বে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন। তখন কিছুদিন অভিযানও চালানো হয়েছিল। এরপর বালু খেকোরা আবার পুরোদমে শুরু করলেও কোন প্রতিকার নেই বলে তিনি জানান।
একইচিত্র উত্তর দৌলতপুর এলাকায়। এখানে ৪টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তোলায় কবরস্থান ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। কিছুদিনের মধ্যে ভেঙ্গে পড়তে পারে বসতঘর। এনিয়ে আতংকে দিনাতিপাত করছেন ওই বাড়ির বাসিন্দারা।
মোহাম্মদ মাসুদ জানান. “বালু তোলার কারনে নদী ভাঙ্গনে আমার বড় ভাই, ভাতিজি, চাচাতো ভাইয়ের কবরস্থান ভেঙ্গে যায়। গভীর করে বালু তোলা হচ্ছে। অনেকবার নিষেধ করা হলেও তারা কেউ শোনেনা। যারা বালু তুলছে তারা প্রভাবশালী। যেভাবে বালু তোলা হচ্ছে নদী ভাঙতে থাকায় বাড়িও ভেঙ্গে পড়ার আশংকা রয়েছে।”
এর অদূরে নাপিতকোনা ও তৎসংলগ্ন ঘোনা এলাকায় ৪টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। ইতিমধ্যে নাপিতকোনায় ভাঙ্গন বেড়িবাঁধ পর্যন্ত পৌঁছেছে। ঘোনা এলাকায় মেহগনি গাছের বাগানের একাংশ ভেঙ্গে পড়েছে।
বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ অনুযায়ী, পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভ‚গর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। এ ছাড়া সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ।
উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) এসএম আল-আমিন ফেনীর সময় কে জানান, বালু মহালের ইজারা থাকলেও কিছু শর্ত থাকে। বালু তোলার ক্ষেত্রে কোন ক্ষতি হচ্ছে কিনা সেগুলোও দেখা হবে।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার ফেনীর সময় কে বলেন, বিষয়টি তিনি খোঁজখবর নিয়ে দেখবেন। বালু তোলায় কোন ক্ষতি হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।