নিজস্ব প্রতিনিধি : ফেনী জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সমর্থিত ‘সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ’ এর ভরাডুবি নিয়ে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া চলছে। শনিবার অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে ১৫টির মধ্যে শুধুমাত্র সহ-সভাপতি আর তিনটি সদস্য পদে জিতেছেন সরকারি দল সমর্থিতরা। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক সহ সবকটি সম্পাদকীয় পদে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সমমনা আইনজীবী ঐক্য পরিষদ প্যানেল প্রার্থীরা নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছেন।
নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে ফেনীর সময় এর সঙ্গে কথা হয় বেশ কয়েকজন আইনজীবীর। তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্ধীতা করে আসছে। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে শীর্ষ নেতৃত্ব সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ দুই প্যানেলে ভাগ হয়ে যেতো। এছাড়া সম্পাদকীয় ও সদস্য পদেও প্রায় সমানভাগ পেতো দুই দল। শনিবারের নির্বাচনে চমকে দেয় বিএনপি-জামায়াত সমর্থিতরা। ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার পরও সরকার দলীয় সমর্থিত প্রার্থীদের এমন ভরাডুবির নেপথ্য নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এক্ষেত্রে আলোচনা প্রাধান্য পাচ্ছে সরকার দলীয়দের অন্ত:কোন্দলের বিপরীতে ছিল প্রতিদ্বন্ধীদের সুদৃঢ় ঐক্য।
অনেকের মতে, বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ভোটাররা অতীতের চেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ থাকায় আওয়ামীলীগ সমর্থিতদের হারিয়ে বিশাল জয় পেয়েছে। তাছাড়া সমিতির নতুন সদস্য হওয়া আইনজীবীদের বড় অংশ জামায়াত সমর্থিত।
জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি নুর হোসেন বলেন, আওয়ামীলীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল করেনি। এক্ষেত্রে দলের অনেকে বেঈমানী করেছেন। বারে আওয়ামী রাজনীতির নানা ইস্যু নিয়েও মতবিরোধ রয়েছে। ভোটে তার বহি:প্রকাশ ঘটে।
তিনি আরো বলেন, ফেনী বারে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ভোটার সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। নতুন সদস্য হওয়া আইনজীবীদের মধ্যে জামায়াত সমর্থিতদের আধিক্য রয়েছে। ফলে তারা ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন করলে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থীদের হারানো সহজ হয়ে যায়।
জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি পিপি হাফেজ আহম্মদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ২০১৮ ও ২০২১ সালে দুটি ব্যাচে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন বেশি অন্তর্ভূক্ত হওয়ায় তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে পড়ে। ফলে ভোটের হিসাবে তাদের সঙ্গে মোকাবেলা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে এখানে অন্ত:কোন্দলের এমন কোন বিষয় তার জানা নেই বলে তিনি দাবী করেন।
সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ সভাপতি ও আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ইব্রাহিম ভূঞা বলেন, যেই পরিমাণ ভোটে হেরেছে সেটি কোন বিষয় নয়। কারণ সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ প্রার্থীরা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে অল্পসংখ্যক ভোটে তারা হেরেছে।
বিএনপি সমর্থিত সিনিয়র এক আইনজীবী জানান, ফেনী বারে গত কয়েকবছর ধরেই বিএনপি-জামায়াত ভোটের সংখ্যায় বেশি। প্রতিটি নির্বাচনেই আওয়ামীলীগ সমর্থিতরা নির্বাচনী বৈতরনী পার পেতে বিএনপির অন্ত:দ্বন্ধকে কাজে লাগায়। কিন্তু এবার নির্বাচনে সেটা ততটা কাজে লাগেনি।