নিজস্ব প্রতিনিধি :
সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত ১০ মাসে ৯৫১জন অন্ত:সত্ত¡া নারীর স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে। স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে উৎসাহিত করায় মিডওয়াইফ ও নার্সকে শুভেচ্ছা উপহার দেওয়ার ঘোষনা দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া গত বছর ৮৭১জন এবং চলতি মাসে গত ৫দিনে ২১জন অন্ত:সত্ত¡া নারীর স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে। গত শনিবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা উৎপল দাশ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৩ জন অন্ত:স্বত্ত¡া নারীর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করেন। আর ৯৫১ জন অন্ত:স্বত্ত¡া নারী স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সন্তান প্রসব করেন। এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বর মাসে সর্বোচ্চ ১২৩ এবং অক্টোবর মাসে হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সন্তান প্রসবের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যা ১১১জন। এর আগে গত ২০২০সালেও করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এখানে প্রায় সাড়ে ৯শ জন অন্ত:সত্ত¡া স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সন্তান প্রসব করেন। সেটি ছিল হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সন্তান প্রসবের সর্বোচ্চ সংখ্যা। গাইনি ও স্ত্রী রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফারহানা চৌধুরী, বিবি জয়নব ও রেবেকা সুলতানাসহ আরও কয়েকজন চিকিৎসকের নেতৃত্বে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা উৎপল দাশের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে কর্মরত মিডওয়াইফ ও নার্সের মধ্যে যারা অভিজ্ঞ, তারা সাধারণ প্রক্রিয়ায় সন্তান প্রসবের কাজটি করে থাকেন।
চিকিৎসক ও মিডওয়াইফ এবং নার্সদের প্রসূতি সেবাই নিরাপদ প্রসবে চলতি বছর জানুয়ারীতে ৮৭জন, ফেব্রæয়ারীতে ৭২, মার্চে ৭৩, এপ্রিলে ১০২, মে মাসে ১০৪, জুনে ৯০, জুলাইয়ে ৮৩, আগষ্টে ১০৬, সেপ্টেম্বরে সব্বোর্চ ১২৩, অক্টোবরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১১জন এবং চলতি মাসের গত পাঁচ দিনে ২১জন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নিরাপদে সন্তান প্রসব হয়েছে। এর আগে গত করোনাকালে ২০২০ সালে সাড়ে নয়শ এবং ২০২১সালে ৮৭১জন শিশু স্বাভাবিক প্রক্রিয়া জন্মগ্রহন করেছেন।
পৌরসভার চর গনেশ এলাকার বাসিন্দা নাছিমা আক্তার বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে তার প্রসব যন্ত্রনা শুরু হয়। পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে রেখে তাকে ধাত্রি দিয়ে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু রাত গভীর হওয়ায় তার যন্ত্রণা বেড়ে যায়। তখন তিনি নিজে পরিবারের সদস্যদেরকে বুঝিয়ে হাসপাতালে চলে আসেন। হাসপাতালের মিডওয়াইফ-নার্স ও চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ওষুধ দিয়ে মহিলা ওয়ার্ডের পাশে ডেলিভারি কক্ষে ভর্তি করান। ভোররাতে তার কোল জুড়ে একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তানের জন্ম হয়।
গত ১০ মাসে সাধারণ প্রক্রিয়ায় সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার রেজিয়া বেগম, মিডওয়াইফ খাদিজাতুল কোবরা, বিবি জয়নব ও প্রনামী রানী দাস ৯৫১ জন অন্ত:সত্ত¡া নারীর প্রসব করিয়েছেন। তারা চারজনসহ হাসপাতালের অন্যান্য অভিজ্ঞ সিনিয়র স্টাফ নার্সও সাধারণ প্রক্রিয়ায় সন্তান প্রসবের দায়িত্ব পালন করছেন। তবে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ সন্তান প্রসব করানোর জন্য নার্স ও মিডওয়াইফদেরকে হাসপাতালের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ পুরস্কৃত করা হবে। সাধারণ প্রক্রিয়ায় সন্তান প্রসবে মিডওয়াইফ ও নার্সদের উদ্বুদ্ধ করতেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের আগামী কয়েকদিনের মধ্যে শুভেচ্ছা উপহার দিয়ে অনুপ্রাণিত করবেন।
মিডওয়াইফ বিবি জয়নব বলেন, ‘গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে এবছরের সর্বোচ্চ স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করা হয়েছে। আমরা চিকিৎসকদের সহযোগিতায় অন্ত:সত্ত¡াদের এ বিষয়ে উৎসাহিত করছি। হাসপাতালে তাদের কাজ হচ্ছে গর্ভবর্তী মায়েদের সেবা ও পরামর্শ দেওয়া। ভালো সাড়াও পাচ্ছি।’
গাইনি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফারহানা চৌধুরী বলেন, ‘হাসপাতালে গত ১০ মাসে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ সন্তান প্রসব হয়েছে। শুধু গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ২৩৪ জন অন্ত:স্বত্তার স্বাভাবিক প্রসব হয়। হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সন্তান প্রসবের সংখ্যা আরও বেশি বাড়ানো সম্ভব। আমরা চার-পাঁচজন চিকিৎসকের একটি দল সমপরিমাণে এই কাজ করে যাচ্ছি। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা রয়েছে। মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। কিন্তু দালালের দৌরাত্ম্যের জন্য অন্ত:স্বত্ত¡া রোগীর পরিবারের লোকজন ফাঁদে পড়েন। সচেতন হলে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সন্তান প্রসবের সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা উৎপল দাশ বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাইনী চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় নিরাপদ প্রসবের মাধ্যমে গত ১০ মাসে শুধু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৯৫১জন এবং গত ৫দিনে ২১ নবজাতকের জন্ম হয়েছে। যা অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। এছাড়া যাতে কওে কোনো মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত না হন, সেজন্যেও টেলিমেডিসিন সেবাসহ নানা উদ্যোগ নিয়ে হাসপাতালে আগত রোগীদেরকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।