অনলাইন ডেস্কঃ
ক্রমশ এগিয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের অগ্রভাগ উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছাবে সন্ধ্যা নাগাদ, আর মধ্যরাত বা ভোরের দিকে ঘূর্ণিঝড়টি বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ঝড়টি উপকূলে আঘাত হানার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ থেকে ৯৫ কিলোমিটার থাকতে পারে বলে আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে জানানো হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ পরিচালক সানাউল হক মণ্ডল সোমবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, এ ঝড়ের ব্যাস ৪০০-৫০০ কিলোমিটার। ফলে উপকূলীয় অধিকাংশ জেলা এর প্রভাবের আওতায় থাকবে।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবেলায় উপকূলীয় জেলাগুলোর ৭ হাজার ৩০টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে, যেখানে ২৫ লাখ মানুষ ঠাঁই নিতে পারবে। সোমবার সকাল থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে মাইকিং করে বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান জানিয়েছেন।
সোমবার বেলা ১২টায় এ ঘূর্ণিঝড় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৪০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ- দক্ষিণপশ্চিমে ঘূর্ণিঝড়টি অবস্থান করছিল।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে সে সময় বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল।
মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
আর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদীবন্দরসমূহকে ৩ নম্বর নৌ-বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
অমাবস্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৮ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, এ ঝড় আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে সোমবার মধ্যরাত বা মঙ্গলবার ভোর নাগাদ নাগাদ খেপুপাড়ার কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
তবে উপকূলের কাছাকাছি এসে এ ঝড়ের অবস্থানের পরিবর্তন হচ্ছে জানিয়ে সানাউল হক মণ্ডল জানান, “এখন পর্যন্ত বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল দিয়ে অতিক্রমের সম্ভাবনা আছে ঘূর্ণিঝড়টির। খেপুপাড়ার পূর্বপাশ দিয়ে অতিক্রম করতে পারে। যদি আরেকটু টার্ন নেয় তবে খেপুপাড়া থেকে শুরু করে ভোলা হাতিয়ার উপর দিয়ে যেতে পারে।“
সমুদ্রন্দ বন্দরে ৬,৭ ও নৌবন্দরের ৩ নম্বর সংকেতের কি বোঝায়?
>> ৬ নম্বর বিপদ সংকেত: বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতার এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়বে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিলোমিটার। ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
>> ৭ নম্বর বিপৎসংকেত: বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতার এক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়বে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিলোমিটার। ঝড়টি বন্দরের ওপর বা এর কাছ দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
>> ৩ নম্বর নৌ বিপদ সংকেত: বন্দর এলাকা ঝড়ে কবলিত। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ একটানা ৬২-৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিবেগের একটি সামুদ্রিক ঝড় শিগগিরই বন্দর এলাকায় আঘাত হানতে পারে। সব নৌযানকে অবিলম্বে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে।
দেশের তিন বিমানবন্দর বন্ধ
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করায় সোমবার দুপুর তিনটা থেকে মঙ্গলবার বেলা ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বরিশাল বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রাখছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
সিভিল এভিয়েশনের সদস্য (অপারেশন ও প্ল্যানিং) এয়ার কমডোর সাদিকুর রহমান চৌধুরী জানান, “ঘূর্ণিঝড়ের কারণে পরিস্থিতি বিবেচনায় কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিমানবন্দর সন্ধ্যা থেকে বন্ধ রাখা হবে। বিমানবন্দরগুলোতে আপৎকালীন প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।“
চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি থেকে পণ্যবাহী সবগুলো জাহাজকে বর্হিনোঙরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে । এছাড়া নিজস্ব সর্তকর্তা অ্যালার্ট-৩ জারি করা করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে এখন পর্যন্ত বন্দর থেকে পণ্য খালাসের কাজ স্বাভাবিকভাবেই চলছে।
সারাদেশে লঞ্চ চলাচল বন্ধ
সারাদেশে লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
বিআইডব্লিউটিএ এর পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, উপকূলীয় জেলাগুলোর নদীবন্দর তিন নম্বর নৌ বিপদ সংকেত রয়েছে আর অন্যান্য জেলার নদীবন্দর গুলোতে দুই নম্বর সংকেত রয়েছে।
তিনি বলেন, “সকালে চাঁদপুর রুটে কিছু লঞ্চ চলাচল করলেও সোমবার দুপুর থেকে সারাদেশে লঞ্চসহ সকল নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি উন্নতি হলে পরবর্তীতে নৌযান চলাচলের ঘোষণা দেওয়া হবে।”