শহীদুল ইসলাম :
ফেনী শহরের ভাষা শহীদ সালাম স্টেডিয়ামে দোকান বরাদ্দ নিয়ে ভাড়া দেয়নি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। তৎকালীন প্রভাবশালীরা জেলা ক্রীড়া সংস্থার ৫২ টি দোকান পানির দরে বরাদ্দ নিয়ে বেশি দামে অন্যত্র ভাড়া দেয়। চুক্তিপত্র অনুযায়ী প্রতি দোকান ২ হাজার টাকা দরে ভাড়া দেওয়া হলেও গত ৫ বছরেও সে টাকা পায়নি ক্রীড়া সংস্থা।
নোটিশ দেওয়ার পর এপ্রিল পর্যন্ত ৩ লাখ ৪২ টাকা আদায় হলেও এখনো বকেয়া রয়েছে ১২ লাখ ১৮ হাজার টাকা।
ক্রীড়া সংস্থা সূত্র জানায়, ফেনী সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীলের নামে দুইটি দোকান। গত ৪০ মাসে এ দুই দোকানের বকেয়া ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। করিমুল হক শিপন নামে ভাড়া নেওয়া আরেক দোকানের ৬০ মাস তথা ৫ বছরের বকেয়া ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। সাহাব উদ্দিন নামে ভাড়া নেওয়া আরেক দোকানের ৫৫ মাসের বকেয়া ১ লাখ ১০ হাজার টাকা এবং করিম উল্লাহ নামে ভাড়া নেওয়া ৮ দোকানে বকেয়া ৭২ হাজার টাকা। এভাবে ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা দোকান ভাড়া বকেয়া ছিল। জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে এ পর্যন্ত দুইবার নোটিশ দেওয়ার পরও এখনো ১২ লাখ ১৮ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে।
এছাড়া আনোয়ার মজুমদার থেকে ১৬ মাসের বকেয়া ৩২ হাজার টাকা, ইয়াকুবের ২৩ মাসের বকেয়া ৪৬ হাজার টাকা, বাহা ওমর উদ্দিনের ৮ মাসের বকেয়া ১৬ হাজার টাকা, মফিজ মিয়ার ১৬ মাসের বকেয়া ৩২ হাজার টাকা, মো: ইলিয়াসের ২০ মাসের বকেয়া ৪০ হাজার টাকা, বদিউল আলম বেলালের দুই দোকান থেকে যথাক্রমে ১৪ মাসের ও ১৫ মাসের বকেয়া ২৮ হাজার টাকা ও ৩০ হাজার টাকা, ইয়াসমিন আক্তারের ১১ মাসের বকেয়া ২২ হাজার টাকা, আলী হোসেনের ৫ মাসের বকেয়া ১০ হাজার টাকা, রমজান আলীর ২৩ মাসের বকেয়া ৪৬ হাজার টাকা, মো: রিয়াদের ৫ মাসের ১০ হাজার টাকা, এমরান হোসেনের ১০ মাসের ২০ হাজার টাকা, আমেনা আক্তারের ১১ মাসের ২২ হাজার টাকা, নুর নবীর ৯ মাসের ১৮ হাজার, কাজী গোলাম কিবরিয়ার ২৬ মাসের ৫২ হাজার, মো. সোহাগের ২৯ মাসের ৫৮ হাজার, নুর নবীর ১৪ মাসে ২৮ হাজার ও মকবুল আহমেদের ১০ মাসের দুইটি দোকানের ৪০ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে।
জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে দেওয়া দ্বিতীয় নোটিশের মেয়াদ ৩০ মে পর্যন্ত। মেয়াদ শেষে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক নোটিশ দেওয়ার জন্য বলেছেন। এবং চূড়ান্ত নোটিশে এক সপ্তাহের সময় বেঁধে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে বকেয়া ভাড়া না দেওয়া হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা হীরা আক্তার ফেনীর সময় কে বলেন, “বকেয়া টাকা আদায়ে আমাদের থেকে দুইবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ৩ লাখ ৪২ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে। আরো ১২ লাখ ১৮ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে। দ্বিতীয় নোটিশের মেয়ার এ মাসের ৩০ তারিখে শেষ হবে। জেলা প্রশাসক স্যারের সাথে আমাদের আলোচনা হয়েছে। দ্বিতীয় নোটিশের সময় শেষ হলে চূড়ান্ত নোটিশ দিতে বলেছেন। আমরা চূড়ান্ত নোটিশে ১ সপ্তাহ সময় দিবো। এ সময়ের মধ্যে আদায় না হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জেলা ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটির সদস্য শাহ ওয়ালী উল্লাহ মানিক ফেনীর সময় কে বলেন, “বিগত সরকারের সময়ে এখানে লুটপাট হয়েছে। কেউ তিনটা-চারটা করে দোকান নিয়ে রাখছে। চুক্তিপত্র অনুযায়ী তারা ভাড়া দেয়নি। নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশের মেয়াদ শেষ হলে উচ্ছেদ করা হবে। আমরা ক্রীড়া সংস্থাকে নতুন করে সাজাতে চাই। আমরা সে লক্ষে কাজ করছি।”
জেলা ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটির অপর সদস্য আব্দুল কাইয়ুম সোহাগ ফেনীর সময় কে বলেন,“বিগত সময়ে ফেনীর ক্রীড়াঙ্গণকে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাউজিং তৈরী করে রেখেছিলো, দোকান বরাদ্দ, ক্রীড়া সংস্থার টাকা লোপাট সহ অনেক অনৈতিক কাজ করে গিয়েছে আওয়ামীপন্থীরা। আমরা চেষ্টা করছি এসব বের করে নিয়ে আসার জন্য। আমরা এখানে আসার পর আমাদের বিভিন্নভাবে অসহযোগিতা করা হচ্ছে যেন আমরা এখান থেকে চলে যাই। কিন্ত অন্যায়কারীদের দূর্নীতি আর দোসরদের এ হাউজিং সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়েই আমরা এখান থেকে যাবো। ফেনীর ক্রীড়াঙ্গনকে সমুজ্জ্বল ও অনেক উচ্চতায় নিয়ে যাবো”।