নাজমুল হক :
সংবিধান মোতাবেক হিরো আলম রাস্ট্রের মালিক।সংবিধান মোতাবেক সংসদ নিবাচনে ঢাকা-১৭ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উপ-নির্বাচন প্রার্থী হয়েছেন। তার প্রাথীতা নিয়ে তিনমুল বিএনপির প্রার্থী মেজর অব: ডাক্তার শেখ হাবিবুর রহমান বলেছেন হিরো আলমের প্রার্থী হওয়ার কোন যোগ্যতা নেই। তিনি গুলশান বনানী ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বিভিন্ন বাহিনীর প্রধান বসবাস করে এবং তাদের সাথে কথা বলার জন্য কোন যোগ্যতা তার নেই। অথচ রাস্ট্রীয় কমচারী তাদের বেতন বোনাস পেনশন হিরো আলমদের টেক্সের টাকায়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হিরো আলম ভোট চোর, ব্যাংক ডাকাত, লুটেরা ঘুষখোর দুনীতিবাজদের তুলনায় ভালো মানুষ। সংসদে প্রতিনিধিত্ব করে আসছে মহিলা সংসদ সদস্য বাংলা ভাষা পড়তে পারে না, কেউবা গায়ক, কেউবা লুটপাট করে টাকার মালিক তাদের বিরুদ্ধে শেখ হাবিব অথবা ন্যাট্যকার মামুনুর রশীদদের রুচির দুর্ভিক্ষ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক গভনরের দরজায় লাথি মেরেছে এমন ব্যক্তি সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছে। জেনারেল এরশাদ সরকারের আমলে চট্রগ্রাম কমাস কলেজে ও আগ্রাবাদে চাঁদাবাজি করতে যেয়ে অস্ত্রসহ ধরা পড়েছে সেই ব্যক্তিও সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছে। ফখরুদ্দীন ও মইন উদ্দিন সরকারের সময় জুয়ার আসর থেকে ধরা পড়া ব্যক্তি মেয়র। এদের বিরুদ্ধে কোন বক্তৃতা বিব্রিতি নেই। সাধারণ মানুষ, দিন মজুর, গরীব মেহনতি মানুষ হিরো আলম কে সংসদে প্রতিনিধি হিসেবে দেখতে চায়।
নাট্যকার, অভিনেতা ও নাট্য পরিচালক মামুনুর রশিদ বলেন, আমরা একটা রুচির দুর্ভিক্ষের মধ্যে পড়েছি। আর সেখান থেকে হিরো আলমের উত্থান হয়েছে। মামুনুর রশিদ বলেছেন, অভিনেতারা রুচির দুর্ভিক্ষের মধ্যে আছেন। সেজন্য হিরো আলমের উত্থান। যেদেশে গুনীজনের কদর নেই সেইদেশে হিরো আলমেরা শূন্যতা পুরণ করবে। সংবিধান মোতাবেক যে কোন নাগরিকের অভিনয় শিল্পী হওয়ার অধিকার রয়েছে। যারা প্রতিবেশি ভারতের দালালী করে, বাংলাদেশে খাদ্যের লাগামহীন মুল্য বৃদ্ধিতে চুপচাপ বসে থাকে তাদের দেশপ্রেমের তুলনায় হিরো আলমরা অনেক দেশপ্রেমিক। যারা তারকা ক্রিকেটার হয়েও হিরো আলমকে সাথে নিয়ে আরাভ খানের প্রোগ্রামে দুবাই যায় তাদের রুচি কি? যে দেশের সংসদে প্রতিনিধিত্ব করে অভিনেত্রী ও গায়িকা তাদের তুলনায় হিরো আলম অনেক দেশপ্রেমিক। যারা রাজনৈতিক দলের দালালি করে জীবন জীবিকার জন্য তাদের তুলনায় হিরো অনেক মানবিক। অভিনয় শিল্পীদের নিশ্চয়ই আইন আছে হিরো আলম আইন ভংগ করে থাকলে তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। একটা স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে মামুনুর রশীদদের জাতি ও সমাজ গঠনে কি ভুমিকা রয়েছে তার মূল্যায়ন করা উচিৎ। মামুনুর রশীদদের অভিনয় থেকে জাতী কি শিখেছে? শিশু কিশোর কিশোরীরা কি শিখেছে? নীতি নৈতিকতা শিক্ষা দিয়েছে কি? দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরি করতে পেরেছে কি? দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরি করা হয়েছে কি? নাকি প্রতিবেশী ভারতের দালাল তৈরি করা হয়েছে? রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় দুনীতি ও লুটপাট শিখিয়েছে এখন সময় এসেছে মূল্যায়নের। সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং নাগরিক অধিকার আদায়ের জন্য তার কোন অবদান আছে কি? হিরো আলমদের মত ব্যক্তিবর্গ কারো বদান্যতায় নয়; বরং নিজেদের সাধনাবলে এই পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। তাই তাদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করে তাদের মেধা ও যোগ্যতাকে কাজে লাগানো দরকার।
রুচির সংজ্ঞা নিরূপণ জরুরি। মামুনের অভিনয় শিল্পী হিসেবে রেডিও এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের পরিচিত মুখ এবং হিরো আলম ইউটিউব ভিডিও ধারণ করা কমেডিয়ান যিনি সুবিধা বঞ্চিত মানুষের প্রতিনিধি। রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তবে সে উদ্যোমী আত্মবিশ্বাসী মানুষ এবং উদ্যোক্তা। পেশা হিসেবে উভয়ই অভিনয় অংগনের শ্রমজীবী, তাদের প্রত্যকের দর্শক চাহিদা বিচারে হিরো আলমের সাফল্যে বেশী। মামুন সাহেব যে রুচি’র কথা বলে হিরো আলমকে তুলোধুনো করতে চেয়েছিলেন, হিরো আলম থাকলে তো তাদের বানিজ্যে ধ্বস নামবে। এই ভদ্রলোকের হিস্ট্রি জেনে বরং হিরো আলমকেই রুচিবান মনে হলো।
চবিয়ান ওয়াকিল ফেসবুকে লিখেছেন : নাট্যজন মামুনুর রশীদ, একজন মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে যিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ভারতে। সেখানে ঘুরে ফিরে দেশে ফিরে আসেন দেশ স্বাধীন হওয়ারও অনেক পরে, নিরাপদ সময়ে। অনেকগুলো নাটক মঞ্চায়ন করেছেন আরণ্যকের প্রযোজনায়। আমিই দেখেছি ইবলিশ, ওরা কদম আলী, এখানে নোঙর, রাড়াং, চে’র সাইকেল ইত্যাদি। শিল্পকলায় ইবলিশ দেখার পর মঞ্চের পিছনে যেয়ে তার অভিনয়ের ভুয়সী প্রসংশা করেছিলাম। হঠাৎ করেই নাটক, অভিনয় বাদ দিয়ে শুরু করলেন পলিটিক্স। রাজনীতি না, পলিটিক্স। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মঞ্চ, সিনেমা, টিভিতে অভিনেতা, অভিনেত্রী লগ্নীকারী সবাইকে নিয়ে শুরু করলেন বিভিন্ন সংগঠনের নামে রাজনীতি। সরে গেলেন অভিনয় থেকে, নাটক মঞ্চায়ন থেকে। যে মামুনুর রশীদের হাত দিয়ে স্বাধীনতার পর একের পর এক নাটক মঞ্চায়িত হতে লাগল, স্বাধীনতার স্বপক্ষের সরকার ক্ষমতায় আসার পর অদ্ভুতভাবে উনি হারিয়ে গেলেন এই জগৎ থেকে। উনার ভাই ডা: কামরুল হাসান পিজি হাসপাতালের উপাচার্য হলেন। নিজে বাগিয়ে নিলেন একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার সহ অভিনয়ের সমস্ত পদক। শুধু হারিয়ে গেলেন নাট্যজগত থেকে, ২০০০ সালের পর থেকে নতুন কোন নাটক উনি মঞ্চায়ন করেননি, রাজনীতি আর পদ পদবীর ব্যাস্ততার কারনে।
দেশের মানুষকে রুচিশীল, সাংস্কৃতিকভাবে মননশীল করার জন্য সাংস্কৃতিক কর্মীদের একটা সংগঠন আছে, নাম যার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। এর নেতৃত্বে দীর্ঘদিন মামুনুর। এই জোটেরই আরেকজন লিয়াকত আলী লাকী যখন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক থাকা কালে লুটপাটের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে অভিযুক্ত, দুদকের তদন্তে বেরিয়ে আসতে থাকে একের পর এক ঘটনা তখনও মামুনুর রশীদরা নিশ্চুপ। এরও আগে ইসলামের ইতিহাস সম্বলিত সিরিয়াল টিভিতে প্রচারের সমালোচনা করায় সাধারণ দর্শকদের তোপের মুখে পড়েছিলেন। মদ খেয়ে মাতলামি, সোনারগাঁও হোটেলে অন্য নারীর উপর আছড়ে পড়ার ঘটনা না হয় না-ই বললাম। ব্যাক্তিগত প্রসংগ থাক।
এই মামুনুর রশীদ ফের আলোচনায় হিরো আলম প্রসংগে। যে মামুনুর রশীদের নাটকের প্রধান উপজীব্য বিষয় ছিল গ্রামের সহজ সরল মানুষ, তাদের আচরণ, উপার্জন ইত্যাদি সেই মামুনুরই কিনা তার নাটকের চরিত্রের মত চরিত্র হিরো আলমের বিরুদ্ধে একরাশ বিষেদাগার উগরে দিলেন। তার সাক্ষাৎকার পড়ে দেখলাম উনি এমন কিছু শব্দ চয়ন করেছেন, যেগুলো রীতিমতো চুড়ান্ত রকমের অসভ্যতা। উনি কেন তা করতে গেলেন। হিরো আলমকে যারা পছন্দ করেন তারা কি হিরো আলমের গান, অভিনয় নাচ, কথাবার্তা, চলাফেরা, পছন্দ করেন? না। হিরো আলমের সবচেয়ে বড় ভক্তও বলবেনা যে সে হিরো আলমের গান পছন্দ করে বা শুনে। তাইলে তারে পছন্দ করার কারণ কি। তাকে পছন্দ করার কারণ সে না, সে যাদের বিরুদ্ধে কথা বলছে, কিংবা যারা তার বিরুদ্ধে কথা বলছে তাদের অপছন্দের কারণে সে সবার পছন্দের। এই অদ্ভুত সমীকরণ বাঙালির মাথায় একদিনে ঢুকেনি।
যারা রাষ্ট্রের সুবিধাভোগী তারা এই দেশের জনগণের ক্রান্তিলগ্নে কখনোই পাশে দাড়াননি। মামুনুররা কখনো প্রশ্ন করেনা দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত বাড়ন্ত নিয়ে, প্রশ্ন করেনা শিক্ষা নিয়ে, প্রশ্ন করেনা ভোটাধিকার নিয়ে, প্রশ্ন করেনা যানজট নিয়ে। বর্তমান টিভি নাটক, সিনেমা নিয়ে মামুনুররা কখনো রুচিহীনতার অভিযোগ তুলেন না। মামুনুর রশীদের মত ভদ্রলোকেরা এই হিরো আলমদের গ্রাম্যতা নিয়েই নাটক সিনেমা বানিয়েছে, পয়সা কামিয়েছে, পদক কামিয়েছে, সমাজে একটা অবস্থানে পৌঁছেছে। এখন নাটকের ঐ চরিত্রগুলো যখন বাস্তবে এসে মামুনুর রশীদদের ভণ্ডামি ধরিয়ে দেয় তখন মামুনুর রশীদরা তো রুচির দূর্ভিক্ষের কথা বলবেই।
ফাতেয়া আয়াতের ফেসবুক ফেইজ থেকে : দূর্ভিক্ষ ও দূর্বৃত্তায়নের দূর্ভাবনা, শ্রদ্ধেয় মামুনুর রশীদ স্যার, আমিতো দেখছি শুধু রুচিতে নয়, দূর্ভিক্ষ আজ সর্বত্র। দূর্ভিক্ষ চলছে আমাদের চিন্তায়, সততায়, মত প্রকাশের স্বাধীনতায়। দূর্ভিক্ষ চলছে আমাদের বিবেকে, মননে, চৈতন্যে। এমনকি এই রমজান মাসেও, আমাদের মাঝেই অনেক নামধারী মুসলিমের ঈমান ও আমলে চলছে দূর্ভিক্ষের চেয়েও ভয়াবহ মন্বন্তর। আর এইসব দূর্ভিক্ষে আর মন্বন্তরে শুধু একজনের উত্থান হয়নি, উদ্ভব হয়েছে অনেক চেতনা ব্যবসায়ী সুশিল বুদ্ধিজীবীরও। আবির্ভাব হয়েছে নিজেদের কৃষ্টিকে ভিনদেশের অপসংস্কৃতির বিনিময়ে বিক্রি করে দেওয়া অনেক সাংস্কৃতিক ভাঙ্গারিওয়ালা’রও। সবচেয়ে বড় দূর্ভিক্ষের কবলে পড়েছে আমাদের ক্ষমতার রাজনীতি। দেশপ্রেমের অভাব সেখানে এতটাই প্রকট যে লোপাট হয়ে যাচ্ছে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য, পাচার হয়ে যাচ্ছে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা, এমনকি চুরি হয়ে যাচ্ছে আমাদের ভোটের অধিকারও। আপনাদের কী মনে হয়? দূর্ভিক্ষ কি শুধু রুচিতে? রাজনীতির দূর্বৃত্তায়ন, প্রশাসনের দূর্ণীতি, শিক্ষার দৈন্যতা, সংস্কৃতির দেউলিয়াপনা – এগুলো কি আরও বড় দুর্ভিক্ষ নয়?( ফাতেহা আয়াত)
স্বাধীন বাংলাদেশে বিগত ৫৩ বছরে প্রগতিশীল চিন্তার অধিকারী মামুনুর রশীদরা অভিনয় করেছে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার জন্য। এখন মূল্যায়ন করার সময় এসেছে, তাদের নাটক দেখে মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বন্ধ হয়েছে কি? যুবকেরা মাদক সেবন ছেড়েছে কত লক্ষ! নারী ও শিশু নিযাতন বন্ধ হয়েছে কি! ভারতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন রুখতে এগিয়ে এসেছে কি? ভালোবাসার নাটকের সংলাপ দেখতে দেখতে সমাজে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে নাকি নোংরামি প্রতিটি ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছে। খাদ্যের লাগামহীন মুল্য বৃদ্ধিতে অভিনয় শিল্পী সমাজ নিরব কেন? রুচিবোধ ও দেশপ্রেমের অভাবে জাতীয় জীবনে বারোটা বাজতেছে। কে দেখাবে আঁধারের যাত্রীদের আলোর দিশা। হিরো আলমদের পিছিয়ে পড়ার সুযোগে অনেক টাকা রোজগার করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে মামুনুর রশীদ । হিরো আলমরা এগিয়ে এসেছে, তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে অভিনয় শিল্পী সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। শিল্পী মমতাজ এবং নায়ক ফারুক সংসদ সদস্য হতে পারলে এবং মানব পাচারকারী পাপলু সাংসদ সদস্য হতে পারলে হিরো আলমকেও সাংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ দিতেই হবে।
লেখক : গবেষক ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ।