নিজস্ব প্রতিনিধি :
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর ফেনী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ৪ আগস্ট শহরের মহিপালে গণহত্যার ঘটনায় ৭ পরিচালক মামলার আসামী হয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। এদের কেউ কেউ দেশান্তরী হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে দু’একজন ছাড়া অন্যরা নিষ্ক্রীয়।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জেলার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ এ সংগঠনে ২৪০ জন সাধারণ সদস্য, ১৩৭ জন সহযোগি সদস্য রয়েছে। চলতি বছরের ২৩ মে ২০২৪-২০২৬ মেয়াদে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিতে আয়নুল কবির শামীম সভাপতি নির্বাচিত হন। কমিটির অন্যরা হলেন- সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল কাশেম, জুনিয়র সহ-সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ পাঠান, জাফর উদ্দিন, পরিচালক মো: নুর আজম, চৌধুরী আহমেদ রিয়াদ আজিজ রাজীব, লোকমানুর রহমান ফরায়জী, রাশেদুল হক হাজারী, জিয়াউল আলম মিষ্টার, তাজুল ইসলাম ভূঞা, নুরুল হাদী ওয়াসিম, মুশফিকুর রহমান পিপুল, তোফাজ্জল হোসেন ছুট্টু, গোলাম মাওলা, সিরাজুল ইসলাম পাটোয়ারী, গোলাম ফারুক বাচ্চু, জালাল উদ্দিন বাবলু, বজলুল করিম মজুমদার হারুন, মোশারফ হোসেন ভূঞা, মুজিবুর রহমান সোহেল, বিলাস চন্দ্র সাহা, খোন্দকার নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ হারুন উর রশিদ ও সাইফ উদ্দিন আহমেদ জিতু। এদের মধ্যে জেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আহমেদ রিয়াদ আজিজ রাজীব, ১২নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি লোকমানুর রহমান ফরায়জী, জেলা যুবলীগ সহ-সভাপতি রাশেদুল হক হাজারী, সহ-সভাপতি জিয়াউল আলম মিষ্টার, জেলা আওয়াীলীগের ত্রাণ ও দূর্যোগ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম পাটোয়ারী, পৌর আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি মোশারফ হোসেন ভূঞা ও যুবলীগের অর্থ সম্পাদক সাইফ উদ্দিন আহমেদ জিতু ৪ আগস্ট মহিপালে ছাত্র-জনতা গণহত্যা মামলায় আসামী হয়েছেন। জিতু বর্তমানে ইতালী ও রাশেদ হাজারী ভারতে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র আরো জানায়, ২০০৮ সালের ৮ অক্টোবর নির্বাচনের মাধ্যমে জামাল উদ্দিন সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১১ সাল থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত প্রশাসকের দায়িত্বে ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) যথাক্রমে মোহাম্মদ খালেদ রহীম ও মোহাম্মদ শফিউল হক আরিফ। ২০১৩ সালের ২৩ জুন ভোট ছাড়াই সভাপতি হন আবদুল রকিব কাজমী। সেই থেকে ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের সুযোগ পাননি ব্যবসায়ীরা। ২০১৫ সাল থেকে অদ্যাবধি সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন পৌর আওয়ামীলীগ সভাপতি আয়নুল কবির শামীম। মাঝে ২০১৭ সালে এক মেয়াদে সভাপতির দায়িত্ব পান মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান একেএম সাহিদ রেজা শিমুল।
একাধিক পরিচালকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অন্য যেকোন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের মতই চেম্বারের কমিটি গঠন করতেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী। এক্ষেত্রে পুরোনো ব্যবসায়ীদের বাদ দিয়ে পছন্দের দলীয় নেতাদের অগ্রাধিকার দেয়া হতো। ইতিপূর্বে সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্বে থাকা আবদুর রইছ কাইজারও বর্তমান কমিটিতে স্থান পাননি। তার বাবা আবদুল কুদ্দুস ও ভাই আবদুল রকিব কাজমী সাবেক সভাপতি ছিলেন। এছাড়া জেড ইউ হাসপাতালের চেয়ারম্যান আবদুল গোফরান বাচ্চু, হীরা কোম্পানীর চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ভূঞা, জেনিথ ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. বেলাল উদ্দিন আহমেদ, গ্র্যান্ড সুলতান কনভেনশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেবিএম শাহজাহান, নাছির ষ্টোরের পরিচালক সাইদুল হক বাবুল সহ অনেককে বাদ দেয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক পরিচালক জানান, আওয়ামীলীগের মেয়াদে ভোটের সংস্কৃতি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পেশাজীবী সংগঠনেও এর প্রভাব পড়ে। ফলে মাষ্টারপাড়ার ঘাটলা থেকে নিজাম হাজারী মনোনীতদের কমিটিতে রাখা হতো। এতে করে কেউ কমিটি নিয়ে আগ্রহ দেখাতো না। পুরোনো ব্যবসায়ীরা বাদ পড়লেও মুখ খুলতে চান না। প্রতিবারই কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু হলে অনেকে নাম লেখাতে আশপাশে ঘুরে বেড়াতেন। এদের মধ্যে দু’একজন বিএনপি সমর্থিতও রয়েছেন।
পরিচালকরা আরো জানান, ২৪ জনের কমিটির ৭ জনই ছাত্র-জনতা হত্যা মামলার আসামী হয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। কেউ কেউ দলীয় পদপদবীতে থাকায় প্রকাশ্য হচ্ছেন না। চেম্বারকে যথাযথ কার্যকর করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তথা জেলা প্রশাসককে ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।
অপর একটি সূত্র জানায়, ফেনী বাণিজ্য মেলা এবং ক্ষুদ্র, কুটির শিল্প ও তাঁত মেলা সহ যেকোন আয়োজনে চেম্বারের নাম ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এসব আয়োজনে নিজাম হাজারীকে ম্যানেজ করায় চেম্বার ফান্ডে যথাযথ অর্থ জমা হতো না। বিরাগভাজন হয়ে কমিটি থেকে বাদ পড়ার আশংকায় দলীয় মদদপুষ্ট এসব ব্যবসায়ী নেতারা কথা বলতে চাইতো না।
চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল কাশেম ফেনীর সময় কে বলেন, কেউ কেউ আসামী হলেও চেম্বারের কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে না। বর্তমান সভাপতি আয়নুল কবির শামীমের নির্দেশনায় কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে চলছে। তিনি সহ কয়েকজন পরিচালক নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন এবং চেম্বারে যাতায়াত করেন।
জানতে চাইলে বর্তমান সভাপতি আয়নুল কবির শামীম ফেনীর সময় কে বলেন, সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত চেম্বারের যাবতীয় কার্যক্রম স্বাভাবিকগতিতে চলছে। তবুও বানিজ্য মন্ত্রণালয় চাইলে কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে। স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন হলে গ্রহণযোগ্যতা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবে দীর্ঘদিন নির্বাচন করা যায়নি। যার ফলে অনেকে সদস্য হতে আগ্রহী হতে চান না বলে তিনি জানান।
শামীম আরো বলেন, ফেনী চেম্বারের নিজস্ব অফিস কেনা সহ ডেকোরেশনে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়েছে। চেম্বার পরিচালনায় পরিচালকদের ডোনেশনে প্রতি মাসে ৪০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়।