দৈনিক ফেনীর সময়

ফেনী শহরের বনানীপাড়া : যে চিত্র গ্রামকেও হার মানায়

ফেনী শহরের বনানীপাড়া : যে চিত্র গ্রামকেও হার মানায়

আরিফ আজম :

ইট-সুরকি নেই। কয়েক গজ পরপর বড় বড় গর্ত। বৃষ্টির পানি নামতে না পারায় গর্তজুড়ে পানি। যানবাহন চলছে ধীরগতিতে, হেলেদুলে। কাঁদাপানি মাড়িয়ে বাধ্য হয়ে প্রতিদিন পথ চলছেন স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থী সহ বিভিন্ন বয়সী পথচারী নারী-পুরুষ। শুধু একটি স্থানে নয়, সোমবার সরেজমিনে ফেনী শহরের ৭নং ওয়ার্ড বনানীপাড়া এলাকার বেশ কয়েকটি সড়কের এ চিত্র দেখা গেছে। যা জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামের চিত্রকেও হার মানায়।

গিরিশ-অক্ষয় (জি.এ) একাডেমী স্কুল সংলগ্ন বনানীপাড়া, তালতলা ডা: ফজলুল মাহী সড়ক, জাহাঙ্গীর চেয়ারম্যান মসজিদ পর্যন্ত পৌনে ১ কিলোমিটার। অপরদিকে অচিন গাছতলা পর্যন্ত প্রায় আধাকিলোমিটার। ফারুক হোটেলের সামনে থেকে শুরু হওয়া সড়কটিতে ঢুকতেই ভোগান্তি। শুরুতে যা দেখা গেলো ভিতরের অবস্থা আরো করুণ। গাজী ক্রস রোডের মাথা থেকে ফেনী জেনারেল হাসপাতাল ও উপজেলা পরিষদে স্বল্পসময়ে যাতায়াতে বিকল্প স্কুলের পিছনের সড়ক। অথচ এ সড়কের অবস্থা আরো বেহাল হওয়ায় স্থানীয়রা বাধ্য হলেও বাইরের লোকজন এ সড়ক এড়িয়ে চলেন। এছাড়া বিরাজ কান্তি মজুমদার বাড়ির সামনে থেকে তিন রাস্তা হয়ে সৈয়দনগর পর্যন্ত, চৌধুরী বাড়ী থেকে উভয়পাশের সড়কও খানাখন্দে ভরা। এসব সড়কে রিক্সা-মোটর সাইকেল নিয়ে চলাচলও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ওই ওয়ার্ডে সড়কের মধ্যে শুধুমাত্র একটি সড়ক প্রশস্ত করে নির্মাণ করা হয়েছে। এটি ছাড়া প্রায় সবকটি সড়কে করুন দশা। এসব সড়কে মানুষ ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এছাড়া খন্দকার বাড়ির সড়কটি বৃষ্টি হলে হাঁটুপানিতে তলিয়ে থাকে। গতকাল বিকালেও ওই সড়কে থইথই পানি দেখা যায়। একইভাবে দমদমা আবাসিক এলাকায় কোন চলাচল উপযোগি রাস্তা ও ড্রেন না থাকায় শতাধিক পরিবারের নিত্য ভোগান্তি।

স্থানীয়রা জানান, গত প্রায় ১০-১২ বছর ধরে এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার কোন উন্নয়ন হয়নি। রাস্তাঘাটে চলতে গেলে দূর্ঘটনার আশংকা থাকে। সামান্য বৃষ্টি হলে কাঁদাপানিতে কাপড় নষ্ট হয়ে যায়।

পৌরসভা সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী দায়িত্ব নেয়ার পর গত আড়াই বছরে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে গাজী ক্রস রোড থেকে ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজ পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এসময়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এ ওয়ার্ডে ড্রেন নির্মাণ করা হয়। চলতি বছরের মে মাসে অনুষ্ঠিত প্রাক-বাজেট সভায় ব্যয়ের খাত হিসেবে অবকাঠামোগত উন্নয়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়। ওই খাতে ৩শ ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব রয়েছে। ওই ওয়ার্ডে আরো তিনটি সড়ক উন্নয়নে প্রায় ২ কোটি টাকা প্রস্তাবনা রয়েছে।

বনানীপাড়া এলাকায় বাড়ি নির্মাণের পর ২০১০ সাল থেকে বসবাস করেন আয়কর আইনজীবী ইসমাইল হোসেন সিরাজী। ফেনীর সময় কে তিনি বলেন, গত প্রায় ১৩ বছরে এক চিমটি বালুও পড়তে দেখিনি। জনপ্রতিনিধিদের বারবার বলার পরও কোন পদক্ষেপ নেয়নি। এটি নামেই আবাসিক এলাকা। এখানে রাতের বেলায় রিক্সাও চলাচল করেনা। ২০টাকার ভাড়া ৫০ টাকাও যেতে চায়না।

স্থানীয় এনামুল হক ভূঞা জানান, দীর্ঘদিন ধরে সড়কে কাজ না হওয়ায় মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বৃষ্টি হলে ভোগান্তির মাত্রা আরো বেড়ে যায়।

বনানীপাড়া শিশু কিশোর একাডেমীর প্রধান শিক্ষক সানোয়ার হোসেন জানান, ছাত্র-ছাত্রীদের চলাফেরার সুবিধার্থে কাউন্সিলর সাহেব মাঝেমধ্যে খোয়া ফেলেছিলেন। ড্রেন সহ টেন্ডার হওয়ার প্রক্রিয়া রয়েছে বলে তাকে জানিয়েছেন।

৭নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইউসুফ ফেনীর সময় কে জানান, ৫ মেয়াদে সাড়ে ২৭ বছর কাউন্সিলর থাকাকালে চেয়ারম্যান-মেয়রদের সহযোগিতায় এলাকায় উন্নয়ন হয়েছিল। এর মধ্যে মেয়র নুরুল আবছরের আমলে বেশি হয়। নিজাম হাজারী মেয়র থাকাকালে দু’একটি রাস্তার কাজ করেন।

ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত পৌরসভার উপ-সহকারি প্রকৌশলী বিপ্লব কুমার নাথ ফেনীর সময় কে জানান, ওই ওয়ার্ডের রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ সমস্যার বিষয়ে মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী অবগত রয়েছেন। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানে তার পরিকল্পনা রয়েছে।

পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাহার উদ্দিন বাহার ফেনীর সময় কে জানান, এমজিএসপি প্রকল্প থেকে ফারুক হোটেল থেকে বনানীপাড়া এবং রেলগেট থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত বাইপাস সড়কটি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে টেন্ডার প্রক্রিয়া হবে। রেলগেট থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত ড্রেন না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে পানিবদ্ধ থাকে। জনস্বাস্থ্য থেকে বরাদ্দ পাওয়ায় এখানে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে হবে। ইতিমধ্যে সেটি প্রাক্কলন পর্যায়ে রয়েছে।

এলাকার রাস্তাঘাটে বেহাল দশা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একদিকে করোনার ধকল কাটতে না পারা অন্যদিকে কুইক প্রজেক্ট থেকে বরাদ্দ না পাওয়ায় উন্নয়ন থমকে যায়। রাস্তা উন্নয়নের চেয়ে ড্রেন নির্মাণকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। পানি অপসারনের ব্যবস্থা না থাকলে রাস্তা টিকবেনা। দ্রæত ড্রেন-রাস্তা দুটো নির্মাণ হয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!